‘ডেউয়া ও ডেফল, অতি চুকা নারকেল’, গ্রাম্য এই প্রবাদটিতে টক খাওয়ার পর দাঁত টক থাকার কারণে ভালো কিছু খেলেও তা টক লাগে বলে প্রচলিত কথাটি বলা হয়েছে। সাধারণত রাস্তায় বা মোড়ে ফেরিওয়ালা ভ্যানে বা ঝুড়িতে করে গোলগোল মিষ্টি গন্ধের এইউ ফলটি বিক্রি করে থাকে।

বেশ টক স্বাদের ফলটির একমাথা ছিদ্র করে ভিতরে লবণ দিয়ে দেয়, বাঁশের কাঠি বা প্লাস্টিকের চামচে করে একটু করতে তুলে তুলে খেতে হয়। আবার কাঠির ঘষায় জিহ্বার চামড়া উঠে যাওয়ার অভিজ্ঞতা কমবেশি অনেকেরই আছে। আবার অনেকেই বাসায় নিয়ে ভেতরের মাংসল অংশ পিঁয়াজ, কাঁচামরিচ, কালাজিরা দিয়ে ভর্তা খেতেও পছন্দ করেন। টক স্বাদের রূচি বর্ধক এই ফলটির এছাড়াও আরো অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। যেমন, এতে খাদ্যশক্তি রয়েছে কাঁঠাল ও পেয়ারার প্রায় সমান। আমিষের পরিমাণ একটি আমের চেয়ে সাড়ে ৩ গুণ, কাঁঠালের দ্বিগুণ, লিচুর চেয়ে ৩ গুণ, আমলকী ও আনারসের চেয়ে প্রায় ৪ গুণ বেশি এবং পেঁপের দ্বিগুণের চেয়ে একটু কম।

পুষ্টিগুণ:
প্রতি ১০০ গ্রাম কদবেলের পুষ্টিমান পানীয় অংশ ৮৫ দশমিক ৬ গ্রাম, খনিজপদার্থ ২ দশমিক ২ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৪৯ কিলো ক্যালরি, আমিষ ৩ দশমিক ৫ গ্রাম, চর্বি শূন্য দশমিক ১ গ্রাম, শর্করা ৮ দশমিক ৬ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৫ দশমিক ৯ মিলিগ্রাম, লৌহ শূন্য দশমিক ৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-বি শূন্য দশমিক ৮০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি ১৩ মিলিগ্রাম এবং প্রতি ১০০ গ্রামের শক্তি উত্পাদন ক্ষমতা ৪৯ কিলো ক্যালরি।

টক স্বাদের রূচি বর্ধক এই ফলটির অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে।

উপকারিতা:

ব্রণ ও মেছতায় কাঁচা কদবেলের রস মুখে মাখলে বেশ উপকার পাওয়া যায়। কদবেল পাতার নির্যাস শ্বাসযন্ত্রের চিকিত্সায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। দুধ এবং চিনি দিয়ে কদবেলের পাতা মিশিয়ে খাওয়ালে শিশুদের পেটের ব্যথার চিকিত্সায় চমত্কার কাজ করে। কদবেলের ফুল শুকিয়ে পাউডার করে সারা বছর সংরক্ষণ করে রাখা যায়। ফল দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠবদ্ধতা, দীর্ঘস্থায়ী আমাশয় দূর করে।
এই ফল রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। এবং বুক ধড়ফড় এবং রক্তের নিম্নচাপ রোধেও সহায়ক। চিনি বা মিছরির সঙ্গে কদবেল পাউডার মিশিয়ে খেলে সঙ্গে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি হয় এবং রক্তাল্পতাও দূর হয়।
ব্রন ও মেছতায় কাঁচা কদবেলের রস মুখে মাখলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।

কদবেল উদ্দীপক ও মূত্রবর্ধক কাজে বিশেষ উপাদেয়। এ ফল নিয়মিত খেলে কিডনি সুরক্ষিত রাখে। প্রাচীন ভারতীয় চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা কিডনি সমস্যা দূর করার জন্য সেরা প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে এটি ব্যবহার করতেন। এ ফল যকৃত ও হৃৎপিণ্ডের জন্যও বিশেষ উপকারী। কদবেল শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং স্নায়ুর শক্তি যোগায়। ত্বকের জ্বালা পোড়া কমাতে কদবেল মলম হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
কদবেলের নির্যাস ব্যাপকভাবে ডায়াবেটিস চিকিৎসার জন্য আয়ূর্বেদী ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কদবেল পাতার নির্যাস শ্বাসযন্ত্রের চিকিৎসায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। দুধ এবং চিনি দিয়ে কদবেলের পাতা মিশিয়ে স্নেহপূর্ণ খাদ্য তৈরি হয়। এই রস শিশুদের পেটের ব্যথার চিকিৎসায় চমৎকার কাজ করে। কদবেল পাতার ক্বাথ পানীর সঙ্গে নিয়মিত পান করলে পেপটিক আলসার দ্রুত ভালো হয়। আলসারের খত সারাতে তাজা কদবেল বেশ কার্যকরী।

ব্রন ও মেছতায় কাঁচা কদবেলের রস মুখে মাখলে বেশ উপকার পাওয়া যায়। এই ফল রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। বুক ধড়ফড় এবং রক্তের নিম্নচাপ রোধেও সহায়ক। চিনি বা মিছরির সঙ্গে কদবেল পাউডার মিশিয়ে খেলে সঙ্গে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি হয় এবং রক্তা স্বল্পতাও দূর হয়। কদবেল মহিলাদের হরমোনের অভাব সংক্রান্ত সমস্যা দূর করে থাকে। এমনকি স্তন ও জরায়ু ক্যান্সার নিরাময় করে থাকে।