রিবন্ডিং,ফ্যাশন সচেতন ছেলে-মেয়েদের মধ্যে খুবই পরিচিত নাম। রিবন্ডিং হচ্ছে চুল সোজা করার কৃত্রিম ও রাসায়নিক পদ্ধতি। আজকাল কোকড়া চুল তো বটেই সোজা চুলকেও আরো সোজা করার ধুম চলছে। ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সবাই এখন রিবন্ডিং করাতে ব্যস্ত। এই রিবন্ডিং সব ধরণের চুলেই করা যায়। রিবন্ডিং এর কেমিকেল চুলের প্রাকৃতিক বন্ধন ভেঙ্গে দিয়ে চুলের কোকড়া ভাব ও ঢেউ দূর করে আর চুল হয়ে উঠে সোজা, রেশমি, কোমল এবং মোলায়েম। রিবন্ডিং হল মূলত চুল সোজা করার স্থায়ী ব্যবস্থা।

এতে অনেক রকম রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয় বলে চুল পড়ার ঝুঁকি থাকে,তাই রিবন্ডিং করার পরে চুলের অতিরিক্ত যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। তাছাড়া এটি অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার তাই অনেকেই হয়ত ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পার্লারে গিয়ে রিবন্ডিং করানোর সময় বের করে উঠতে পারেন না । তাই জানিয়ে দিচ্ছি কেমন করে ঘরে বসেই করে নেবেন রিবন্ডিং।
রিবন্ডিং করতে কিছু অতি প্রয়োজনীয় জিনিস যা না থাকলেই নয়-

১. রিবন্ডিং কিটঃ
এই একটি কিটেই আপনি যা যা পাবেন-

-রিলাক্সেন্ট/সফটেনার ক্রীম,
-কেরাটিন লোশন,
-নিউট্রালাইজার এবং
-গ্লাভস

২. কম কেমিকেল যুক্ত শ্যাম্পু,
৩. ব্লো-ড্রায়ার ,
৪. কয়েক রকম চিরুনি (মোটা দাঁতের,সরু দাঁতের,দু-মুখী ),
৫. চুলের ক্লীপ ,
৬. চুলের স্টীমার (বড় বড় শপিং মল গু্লো থেকে কিনতে পারবেন) ,
৭. আয়রন মেশিন (সিরামিকের তৈরী সমতল আয়রন হলে ভালো) ।

এবার চলুন জেনে নেই কিভাবে কি করবেন-

১. প্রথমেই ভালো ব্র্যান্ডের একটি মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে সমস্ত চুল ধুয়ে নিন। ভালো মত পরিষ্কার করার পর তোয়ালে দিয়ে চুল মুছে নিন। প্রয়োজনে ব্লো-ড্রায়ার ব্যবহার করতে পারেন, তবে খেয়াল রাখুন হিট যেন মধ্যম প্রকৃতির হয়।

২. এরপর প্রথমে মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আলগা করে নিন, পরে সরু টা দিয়ে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে ক্লীপ দিয়ে আটকে দিন।

৩. রিবন্ডিংকিট এর সাথে যে গ্লাভস দেয়া থাকে তা পরে নিন। তারপর রিলাক্সেন্ট/সফটেনার ক্রীম পুরো চুলে লাগিয়ে দিন। তাড়াহুড়ো করবেন না, আস্তে আস্তে সব চুল ক্রীম টি দিয়ে কভার করুন। এভাবে অন্তত ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। আপনি যে ব্র্যান্ডের কিট ব্যবহার করবেন তার ব্যবহার বিধি পড়ে নিন, কোন কোন প্রডাক্ট এর ব্যবহার বিধি ভিন্ন হতে পারে,তাই পড়ে নেওয়া ভালো। কেননা ক্রীমের কাজ করার ক্ষমতা কোম্পানী ভেদে ভিন্ন হতে পারে।

৪. এবার হেয়ার স্টীমার দিয়ে ১০-৩০ মিনিটের মত স্টীম নিন। খেয়াল রাখবেন যেন হেয়ার স্টীমার হয়, ফেস স্টীমার এবং হেয়ার স্টীমার আলাদা হয়।

৫. যদি আপনার কাছে হেয়ার স্টীমার না থাকে অথবা কিনতে যাওয়ার সময় স্বল্পতা থাকে তবে চুলাতে একটি বড় পাত্রে পানি ফুটিয়ে নিন। গ্লাভস পরা অবস্থায় ঐ গরম পানির পাত্রে একটি তোয়ালে ডুবিয়ে সেটি নিঙড়ে নিন। তারপর ঐ তোয়ালে টি মাথায় পেচিয়ে নিন। আপনার চুলের দৈর্ঘ্য ও অবস্থা অনুযায়ী সময় দিন।

৬. এখন রিলাক্সেন্ট/সফটেনার ক্রীম টি ভালো করে ধুয়ে নিন। শ্যাম্পু করবেন না, শুধু পানি ব্যবহার করুন। তারপর ব্লো-ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে নিন।

৭. এবার কেরাটিন লোশন ব্যবহারে পালা। এটি একটি প্রোটিনের তৈরী লোশন। একে ধুয়ে ফেলবেন না, চুলে রেখে দিন।

৮. এবার আয়রন মেশিনের সাহায্যে চুল স্ট্রেইট করতে থাকুন যতক্ষণ না তা পুরোপুরি সোজা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ফ্ল্যাট আয়রন ব্যবহার করুন , যা চুলের ছোট ছোট কোকড়ানো গুলোও সোজা করে দেবে।

৯. খেয়াল করুন তো রিবন্ডিং কিটের কোন বস্তুটি এখনো ব্যবহার করা হয় নি? হ্যা ঠিক ধরেছেন, নিউট্রালাইজার। এবার আবারো আগের মত চুল গুলোকে কয়েক ভাগে ভাগ করুন এবং প্রতি ভাগে নিউট্রালাইজার লাগান। নিউট্রালাইজার লাগিয়ে ৩০ মিনিটের মত অপেক্ষা করুন। এবারো কিটের লেখা অনুসরণ করুন। নিউট্রালাইজার চুলের সোজা ভাবকে আঁটকে দেয় এবং বজায় রাখে।

১০. ঠান্ডা পানিতে চুল ধয়ে নিন এবং ব্লো-ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে নিন।

১১. শেষে আরেকবার ফ্ল্যাট আয়রন দিয়ে চুল স্ট্রেইট করে নিন।

সমস্ত কার্যক্রম শেষ হতে ৪-৫ ঘণ্টা সময় লাগে।

সতর্কতা:
১. রিবন্ডিং করার দিন থেকে ৪ দিন পর্যন্ত চুলে পানি/শ্যাম্পু/কোন কিছুই লাগাবেন না ।
২. চুলে হেয়ার ক্লীপ,ব্যন্ড,কাটা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন ।
৩.৩-৪ দিন চুল বাঁধবেন না ।
৪.ভালো ব্র্যান্ডের এবং মেয়াদ যুক্ত সামগ্রী ব্যবহার করুন ।