অ্যালোভেরার গুন সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। ত্বকের যত্নে যেমন উপকারী তেমন চুলের যত্নেও এর তুলনা পাওয়া ভার। অনেকেই বাসায় অ্যালোভেরা চাষ করতে চান। আবার অনেকেই শুরু করে দিয়েছেন। তবে সঠিক পদ্ধতি না জানার কারনে অনেকের গাছ ঠিক মত বৃদ্ধি পায় না। আর যারা বাসার বারান্দায় টবে অ্যালোভেরা চাষ করতে চান তাদের জন্যও থাকছে স্পেশাল টিপস।

আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করবো টবে অ্যালোভেরা চাষ সম্পর্কে। আসুন তাহলে আর কথা না বাড়াই আগে অ্যালোভেরা সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেই।

অ্যালোভেরা কি?

অ্যালোভেরা-কে অনেকেই অ্যালভেরা বলে ডাকেন। তবে এর বাংলা নাম হচ্ছে ঘৃত কুমারী। এটি একটি ভেষজ ওষধি উদ্ভিদ। এটা দেখতে অনেকটা আনারস গাছের মতন। এর পাতা রসালো। এবং পাশে কাটাযুক্ত। এই পাতার ভিতরে থাকা মাংসালো জেলির ন্যায় বস্তুই রুপচর্চা বা সৌন্দর্য চর্চায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

টবে অ্যালোভেরা চাষ

টবে অ্যালোভেরা চাষ নিয়ে প্রায়ই নানা রকম প্রশ্ন পাওয়া যায় গ্রুপে। অনেকি প্রশ্ন করেন টবে কি অ্যালোভেরা চাষ করা যায়? হা সঠিক পরিচর্যা করলে আপনার টবেও সতেজ গাছ তৈরি করা সম্ভব। তবে সেক্ষেত্রে আপনাকে সঠিক চাষ ও পরিচর্যা সম্পর্কে জানতে হবে।

অ্যালোভেরা চাষে কি ধরনের মাটি নির্বাচন করা উচিৎ?

প্রায় সব ধরনের মাটিতেই অ্যালোভেরা চাষ করা যায়। তবে বেলে দোআঁশ মাটিতে অ্যালোভেরার চাষ সব থেকে ভালো হয়ে থাকে। তাই টবে চাষ করার ক্ষেত্রে বেলে দোআঁশ মাটি নির্বাচন করাই সব থেকে ভালো হবে।

অ্যালোভেরা চাষে কেমন টব বা পাত্র নির্বাচন করবো?

বাসা বাড়ির বারান্দা বা ছাদে অ্যালোভেরা চাষ করতে হলে মাঝারি আকারের টব বা ড্রাম নির্বাচন করতে হবে। এখন বাজারে প্লাস্টিকের টব পাওয়া যায়। এই ধরনের টব ব্যবহার করাই উত্তম হবে।

অ্যালোভেরার জাত নির্বাচন

সারা বিশ্বে প্রায় ২৫০ প্রজাতির অ্যালোভেরা পাওয়া গেলেও আমাদের দেশে মাত্র ২টি প্রজাতির চাষ করা হয়ে থাকে। এগুলো দেখতে অনেকটা ফনীমনসার মতন।

অ্যালোভেরা চারা কোথায় পাবো?

অ্যালোভেরা বেশ পরিচিত উদ্ভিদ। আপনার আশেপাশের যেকোন নার্সারিতেই পেয়ে যাবেন অ্যালোভেরা গাছ।

অ্যালোভেরা চারার দাম কত?

একটি ভালো অ্যালোভেরার চারা ২৫-৫০টাকা হতে পারে। তবে স্থান ভেদে এটা ৮০-১০০ টাকাও নিতে পারে।

অ্যালোভেরার চারা রোপনের সময়

সারা বছর অ্যালোভেরার চারা রোপন করা যায়। তবে ভালো ফলন পেতে আষাঢ় মাসের শুরুতে রোপন করাই ভালো। তবে খেয়াল রাখবেন শীত ও বর্ষাকালে চারা না লাগানো ভালো।

অ্যালোভেরার বংশ বিস্তার

অ্যালোভেরা সাধারনত সেকড়ের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে থাকে। এর শেকড় থেকে বেরোনো ডাল সংগ্রহ করে অন্যত্র রোপন করলে গাছ হয়। চারা রোপনের পরে সঠিক নিয়মে পানি দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে পানি যেন বেশি হয়ে না যায়। আবার গোড়ায় পানিও যেন জমে না থাকে। তাহলে অ্যালোভেরা'র গোড়া পচে যেতে পারে।

অ্যালোভেরা চাষ নিয়ে কিছু কথা

অ্যালোভেরা শাপলা বা পদ্ম পরিবারের একটি উদ্ভিদ। পেঁয়াজ ও রসুন এই একই পরিবারের উদ্ভিদ। অ্যালোভেরা চাষে গাছের সটিক নিয়মে বাগানের যত্ন নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে টবে যেন আগাছা না জন্মে। আগাছা জন্মালে নিড়ানি দিয়ে উপড়ে ফেলতে হবে। গাছে নিয়মিত পানি দিতে হবে। অ্যালোভেরা গাছে বাড়িতে তৈরি করা জৈব সার দিতে পারেন। এর চাষে রাসায়নিক সার ব্যবহার না করাই ভালো। অ্যালোভেরা চাষে চারা লাগানোর অল্প সময়ের ভিতরে ফলন পাওয়া গেলেও এর ভেষজগুন পেতে ৮ মাস অপেক্ষা করতে হয়। এক বছরে এর থেকে ৪ বার পাতা সংগ্রহ করা যায়।

অ্যালোভেরার বালাই ব্যবস্থাপনা

অ্যালোভেরার একটি প্রধান রোগ হচ্ছে পাতায় দাগ পড়া। এটা সাধারনত ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ। এই রোগ শীতকালে দেখা না গেলেও ফাল্গুন মাসে বেশি পরিলক্ষিত হয়। এতে পাতার ব্যপক ক্ষতি হয়। পাতার চেহারা নষ্ট হয়ে যাহ। এই রোগের আক্রমনে পাতার অগ্রভাগে আলপিনের মাথার মতন ক্ষুরদ দাগ পড়ে। সেখান থেকে আঠার মতো কষ বের হয়। ওই আঠা শুকিয়ে বাদামি দাগের সৃষ্টি করে। এভাবে আক্রান্ত গাছের পাতায় ধীরে ধীরে দাগ বড় হতে থাকে ও দাগের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। ছত্রাকনাশক প্রয়োগে তেমন ফল পাওয়া যায় না। ১৫ দিন পরপর চুন পানিতে গুলে স্প্রে করে এর থেকে পরিত্রান পাওয়া যেতে পারে।

এছাড়াও গাছের গোড়া পচা রোগের কারনেও গাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে থাকে। গাছের গোড়ায় পানি জমে থাকলেও বা ভেজা থাকলে গোড়া পচা রোগ হয়। ছত্রাকনাশক স্প্রে করে এই রোগের থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।