পুরুষের মত মহিলাদের মুখে ও অন্যান্য অংশে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি লোম দেখা দিলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় তাকে “হারসুটিজম” বলে। যেকোনো বয়সের মহিলাদের জন্য এটি অত্যন্ত বিব্রতকর। ধরে নেয়া হয় যে মহিলাদের শরীরে এন্ড্রোজেন নামক হরমনের কারনে এ রোগ হয়ে থাকে। যদিও এই ‘হারসুটিজম’ সমস্যাটি একটা হরমোনজনিত সমস্যা তবুও চিকিৎসার পাশাপাশি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মেয়েদের শরীরের অবাঞ্ছিত লোম অপসারণে লেজার চিকিৎসা এক বৈপ্লবিক সুযোগ এনে দিয়েছে। লেজারের মাধ্যমে নারী-পুরুষের শরীরের অবাঞ্ছিত লোম দূর করা যায়।

সাধারণত মহিলাদের আপার লিপ বা ঠোঁটের উপরের অংশে ও মুখের অন্যান্য স্থানে অবাঞ্ছিত লোম গজাতে পারে। অতীতে এ ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে দেশে লেজার চিকিৎসা ছিল না। বর্তমানে লেজার সেন্টারে এ ধরনের সমস্যার চিকিৎসা হচ্ছে। তবে পাশাপাশি ঘরে বসে প্রাকৃতিক উপায়ে অবাঞ্ছিত লোম দূর করার কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। আজ আপনাদের জানাব তেমনি দুটি কার্যকরী পদ্ধতি।

প্রথম পদ্ধতিঃ এই পদ্ধতিটি অবশ্যই রাতে অবলম্বন করতে হবে। দিনে করা যাবে না। পরিমাণ যেটুকু বলা আছে, সেটুকুই ব্যবহার করবেন। ২ টেবিল চামচ বেকিং সোডা ২০০ এমএল ফুটন্ত পানির সাথে মিশিয়ে নিন। তারপর পানিতিকে ঠাণ্ডা হতে দিন সম্পূর্ণভাবে। কয়েক টুকরো সুতি কাপড় বা গোঁজ ব্যান্ডেজ এই মিশ্রণে ভিজিয়ে একটু নিংড়ে নিন। তারপর সেই স্থানে লাগিয়ে রাখুন যেখানে বেশী লোম গজায়। এমনভাবে মুখে লাগান, যেন কাপড় বা ব্যান্ডেজের টুকরো মুখে লেগে থাকে সারা রাত। টিস্যু পেপারও ব্যবহার করতে পারেন, সেটা বেশ ভালো ভাবে লেগে থাকে। সকালে মুখ ধুয়ে খুব ভালো ময়েসচারাইজার লাগিয়ে নিন। ২/৩ দিন ব্যবহার করলেই বাড়তি লোম ঝরে পড়তে শুরু করবে। মুখে কাপড় লাগিয়ে ঘুমাতে না পারলে আক্রান্ত স্থানে মিক্সচার মাখুন। শুকিয়ে গেলে আবারও মাখুন। এমন করে কয়েকবার দেয়ার পর সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেলে মুখ না ধুয়েই বিছানায় যান। তবে এভাবে লোম ঝরতে সময় লাগবে।

দ্বিতীয় পদ্ধতিঃ অবাঞ্ছিত লোম দূরীকরণে রসূনের কার্যকারিতা অনেক। চলুন জানা যাক কিভাবে রসূনের মাধ্যমে অবাঞ্ছিত লোম দূর করবেন। -রসুন টুকরো করে নিন। আক্রান্ত স্থান গুলোতে ঘষুন। -আধা ঘণ্টা রাখুন, তারপর ধুয়ে ফেলুন। -দিনের মাঝে বেশ কয়েকবার এমন করুন। -৩/৪ দিনের মাঝেই হেয়ার গ্রোথ কমে আসবে।

বেসন এবং হলুদের প্যাক

এক চামচ বেসন, এক চিমটি হলুদ গুঁড়ো ও পরিমাণমত দুধ মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিন। এই পেস্টটি ঠোঁটের উপরে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি প্রাকৃতিক ভাবে ঠোঁটের উপরের লোম দূর করে দেবে। এটি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করুন।

ডিমের সাদা অংশ

ঠোঁটের উপরে অংশের লোম দূর করতে ডিমের সাদা অংশ বেশ কার্যকর। একটি ডিমের সাদা অংশ, কর্নফ্লাওয়ার ও চিনি ভালো করে ফেটে নিন। এবার এই পেস্টটি ঠোঁটের উপর লাগিয়ে রাখুন। ৩০ মিনিট পর শুকিয়ে গেলে তুলে ফেলুন। ভালো ফল পেতে সপ্তাহে তিনবার ব্যবহার করুন। এক মাসের মধ্যে আপনি দেখতে পাবেন আপনার লোম অনেকটা কমে এসেছে।

চিনি

ঘরোয়া উপায়ে লোম দূর করার একটি সহজ উপায় হচ্ছে চিনি। চিনি অবাঞ্ছিত লোম দূর করে এবং নতুন লোম জন্মাতে বাঁধা দেয়। একটি প্যানে কিছু পরিমাণ চিনি এক মিনিট জ্বাল দিন। এর সঙ্গে কিছু পরিমাণ লেবুর রস মিশিয়ে ঘন করে নিন। ঠাণ্ডা হয়ে গেলে এটি ঠোঁটের উপরে লাগিয়ে নিন। এবার একটি কাপড় দিয়ে চক্রাকারে ঘষুন এবং লোমের বিপরীতে টান দিন। দেখন লোম উঠে এসেছে।

চালের গুঁড়ো ও টকদই

চালের গুঁড়ো ও টকদই মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে নিন। এই পেস্টটি ঠোঁটের উপরে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

ময়দা

ময়দা, দুধ ও হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে নিন। এবার এই পেস্টটি ঠোঁটের উপরে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে এটি টান দিয়ে তুলে ফেলুন। সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকরী একটি উপায়ের মধ্যে এটি অন্যতম।