জেনে নিন মুখে বয়সের ছাপ পড়ে কেন

মুখে বয়সের ছাপ পড়া প্রতিরোধ করতে হলে সবার আগে জানা দরকার বয়সের দাগ আদৌ পড়ে কেন। আমাদের ত্বকে কোলাজেন নামে একটি যৌগ তৈরি হয়। এই কোলাজেন ত্বককে টানটান, কোমল রাখে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকে কোলাজেন তৈরির স্বাভাবিক ক্ষমতা কমে আসে, ফলে ত্বক বুড়িয়ে যেতে শুরু করে। পাশাপাশি নানা বাহ্যিক কারণেও ত্বক খারাপ হয়ে যেতে পারে। খুব বেশি রোদে থাকলে, জল কম খেলে, ধূমপানের অভ্যেস থাকলে, মানসিক চাপ বা পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবেও ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ এমনকী, মুখের নানা ভঙ্গিমা, ঘুমের সময় বালিশের কারণেও ত্বকে বলিরেখা, দাগছোপ দেখা দিতে পারে৷

মুখে বয়সের ছাপ পড়লে কী হয়?

বাহ্যিক কারণে ত্বকে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা সঙ্গে সঙ্গে দেখা দেয় না৷ ক্রমশ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বয়সের দাগ মুখের ত্বকে প্রকট হয়ে ওঠে৷ ত্বক ক্রমশ রুক্ষ হয়ে পড়ে, কোলাজেন কমে যাওয়ার ফলে ত্বক তার স্বাভাবিক টানটান ভাব হারিয়ে ফেলে, ত্বক আলগা দেখাতে থাকে, ত্বকে আঁচিল দেখা দেয়৷ অনেক সময় ত্বক পাতলা হয়ে ভিতরের রক্তজালক স্পষ্ট হয়ে ওঠে৷ ক্রমশ স্বাভাবিক জেল্লা হারিয়ে ত্বক বিবর্ণ ও নিষ্প্রভ হতে শুরু করে৷

কী কী ভুল দ্রুত বয়সের ছাপ ডেকে আনে

আগেই যেমন বললাম, মুখে বলিরেখা যেমন স্বাভাবিক বয়স বৃদ্ধির কারণে দেখা দেয়, তেমনি দৈনন্দিন জীবনচর্যার কিছু ভুলও মুখে দ্রুত বয়সের ছাপ ডেকে আনে৷ আমরা প্রায় সকলেই না জেনে এই ভুলগুলো করে বসি৷ অথচ এই ভুলগুলো জীবন থেকে বাদ দিতে পারলে ত্বক দীর্ঘদিন সতেজ রাখা সহজ হবে আপনার পক্ষে৷ তাই চট করে চোখ বুলিয়ে নিন একবার৷

দীর্ঘ সময় রোদে থাকা
সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের অসম্ভব ক্ষতি করে দেয়৷ সঙ্গে সঙ্গে সেই ক্ষতি বোঝা না গেলেও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা ক্রমশ স্পষ্ট হতে শুরু করে৷ রোদে বেশিক্ষণ থাকলে ত্বক পুড়ে তামাটে তো হয়ে যায়ই, তার সঙ্গে অকাল বার্ধক্যও ছুঁয়ে ফেলে ত্বককে৷

খুব গরম বা খুব ঠান্ডা তাপমাত্রা
অতিরিক্ত গরমই বলুন বা অতিরিক্ত ঠান্ডা, দুইই ত্বক থেকে আর্দ্রতা ছিনিয়ে নিয়ে ত্বক ক্রমশ শুকনো করে তোলে৷ তার অনিবার্য ফল, ত্বকে সূক্ষ্ম রেখা৷ বাতানুকূল পরিবেশে বসে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের ত্বকে তাই বয়সের ছাপ তাড়াতাড়ি পড়ে৷

পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব
আমরা যখন ঘুমোই, আমাদের ত্বক সেই সময়টা কাজে লাগিয়ে নতুন কোষ তৈরি করে৷ সারা দিনে ত্বক যতরকম ধকলের মুখোমুখি হয়, তা কাটিয়ে উঠে তরতাজা হতে ঘুমের খুব প্রয়োজন৷ কিন্তু দিনের পর দিন ঠিকমতো না ঘুমোলে একসময় তার প্রভাব ত্বকের উপর পড়তে শুরু করে৷ পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে শরীরে কর্টিসোল নামে এক ধরনের হরমোন তৈরি হয় যার ফলে ত্বক নির্জীব ও ক্লান্ত দেখায়৷

অতিরিক্ত ধূমপান, মদ্যপান ও সোডাজাতীয় পানীয়
অ্যালকোহল, সিগারেট ও সোডা ত্বকের আর্দ্রতা শুষে নেয়৷ ধূমপান বা মদ্যপানের অভ্যেস থাকলে বা প্রতিদিন ঠান্ডা পানীয় খেলে আপনার ত্বক ক্রমশ শুকনো হয়ে যায় এবং অবশ্যম্ভাবীভাবেই দেখা দেয় বলিরেখা আর বয়সের দাগছোপ।

অতিরিক্ত মেকআপ
প্রতিদিন দীর্ঘ সময় ধরে চড়া মেকআপের ব্যবহার ত্বকের প্রচণ্ড ক্ষতি করে দেয়৷ চড়া মেকআপের কারণে ত্বক শ্বাস নিতে পারে না৷ মেকআপের ক্ষতিকর রাসায়নিক ত্বক শুষ্ক করে দেয়, ফলে ত্বকে সূক্ষ্ম বলিরেখা দেখা দিতে শুরু করে৷

মানসিক চাপ
অতিরিক্ত স্ট্রেস ও টেনশনের একাধিক কুপ্রভাব রয়েছে। এর ফলে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, মুড সুইং, ডিপ্রেশন বা ঘুমের অভাবের মতো নানা উপসর্গ দেখা দেয় যা একসঙ্গে ত্বকের উপর প্রভাব ফেলে ও ত্বক বয়স্ক দেখায়।

কীভাবে ঠেকাবেন বয়সের ছাপ
প্রশ্ন হল, কীভাবে আটকাবেন চোখের কোণে আর ঠোঁটের দু’পাশে বয়সের বিশ্রী রেখা? বয়স বাড়ার কারণে যদি ত্বকে বলিরেখা দেখা দেয়, তা সম্পূর্ণ বা পাকাপাকিভাবে আটকানো সম্ভব নয়। কিন্তু নিয়মিত ত্বকের যত্ন এবং জীবন থেকে কিছু বদ অভ্যেস বাদ দিলেই দীর্ঘদিন ত্বক তরুণ রাখা অবশ্যই সম্ভব৷ দেখে নিন কীভাবে পাবেন চিরনবীন ত্বক৷

মুখ ধোওয়ার অভ্যেস করুন
বাইরের ধুলো আর দূষণ ত্বকে স্বাভাবিকভাবে তৈরি তেলের সংস্পর্শে এসে মুখ চটচটে করে দেয়। এতে ত্বকের কোষের প্রচণ্ড ক্ষতি হয়, ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে শুরু করে। কাজেই দিনে অন্তত দু’বার জল আর ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

ধূমপান, মদ্যপান এড়িয়ে চলুন
নিয়মিত ধূমপান আর মদ্যপানে অন্যান্য শারীরিক ক্ষতি তো হয়ই, প্রথম প্রভাবটা পড়ে ত্বকের উপর৷ এই দুটি বস্তু জীবন থেকে বাদ দিতে পারলে বয়সের থাবাও সরিয়ে দিতে পারবেন এক ঝটকায়৷

স্বাস্থ্যকর খাবার খান
ত্বকের যৌবনের গোপন কথা লুকিয়ে রয়েছে খাবারে৷ পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন আর অ্যামাইনো অ্যাসিড ত্বকের স্বাভাবিক কোলাজেন উৎপাদনের ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।

চিনি খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিন
দৈনন্দিন খাবারের তালিকা থেকে যতটা পারবেন চিনি বাদ দিন, এড়িয়ে চলুন মিষ্টি পানীয়। আপনার ত্যাগের মূল্য ফিরে পাবেন উজ্জ্বল সতেজ ত্বকের মধ্যে দিয়ে।

