নিজেকে সবসময় সুন্দর ও পরিপাটি রাখার চেষ্টা নারী-পুরুষ সকলেরই থাকে। সকলেই চায় নিজেকে সবার সামনে আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরতে। কে না চায় সুন্দর, উজ্জ্বল গায়ের রঙ? সবার চাওয়া একটাই, সুন্দর, উজ্জ্বল ত্বক। এজন্য বিভিন্ন কেমিক্যালযুক্ত ফেয়ারনেস ক্রিমের আশ্রয় নেয় সবাই। এগুলো খুবই ত্বকের জন্য ক্ষতিকর ।

ত্বকের উজ্জ্বলতায় ঘরোয়া উপায়
ত্বক ফর্সা করুন ঘরোয়া উপায়ে কোনো ঝামেলা ব্যতীত। বাজারে বিভিন্ন রকমের ফেয়ারনেস ক্রিম পাওয়া যায়, এতে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়, যা অনেক সময় আপনার ত্বকের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। আপনি ত্বকজনিত অনেক সমস্যার সম্মুখীনও হতে পারেন। তাই বলছি আপনার ত্বকের কোনো বিষয়ে অবহেলা করবেন না। বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপায়েও আপনার ত্বক ফর্সা হতে পারে। বহুকাল আগে থেকেই মানুষ ত্বক ফর্সা করতে প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন করে আসছে । তাই ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল করতে অবশ্যই ঘরোয়া পদ্ধতি গ্রহণ করুন।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে কিছু সহজ পরামর্শ
প্রকৃতিতে পাওয়া এমন অনেক উপাদান আছে যা ত্বককে ফর্সা করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এগুলো ত্বকের জন্য সহনীয়, তাই কোনো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি নেই। যেমন-

১. ডাবের পানি
ডাব বা নারিকেল ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। এটি ত্বকের হারিয়ে যাওয়া উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। ত্বকের কালো দাগও দূর করতে ডাবের পানি কার্যকর। এজন্য ডাবের পানির পেস্ট তৈরি করুন।

উপকরণ
১ টেবিল চামচ ডাবের পানি অথবা নারিকেলের দুধ, বেসন ১-২ চা-চামচ।
পদ্ধতি
শুধু ডাবের পানি দিয়ে মুখ ধোয়াও অনেক উপকারী। এছাড়া পেস্ট তৈরি করতে ডাবের পানির সাথে বেসন মিশিয়ে নিন। এভাবে প্রতিদিন মুখে মেখে ব্যবহার করুন, ফলাফল পাবেন।

২. কাঁচা হলুদ
কাঁচা হলুদ ত্বক’কে উজ্জ্বল করতে সবচেয়ে কার্যকরী উপাদান। হলুদ বাটা ত্বকে মেখে অথবা কাঁচা হলুদ দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে।
উপকরণ

১০ গ্রাম কাঁচা হলুদ, ৪-৫ চা-চামচ মধু এবং গরম দুধ।
পদ্ধতি
প্রতিদিন এক গ্লাস গরম দুধের সাথে আধ চা-চামচ কাঁচা হলুদ বাটা ভালোভাবে মিশিয়ে পান করুন। যদি এভাবে পান করতে কষ্ট হয়, সাথে মধু মিশিয়ে নিন। নিয়মিত সর্বোচ্চ ১ সপ্তাহ পান করলেই ফলাফল দেখে আশ্চর্য হবেন।

৩. ডিমের কুসুম
ডিমের কুসুম ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা আগের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পায়।


উপকরণ
মুসুর ডালের গুঁড়ো, ডিমের হলুদ অংশ, সামান্য লেবুর রস।

পদ্ধতি
মুসুর ডালের গুঁড়োর সাথে ডিমের হলুদ অংশ মিশিয়ে এই মিশ্রণটি রোদে তাপে ভালোভাবে শুকিয়ে পাত্রে সংরক্ষণ করুন। ব্যবহারের সময় এর সাথে সামন্য লেবুর রস মিশিয়ে ব্যবহার করুন। প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে মুখে লাগিয়ে ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

৪. টকদই
ত্বক ফর্সা করতে টক দই ব্যবহার করুন। এটি আপনার ত্বককে উজ্জ্বল করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। টক দইয়ের প্যাক তৈরি করুন ঘরেই, কোনো ঝামেলা ছাড়া।

উপকরণ
২ টেবিল চামচ টক দই ও ২-৩ চা-চামচ মধু।

পদ্ধতি
টক দইটি মধুর সাথে ভালোভাবে মেশান। এরপর চেহারা পানি দিয়ে ধুয়ে মিশ্রণটি মুখে মাখুন। কিছু সময় পর ধুয়ে ফেলুন।

তাহলে সহজে ঘরে বসে উজ্জ্বল হওয়ার যাদুমন্ত্র পেয়ে গেলেন। এবার বাজারের কেমিক্যাল প্রোডাক্ট ব্যবহার বাদ দিন। প্রাকৃতিক ভাবে সুন্দর হোন।

