তলপেটে মেদ:কি খাবেন কি খাবেন না

তলপেটে মেদ সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক। অনেক বিপজ্জনক যে কোনও স্থানে মেদের চেয়ে। নিতম্বের উরুতে মেদ জমার চেয়েও বিপজ্জনক। তলপেটে মেদ জমার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গুরুতর সব স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন- হূদরোগ, স্ট্রোক ও টাইপ২ ডায়াবেটিস। বংশগতি বা জীন হয়ত মোটা হওয়ার সঙ্গে কিছুটা জড়িত, কোথায় মেদ জমবে এর সঙ্গেও। তবে সে সঙ্গে জীবন যাপন পদ্ধতি ত্রুটিপূর্ণ হলে অবস্থা আরো শোচনীয় হয়।

 
কেবল প্রচুর মেদযুক্ত খাবার খেলে তলপেটে মেদ জমে তা নয়, মূল ব্যাপারটা হলো বাড়তি ক্যালোরি সেই ক্যালোরি যে উত্স থেকেই হোক। বেশি ক্যালোরি খেলে কোমরে, তলপেটে জমবে মেদ। তলপেটে মেদ জমার পেছনে একক কোনও কারণ নেই। বংশগতি বা জীন, বয়স, জীবন-যাপন সবারই থাকতে পারে ভূমিকা। খাধ্যাভ্যাস পরিবর্তন করলে তলপেটে মেদ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ঘন চর্বি বাদ দিতে হবে, শর্করা কমাতে হবে, ফল ও সবজী খাওয়া বাড়াতে হবে। পরিমাণ কমাতে হবে আহারে প্রতি বেলার খাবারে।
 
বাড়তি ক্যালোরি তা মদ্য, হোক, কোমল পানীয় বা খাদ্যের বিশাল পরিমাণ থেকে হোক, সবই খারাপ। এগুলোই তলপেটে মেদ জমানোর পেছনে বৃহত্ কারণ। মদ থেকে আসা ক্যালোরি কোমর রেখাকে স্ফীত করে অবশ্য অবশ্যই। কারণ হলো- মদ্যপান করার সময়, এলকোহল দহনের কাজে, মেদ দহনের কাজে বড় ব্যস্ত থাকে, তাই তলপেটে মেদ জমে, একে ‘বিয়ার বেলী’ বলে। আর একটি তত্ব যে সব হরমোন আমাদের তৃপ্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে এদের উপর প্রভাব বিস্তার করে ক্ষুধা বাড়িয়ে দেয়। অনেক রকম চর্বি আছে এর মধ্যে সবচেয়ে বিপদ আসে খাদ্যের যে চর্বি থেকে তা হলো ট্রান্সফ্যাট।
 
ূওয়েক ফরেস্ট ইউনিভাসির্টির গবেষকরা দেগেছেন, আংশিক হাইড্রোজিনেটেড তেল থেকে তৈরি এই ট্রান্সফ্যাট তলপেটে মেদ জমাতে সাহায্য করে এবং শরীরের অন্য অংশ থেকে মদ এনে তলপেটে মেদ পুন:বিতরণ করে। কেক, পেস্ট্রি, বিদেশী বিস্কুট, মার্জারিন, ফাস্টফুড, কুকিস, ক্রাকারস, ফ্রেষ্ণ ফ্রাই, ভাজা খাবারে আছে ট্রান্সফ্যাট।
 
গ্রীন টি আর সে সঙ্গে ব্যায়াম, এতে ওজন কমে শরীরের। গবেষকরা বলেন, গ্রীনটিতে ক্যাটেচিন বলে যে পদার্থ শরীরকে চর্বি দহনে উদ্দীপ্ত করে এবং তলপেটে মেদ পোড়াতেও সাহায্য করে। আছে ব্লুবেরি, এটিও ফরপ্রসূ।
 
ফাস্টফুড খেলে তলপেটে মেদ হয়, সবাই জেনে গেছে এখন। কারণ ফাস্টফুডে আছে প্রচুর চর্বি, অনেক ক্যালোরি। মানুষ এসব খাবার খায়ও বেশি। অনেকের ধারণা, সাধারণ কোমল পানীয়ের বদলে ডায়েট কোমল পানীয় পান করলে তলপেটে মেদ কমানো যায়। কথাটি ঠিক নয়।
 
আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশনের মতে, কোমলপানীয়, শরবত ও অন্যান্য মিষ্ট পানীয় হলো সে দেশে চিনি গ্রহণের এক নম্বর উত্স, অন্যান্য দেশেও তাই। বাড়তি চিনি মানে বাড়তি ক্যালোরি। অথচ ওজন কমাতে ও তলপেটে মেদ কমাতে বাড়তি ক্যালোরি কমানো অতি আবশ্যক। কোমল পানীয়তে পরিশোধিত চিনির বদলে হাই ফ্রঙ্কটোজ কর্ন সিরাপ দেওয়া হচ্ছে ইদানীং এবং মেদস্থূলতার এই মহামারীর পেছনে এর ভূমিকা বেশ প্রধান বলে এখন বলা হচ্ছে। আর এর বদলে ডায়েট সোড়াও যে উপকারী এর পক্ষে তথ্য প্রমাণ জোরালো নেই। তাই ডায়েট সোডাও বিকল্প নয়।
 
কোমর চিকন করতে হলে খাদ্যে যোগ করতে হবে হোল গ্রেইন, গোটা শস্য। সাদা চালের বদলে লাল চাল, ঢেকিছাড়া চাল। ময়দার বদলে আটা, লাল আটা, ছাতু। প্রক্রিয়াজাত খাবার বাদ দিতে হবে। খোসা বাকলসহ তরকারী খেতে হবে।
 
আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনে প্রকাশিত নিবন্ধে দেখা যায়, ক্যালোরি নিয়ন্ত্রিত খাদ্য, গোটা শস্য সম্বৃদ্ধ খেলে কোমরে থলথল মেদ পাতল হয় সহজেই। পরিশোধিত শস্যের বদলে তাই গোটা শস্য। স্প্যাগেটি, কর্নফ্লেক তৈরি হয় পরিশোধিত শস্য থেকে অবশ্য এদের হোলগ্রেন অপশনও আছে। তবে পপকর্ন হলো হোল গ্রেন খাবার যাতে আছে বেশ আঁশ। গোটাশস্য বা হোলগ্রেন ভালো এজন্য যে এতে আছে প্রচুর আঁশ ও এ শস্য পরিপাক হয় খুব ধীরে। এতে ক্ষুধার নিবৃত্তি হয় ভালো। রক্তের সুগার থাকে সুমিত এবং মেদ জমেনা শরীরে।
 
মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের তলপেটে মেদ জমার প্রবণতা বেশি। যৌন হরমোনের পার্থক্যের জন্যই এমন হয়। চল্লিশ বছরের আগে নারীদের মেদ জমার বেশী প্রবণতা হলো উরু ও নিতম্ব। চল্লিশের পর স্ত্রী হরমোন ইস্ট্রোজেন মান নেমে যাওয়ার পর চর্বি পুন:বিতরণ হয়ে জমে তলপেটে। তলপেটের মেদ ঝরানো তেমন যে কঠিন তা কিন্তু নয়। সুপরিকল্পিত ভাবে ওজন কমানো গেলে মেদ ঝরবে। তলপেটেও মেদ কমবে। প্রয়োজন স্বাস্থ্যকর আহার ও নিয়মিত ব্যায়াম।
 
স্পট এক্সারসাইজ বা যথাস্থানে থেকে ব্যায়াম যেমন-উঠবস করা, ক্রাষ্ণেস, পেটের ব্যায়াম এগুলোতে পেশি সবল হয়, মেদ কমাতে সহায়ক। তবে নির্দিষ্টভাবে মেদ তলপেটে থেকে ঝরাবে তা নয়। তলপেটে মেদ বা যে কোনও স্থানে চর্বি কমানোর মোক্ষম উপায় হলো স্বাস্থ্যকর আহার ও নিয়মিত এরোবিক ব্যায়াম। এরোবিক ব্যায়াম, যেমন, দৌঁড়ানো, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো, টেনিস খেলা বেশ উত্তম ব্যায়াম।
 
তলপেটে মেদ হলে বেশ কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা জড়িত যেমন- হূদনিষ্কিয়া, এথারোস্ক্লোরোসিস সহ অন্যান্য হূদ সমস্যা। ওস্টিওপরোসিস, ডিমেনশিয়া, আলঝাইমার রোগ, ডায়াবেটিস, কলোরেকটাল ক্যান্সার, মেটাবলিক সিনড্রোম, উচ্চ রক্তচাপও এর সঙ্গে সম্প্রর্কিত।
 
তাই তলপেটের মেদ ঝরানোর জন্য শ্রেষ্ঠ পরিকল্পনা হলো-বেশিরভাগ বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রমাণ মতে ক্যালোরি নিয়ন্ত্রিত খাদ্য, যা ফল, শাক সবজি, হোলগ্রেন, কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত দ্রব্য, বীনস, বাদাম, বীজ, মাছ, কচি মাংস, ডিম ও পোল্ট্রি সম্বৃদ্ধ এতে আছে সব পুষ্টি, আর কোমরে মেদ কমাতেও সহায়ক। সে সঙ্গে ৩০-৬০ মিনিট ব্যায়াম প্রতি সপ্তাহে প্রতিদিন।

পেটের মেদ কমানোর ৫ সহজ ব্যায়াম

সাধারণত নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেকেরই পেটের মেদজনিত জটিলতা আছে। বিশেষ করে সারা শরীরের তুলনায় পেটে মেদ জমে বেশি এবং অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে পেটের মেদ কমাতে সময় একটু বেশি লাগে। তবে নিয়মিত সঠিক নিয়মে ব্যায়াম করতে পারলে পেটের মেদ দূর করা সম্ভব। পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। একবারে পেট ভরে বেশি খাবার না খেয়ে অল্প অল্প করে নিয়ে পাঁচ-ছয়বারে খাবেন। খাবার খাওয়ার আধা ঘণ্টা পরে পানি খাবেন। রাতের খাবার সাড়ে ৮টার মধ্যে শেষ করতে হবে অথবা ঘুমানোর দুই ঘণ্টা আগে রাতের খাবার শেষ করতে হবে। এগুলোর পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করলে পেটের মেদ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। খাবার তালিকায় রাখতে হবে ফল, সবজি, লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি, মুরগি, মাছ, লো ফ্যাট দুধ ইত্যাদি।

দ্রুত পেটের মেদ কমাতে চাইলে নিয়মিত করুন এই ব্যায়ামগুলো :

১. সিট আপ

কোনো একটি সমতল জায়গায় বা মেঝেতে শুয়ে পড়ুন। এবার পা দুটো ভাঁজ করে দিন। হাত থাকবে হাঁটু বরাবর সোজা, সামনের দিকে। এবার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে সোজা সামনের দিকে উঠে বসুন। পা ভাঁজ অবস্থায় থাকবে। এবার আবার আগের অবস্থায় শুয়ে যান। বসা অবস্থায় বেশিক্ষণ থাকবেন না। উঠে আবার শুয়ে পড়বেন, আবার উঠে বসুন। এভাবে হবে একবার। আপনি এভাবে মোট ১২ বার করবেন। ১২ বার হয়ে গেলে এক মিনিট শুয়ে বিশ্রাম নেবেন। এক মিনিট পরে ঠিক একই নিয়মে আবার শুরু করবেন। আবার ১২ বার করবেন। এভাবে ১২ বারে হবে এক সেট। আপনাকে এভাবে দুই সেট করতে হবে প্রাথমিক অবস্থায়। পরে সেট বাড়িয়ে তিন সেট করতে পারেন।

২. ক্রাঞ্চেস

সোজা হয়ে মেঝেতে শুয়ে পড়ুন। পা দুটো একটু ফাঁকা রেখে ভাঁজ করে দিন। হাত দুটো আপনার মাথার দুই পাশে অর্থাৎ কানের পেছনে রাখুন। এবার নিশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে ওপরের দিকে উঠুন। খেয়াল রাখবেন মুখ দিয়ে ফুঁ দেওয়ার মতো করে নিশ্বাস ছাড়তে হবে এবং ঘাড়ে কোনো চাপ দেবেন না। আপনি মনোযোগ দেবেন আপনার পেটের মাংসপেশিতে। ঘাড় বাঁকা করবেন না। ঘাড় সোজা থাকবে এবং আপনি তাকিয়ে থাকবেন ওপরের দিকে অর্থাৎ সিলিংয়ের দিকে। এবার নিশ্বাস নিতে নিতে নিচের দিকে নামবেন, তবে পুরো মেঝেতে আপনার মাথা লেগে যাবে না; মেঝে থেকে আপনার মাথায় কিছুটা ফাঁক থাকবে। এভাবে আবার ওপরে উঠুন এবং নিচের দিকে ক্রাঞ্চ করে নামুন। খুব দ্রুতও করা যাবে না। মাঝারি একটা তালে করতে হবে। আপনি এভাবে মোট ১২ বার করবেন। ১২ বার হয়ে গেলে এক মিনিট শুয়ে বিশ্রাম নেবেন। এবং এক মিনিট পরে ঠিক একই নিয়মে আবার শুরু করবেন। আবার ১২ বার করবেন। এভাবে ১২ বারে হবে এক সেট; এভাবে দুই সেট করতে হবে। আপনার পেটের মাংসপেশির সংকোচন ও প্রসারণের দিকে খেয়াল রাখুন।

৩. লেগ রেইস

সোজা হয়ে মেঝেতে শুয়ে পড়ুন। পা দুটো জোড়া করে সোজা ৯০ ডিগ্রি ওপরে তুলে দিন। হাত দুটো সোজা পাশে থাকবে। এবার নিশ্বাস নিতে নিতে পা দুটো জোড়া অবস্থায় নিচে নামান। তবে পা দুটো মেঝেতে লেগে যাবে না। আপনার পায়ের সঙ্গে মেঝের কিছুটা দূরত্ব থাকবে। ওই অবস্থায় নিশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে আবার পা দুটো ৯০ ডিগ্রি ওপরে তুলে দিন। আবার নিচে নামান। মাথা থেকে কোমর পর্যন্ত মেঝেতে লেগে থাকবে। এভাবে ১২ বার করে দুই সেট করুন। এই ব্যায়াম তলপেটের জন্য খুবই উপকারী।

৪. রাশিয়ান এবস টুইস্ট

পা দুটো সামনে সোজা করে দিয়ে বসে যান। এবার পা দুটো ভাঁজ করে পায়ের পাতা মেঝে থেকে একটু উঁচুতে নিয়ে যান। কোমর থেকে শরীরের ওপরের অংশ একটু পেছন দিকে নিয়ে যান। এবং হাত দুটো নমস্কারের ভঙ্গিতে রেখে একবার ডানদিকে ঘুরে ডান কোমরের কাছে আবার বা দিকে ঘুরে বা কোমরের কাছে আনুন। এভাবে ১২ বার করে দুই সেট করবেন। এতে আপনার কোমরের পাশের মেদ এবং তল পেটের মেদ কমবে।

৫. প্লাংক

উপুড় হয়ে শুয়ে সামনে দুই হাত ভাঁজ করে কনুইয়ের ওপর এবং পায়ের টোয়ের ওপর ভর দিয়ে, একটু উঁচু হয়ে শরীরকে একটি সমান্তরাল অবস্থায় রাখতে হবে। এভাবে ঠিক এই অবস্থায় থাকুন ১০-১৫ সেকেন্ড। প্রথম দিকে ১০-১৫ সেকেন্ড থাকবেন। পরে আস্তে আস্তে সময় বাড়িয়ে ৪০-৪৫ সেকেন্ড পর্যন্ত করতে পারবেন। এভাবে একবার হলো। এভাবে করবেন দুই থেকে তিনবার। প্রতিবার করার পর একটু বিশ্রাম নেবেন। এতে আপনার পেটের সঙ্গে সঙ্গে পিঠ এবং হাতের মেদও কমবে।

এই ব্যায়ামগুলো নিয়মিত করলে আপনি অবশ্যই খুব ভালো ফলাফল পাবেন। তবে মনে রাখবেন প্রতিদিন পেটের ব্যায়াম করবেন না। প্রাথমিক অবস্থায় একদিন পরপর করবেন। এতে ভালো ফল পাবেন। প্রথম এক থেকে দুদিন করার পর দেখবেন পেটে মাংসপেশিতে ব্যথা অনুভব করবেন। এতে আপনি নিশ্চিত হবেন যে আপনার ব্যায়ামগুলো কাজে লাগছে অর্থাৎ ফ্যাটসেলগুলো ভাঙতে শুরু করেছে। এভাবে দুই থেকে তিন মাস টানা করলে ভালো ফল পাবেন। এবং দুই থেকে তিন মাস পরে আবার অন্য ব্যায়াম নির্বাচন করতে হবে। কারণ একই ব্যায়াম বেশি দিন ধরে করতে থাকলে আর কাজে দিতে চায় না।

সবশেষে মনে রাখতে হবে যে ব্যায়ামের পাশাপাশি খাবারের দিকে অবশ্যই নজর দিতে হবে। অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে এই ব্যায়াম করলে  ফলাফল পাওয়া সম্ভব নয়। চিনি ও চিনিজাতীয় খাবার এবং পানীয় দূরে রাখুন। অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার খাওয়া কমিয়ে দিন একেবারে। এ ছাড়া প্রচুর পরিমাণে পানি পানের অভ্যাস করুন।

১. সিট আপ

কোনো একটি সমতল জায়গায় বা মেঝেতে শুয়ে পড়ুন। এবার পা দুটো ভাঁজ করে দিন। হাত থাকবে হাঁটু বরাবর সোজা, সামনের দিকে। এবার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে সোজা সামনের দিকে উঠে বসুন। পা ভাঁজ অবস্থায় থাকবে। এবার আবার আগের অবস্থায় শুয়ে যান। বসা অবস্থায় বেশিক্ষণ থাকবেন না। উঠে আবার শুয়ে পড়বেন, আবার উঠে বসুন। এভাবে হবে একবার। আপনি এভাবে মোট ১২ বার করবেন। ১২ বার হয়ে গেলে এক মিনিট শুয়ে বিশ্রাম নেবেন। এক মিনিট পরে ঠিক একই নিয়মে আবার শুরু করবেন। আবার ১২ বার করবেন। এভাবে ১২ বারে হবে এক সেট। আপনাকে এভাবে দুই সেট করতে হবে প্রাথমিক অবস্থায়। পরে সেট বাড়িয়ে তিন সেট করতে পারেন।

২. ক্রাঞ্চেস

সোজা হয়ে মেঝেতে শুয়ে পড়ুন। পা দুটো একটু ফাঁকা রেখে ভাঁজ করে দিন। হাত দুটো আপনার মাথার দুই পাশে অর্থাৎ কানের পেছনে রাখুন। এবার নিশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে ওপরের দিকে উঠুন। খেয়াল রাখবেন মুখ দিয়ে ফুঁ দেওয়ার মতো করে নিশ্বাস ছাড়তে হবে এবং ঘাড়ে কোনো চাপ দেবেন না। আপনি মনোযোগ দেবেন আপনার পেটের মাংসপেশিতে। ঘাড় বাঁকা করবেন না। ঘাড় সোজা থাকবে এবং আপনি তাকিয়ে থাকবেন ওপরের দিকে অর্থাৎ সিলিংয়ের দিকে। এবার নিশ্বাস নিতে নিতে নিচের দিকে নামবেন, তবে পুরো মেঝেতে আপনার মাথা লেগে যাবে না; মেঝে থেকে আপনার মাথায় কিছুটা ফাঁক থাকবে। এভাবে আবার ওপরে উঠুন এবং নিচের দিকে ক্রাঞ্চ করে নামুন। খুব দ্রুতও করা যাবে না। মাঝারি একটা তালে করতে হবে। আপনি এভাবে মোট ১২ বার করবেন। ১২ বার হয়ে গেলে এক মিনিট শুয়ে বিশ্রাম নেবেন। এবং এক মিনিট পরে ঠিক একই নিয়মে আবার শুরু করবেন। আবার ১২ বার করবেন। এভাবে ১২ বারে হবে এক সেট; এভাবে দুই সেট করতে হবে। আপনার পেটের মাংসপেশির সংকোচন ও প্রসারণের দিকে খেয়াল রাখুন।

৩. লেগ রেইস

সোজা হয়ে মেঝেতে শুয়ে পড়ুন। পা দুটো জোড়া করে সোজা ৯০ ডিগ্রি ওপরে তুলে দিন। হাত দুটো সোজা পাশে থাকবে। এবার নিশ্বাস নিতে নিতে পা দুটো জোড়া অবস্থায় নিচে নামান। তবে পা দুটো মেঝেতে লেগে যাবে না। আপনার পায়ের সঙ্গে মেঝের কিছুটা দূরত্ব থাকবে। ওই অবস্থায় নিশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে আবার পা দুটো ৯০ ডিগ্রি ওপরে তুলে দিন। আবার নিচে নামান। মাথা থেকে কোমর পর্যন্ত মেঝেতে লেগে থাকবে। এভাবে ১২ বার করে দুই সেট করুন। এই ব্যায়াম তলপেটের জন্য খুবই উপকারী।

৪. রাশিয়ান এবস টুইস্ট

পা দুটো সামনে সোজা করে দিয়ে বসে যান। এবার পা দুটো ভাঁজ করে পায়ের পাতা মেঝে থেকে একটু উঁচুতে নিয়ে যান। কোমর থেকে শরীরের ওপরের অংশ একটু পেছন দিকে নিয়ে যান। এবং হাত দুটো নমস্কারের ভঙ্গিতে রেখে একবার ডানদিকে ঘুরে ডান কোমরের কাছে আবার বা দিকে ঘুরে বা কোমরের কাছে আনুন। এভাবে ১২ বার করে দুই সেট করবেন। এতে আপনার কোমরের পাশের মেদ এবং তল পেটের মেদ কমবে।

৫. প্লাংক

উপুড় হয়ে শুয়ে সামনে দুই হাত ভাঁজ করে কনুইয়ের ওপর এবং পায়ের টোয়ের ওপর ভর দিয়ে, একটু উঁচু হয়ে শরীরকে একটি সমান্তরাল অবস্থায় রাখতে হবে। এভাবে ঠিক এই অবস্থায় থাকুন ১০-১৫ সেকেন্ড। প্রথম দিকে ১০-১৫ সেকেন্ড থাকবেন। পরে আস্তে আস্তে সময় বাড়িয়ে ৪০-৪৫ সেকেন্ড পর্যন্ত করতে পারবেন। এভাবে একবার হলো। এভাবে করবেন দুই থেকে তিনবার। প্রতিবার করার পর একটু বিশ্রাম নেবেন। এতে আপনার পেটের সঙ্গে সঙ্গে পিঠ এবং হাতের মেদও কমবে।

এই ব্যায়ামগুলো নিয়মিত করলে আপনি অবশ্যই খুব ভালো ফলাফল পাবেন। তবে মনে রাখবেন প্রতিদিন পেটের ব্যায়াম করবেন না। প্রাথমিক অবস্থায় একদিন পরপর করবেন। এতে ভালো ফল পাবেন। প্রথম এক থেকে দুদিন করার পর দেখবেন পেটে মাংসপেশিতে ব্যথা অনুভব করবেন। এতে আপনি নিশ্চিত হবেন যে আপনার ব্যায়ামগুলো কাজে লাগছে অর্থাৎ ফ্যাটসেলগুলো ভাঙতে শুরু করেছে। এভাবে দুই থেকে তিন মাস টানা করলে ভালো ফল পাবেন। এবং দুই থেকে তিন মাস পরে আবার অন্য ব্যায়াম নির্বাচন করতে হবে। কারণ একই ব্যায়াম বেশি দিন ধরে করতে থাকলে আর কাজে দিতে চায় না।

সবশেষে মনে রাখতে হবে যে ব্যায়ামের পাশাপাশি খাবারের দিকে অবশ্যই নজর দিতে হবে। অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে এই ব্যায়াম করলে ফলাফল পাওয়া সম্ভব নয়। চিনি ও চিনিজাতীয় খাবার এবং পানীয় দূরে রাখুন। অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার খাওয়া কমিয়ে দিন একেবারে। এ ছাড়া প্রচুর পরিমাণে পানি পানের অভ্যাস করুন।