প্রচুর জল খান
শরীর পর্যাপ্ত জল না পেলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। ত্বকের যৌবন ধরে রাখতে দিনে অন্তত দু’ লিটার জল খেতেই হবে।

নিয়মিত ব্যায়াম
শারীরিক পরিশ্রম না করলে বয়সের থাবা বেশি তাড়াতাড়ি গ্রাস করে আমাদের৷ তাই নিয়মিত ব্যায়াম, জগিং ও ফ্রি হ্যান্ড করে চনমনে থাকুন৷

চকোলেটের জাদু
যৌবন ধরে রাখার চাবিকাঠি লুকিয়ে রয়েছে চকোলেটে৷ বলিরেখার আঁকিবুকি, অকালবয়সের কামড় আটকাতে তাই প্রতিদিন ছোট একটুকরো ডার্ক চকোলেট খেতে ভুলবেন না!

মুখে মাখুন আভোকাডো তেল
বয়সের দাগছোপ, সূক্ষ্ম বলিরেখা দূর করতে অসম্ভব ভালো কাজ করে আভোকাডো তেল৷ একাধিক ভিটামিনে ভরপুর অাভোকাডো তেল ত্বকের কোলাজেন তৈরির স্বাভাবিক ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে এবং ত্বক রাখে সতেজ ও উজ্জ্বল৷

দৈনন্দিন ত্বক পরিচর্যার সামগ্রী দিয়েই প্রতিহত করুন বয়স
নানা ধরনের ত্বক পরিচর্যার সামগ্রী ব্যবহার করেও ত্বক বুড়িয়ে যাওয়া প্রতিহত করতে পারেন৷ রইল এমনই কিছু প্রডাক্টের হদিশ৷ নিয়মিত ব্যবহারে আপনার ত্বক থাকবে তরুণ, সতেজ ও জেল্লাদার৷

অ্যান্টি এজিং ময়েশ্চারাইজ়ার ব্যবহার করুন
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে, ত্বকে বলিরেখা দেখা দেয়৷ বয়সের থাবা দূরে রাখতে তাই সবসময় ত্বক আর্দ্র রাখার দিকে নজর দিতেই হবে৷ নিয়মিত অ্যান্টি এজিং ময়েশ্চারাইজ়ারের ব্যবহার ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রেখে ত্বক কোমল ও মসৃণ রাখে৷

রাতে লাগান আই ক্রিম
চোখের চারপাশের ত্বক সবচেয়ে কোমল ও সংবেদনশীল৷ বয়সের ছাপ তাই সবার আগে চোখের চারপাশেই পড়ে৷ চোখের নিচে বয়সের আঁকিবুকি ঠেকাতে তাই রোজ রাতে শুতে যাওয়ার আগে ভালো আন্ডার আই ক্রিম লাগিয়ে নিন৷

আপন করে নিন প্রাকৃতিক তেলের জাদু
ভিটামিন এ সমৃদ্ধ অ্যাপ্রিকট অয়েল বা ভিটামিন ই-তে ভরপুর সুইট আমন্ড অয়েল নিয়মিত মুখে মাসাজ করলে ত্বক থাকবে সজীব ও টানটান৷

সানস্ক্রিন মাখতেই হবে
রোদের ক্ষতিকর প্রভাবের হাত থেকে ত্বককে বাঁচাতে হলে সানস্ক্রিন লাগানো খুব দরকার৷ রোদে বেরোনোর আগে তো বটেই, দিনের বেলা বাড়িতে থাকলেও ভালো করে সানস্ক্রিন মাখতে ভুলবেন না৷


কিওয়ার্ডস: ত্বক, ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া, কোলাজেন, ত্বকের বয়স বৃদ্ধির কারণ, কীভাবে আটকাবেন ত্বক বুড়িয়ে যাওয়া, ত্বক বুড়িয়ে যাওয়া আটকানোর উপায়, কী কী ভুল করলে ত্বক বুড়িয়ে যায়, ত্বকের বয়স ধরে রাখার কৌশল, বলিরেখা, সূক্ষ্ম দাগছোপ, বলিরেখা প্রতিহত করার সামগ্রী