গায়ের রঙটা একটু চাপা, আরেকটু ফর্সা হলে ভালো হতো। এমন ভাবনা থেকেই আমরা নানারকম ক্রিম বাজার থেকে কিনে ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু বাজারের বেশিরভাগ ক্রিমেই থাকে চড়া রাসায়নিক পদার্থ। ফলে ত্বকে দেখা দিতে পারে কিছু ক্ষতিকারক পার্শ্বক্রিয়া। তাই আপনি চাইলেই ঘরোয়াভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি করে নিতে পারেন ত্বক ফর্সা করার ক্রিম। ঘরে তৈরি করা ক্রিমগুলো ত্বকের জন্য বেশ কার্যকরী এবং কোনো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া নেই। সংবেদনশীল ত্বকের জন্যও নিরাপদ ত্বক উজ্জ্বল করার এ ক্রিমগুলো। তবে এগুলো অবশ্যই রাতের বেলায় ব্যবহার করতে হবে। রান্নাঘরের কিছু উপাদান দিয়ে তৈরি এ মিশ্রণ ত্বকের অনেক সমস্যারও প্রতিকার করবে। দূর করবে মুখের ব্রণ বা ফুসকুড়ি।

অলিভ অয়েল
অনেকেই হয়তো ভেবে থাকেন যে তৈলাক্ত ত্বকে তেল ব্যবহার করলে ত্বকের আরো বেশি ক্ষতি হবে কিংবা ব্রণ উঠবে। কিন্তু অলিভ অয়েলে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ত্বককে সজীব এবং পরিষ্কার করে। সূর্যরশ্মির ক্ষতির থেকেও ত্বককে রক্ষা করে এ তেল। অলিভ অয়েল সেনসিটিভ স্কিনের জন্যও নিরাপদ। নারকেল তেল এবং ফিস অয়েলের মাধ্যমে এক সপ্তাহ ব্যবহার করলে ফল পাবেন।

গোলাপ জল
খুব অল্প সময়ে সুন্দর ত্বক পেতে গোলাপ জল অনন্য। ব্রণ বা লালচে ভাব আক্রান্ত ও ফেটে যাওয়া মুখের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। গোলাপ জলে আছে আর্দ্রতা রক্ষাকারী উপাদান। বিষণ্ণতা দূর করে শিথিলতাও এনে দিতে এর কোনো বিকল্প নেই। তবে গোলাপ জল রাতে ব্যবহার করাই ভালো। কারণ দিনের বেলা যে জীবাণুগুলো মুখের মধ্যে বাসা বাঁধে এগুলোকে ধ্বংস করতে এর কোনো বিকল্প নেই। এমনকি এ জল ব্যবহারে মুখের বিষাক্ত উপাদানও দূর হয়। গোলাপ জলের সঙ্গে নারকেল তেল মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন। গোলাপ জল বর্ণ উজ্জ্বল করে আর নারকেল তেল ত্বককে বানায় কোমল।

গোলাপ ফুল কিনে পাপড়িগুলো আলাদা করে একদিন পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর প্রতিদিন মুখে ব্যবহার করুন। সম্ভব হলে যতোবার মুখ ধোবেন, ততোবারই গোলাপ জল ব্যবহার করবেন। মনে রাখবেন এ জলে মুখ ধোয়ার সময় কোনো ধরনের সাবান ব্যবহার করবেন না।

কোকো বাটার
লোশন বা ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহৃত হয় কোকো বাটার। এটা যেহেতু খাওয়াও যায়, তাই এ দিয়ে তৈরি লিপ বাম ব্যবহারের নেই কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। কোকো বাটারের সঙ্গে ভার্জিন অয়েল বাড়িতে বানানো সবচেয়ে ভালো রাতের ক্রিম। দু’সপ্তাহ প্রয়োগ করে দেখুন, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বেই। তাছাড়া ১ টেবিল চামচ আপেল সাইডার ভিনেগার, ১ টেবিল চামচ কোকো বাটার, ২ টেবিল চামচ বেকিং সোডা, ২ টেবিল চামচ কর্ড লিভার অয়েল এবং ২ টেবিল চামচ রসুনের তেল মিশিয়ে ক্রিম তৈরি করে নিন। যা দিনে একবার ব্যবহার করলে দূর হবে কালো দাগ।

গ্রিন টি
আপনি কি জানেন গ্রিন টি’র ত্বকের বর্ণ উজ্জ্বল করতে অবিশ্বাস্য গুণের কথা? এক কাপ গ্রিন টিতে নারকেল তেল, লেবু আর আলমণ্ড তেল দিন। উজ্জ্বল ত্বকের জন্য সপ্তাহে একবার লাগান।

অ্যালোভেরা (ঘৃতকুমারী)
অ্যালোভেরা অন্যতম সেরা ও নিরাপদ ত্বক চর্চার ক্রিম। ত্বক বর্ণোজ্জ্বল বানাতে সাহায্য করে। অ্যালোভেরা ও ল্যাভেন্ডার তেল মিশিয়ে প্যাক বানান। মিশ্রণটি মুখে লাগান সারারাতের জন্য।

দুধের সর
সবচেয়ে সেরা ফর্সা হওয়ার রাতের ক্রিম হলো দুধের সর (মিল্ক ক্রিম)। সারারাতের জন্য দুধের সর মুখে লাগিয়ে ঘুমান, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবেই।