অতীতে একটা সময় ছিল যখন মজাদার আচার বানাতে পারা নারীদের অত্যন্ত মর্যাদার বিষয় ছিল এবং আচারের রেসিপি প্রতি বাড়িতেই গোপন রাখা হত। এটি শুধু বিভিন্ন উপাদানের মিশ্রণ নয়, আরও বহু বিষয় জড়িত রয়েছে মজাদার আচারের সঙ্গে। এ কারণে এটি অনেকটা শিল্পকর্মের মতোই বিষয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু একটি প্রশ্ন অনেকেই করেন, আচার কি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর? এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে এনডিটিভি।

শেফ ও রান্নার বইয়ের লেখক নিরু গুপ্তা বলেন, ‘লেবু প্রাকৃতিক প্রিজারভেটিভ হিসেবে কাজ করে এবং লেবুর জুস প্রায়ই ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি দমন করে। সাইট্রিক এসিড এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে। এটি গাঢ় রঙের হতে পারে এবং স্বাদ লবণাক্ত হতে পারে। কিন্তু কখনোই তা নষ্ট হয় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন টিকে থাকার জন্য আচারে লবণ ও সাইট্রিক এসিড একত্রে কাজ করে। এটি আর্দ্রতা দূর করে এবং এমন একটি পরিবেশ তৈরি করে যেখানে খামির ও ছাতা বাঁচতে পারে না। তবে এজন্য সঠিক মাত্রায় উপাদানগুলো ব্যবহার করতে হয় এবং প্রক্রিয়াটিও সঠিক রাখতে হয়। এজন্য আপনার প্রয়োজন দক্ষতা। বাড়িতে আচার বানানোর প্রক্রিয়া মূলত যিনি বানাচ্ছেন তার ওপরই নির্ভর করে।’
লবণভিত্তিক আচার সবচেয়ে বেশিদিন টিকে থাকে। এটি জুসের স্বাদ ও গন্ধ অটুট রাখে এবং তাকে সুস্বাদু করে তোলে। তবে অতিরিক্ত লবণ আপনার আচারের স্বাদ নষ্ট করবে। আবার সঠিক মাত্রায় লবণ দিতে না পারলে তাতে খাবারে ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধতে পারে এবং তা নষ্ট হয়েও যেতে পারে।

তেল দিয়েও আচার সংরক্ষিত হয়। এতে আচার বহুদিন টিকে থাকে। উত্তর ভারতে সর্ষের তেল দিয়ে আচার বানানো হলেও দক্ষিণ ভারতে তিলের তেলই জনপ্রিয়। তেল আচারে বায়ু প্রবেশে বাধা দেয়। এতে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং ব্যাকটেরিয়া টিকতে পারে না। এ কারণে তেলের আচারও দীর্ঘদিন ভালো থাকে।

হলুদ, মেথি পাউডার ও হিং প্রিজারভেটিভ হিসেবে কাজ করে। এজন্য সাধারণত আচারের বিভিন্ন উপাদান একত্রে ভালোভাবে মেশাতে হয়। এরপর তা সূর্যতাপে রাখতে হয়।
আমের আচার সহজেই দু্ই বছর পর্যন্ত নিরাপদ রাখা যায়। এজন্য শেফ নিরু গুপ্তার মতে, তা অবশ্যই ভালোভাবে তেলে ভিজিয়ে নিতে হবে। এরপর তা বায়ুরোধী পাত্রে রাখতে হবে। বায়ুর সঙ্গে সামান্য সংস্পর্শও আচার তাড়াতাড়ি নষ্ট করে দেবে।

কিছু রেসিপিতে আচারের জন্য ভিনেগার ব্যবহৃত হয়। এর এসিড গুণ খাবারের প্রিজারভেটিভ হিসেবে কাজ করে। অ্যাপল সিডার ভিনেগার এজন্য হতে পারে একটি আদর্শ ভিনেগার। এর হালকা ফ্লেভার ও অন্যান্য গুণ আচারের স্বাদ বৃদ্ধি করে।

আচারের স্বাস্থ্যগত দিক সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের নেতিবাচক মন্তব্য পাওয়া যায়না। মূলত স্বাস্থ্যকর উপাদান ব্যবহার করা হলে তাতে ক্ষতি নেই বলেই ধারণা করা হয়।
অতীতে আচার মাটির পাত্রে করা হলেও এখন অধিকাংশ আচারই কাচের পাত্রে করা হয়। এটি খাবারটি ভালোভাবে সংরক্ষণে সহায়তা করে। আচার স্বাস্থ্যসম্মত রাখার জন্য তা থেকে ব্যাকটেরিয়া দূর করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে তা লবণ, তেল কিংবা ভিনেগার যাই ব্যবহার করা হোক না কেন তা যেন উন্নতমানের ও খাঁটি হয় এ বিষয়টি লক্ষ্য রাখা উচিত। এছাড়া আচার ফ্রিজে রাখার প্রয়োজন নেই। স্বাভাবিক তাপমাত্রাতেই তা সাধারণত ভালো থাকে।