চৈত্রের শুরু, আর তাতেই মেজাজ দেখাতে শুরু করেছে কালবৈশাখি। ইতিমধ্যেই তার হালকা ঝলক দেখিয়ে গিয়েছে প্রকৃতি। কালবৈশাখির প্রচণ্ড এলোমেলো ঝড় হলে কী করবেন? জানাচ্ছে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর।

প্রচণ্ড ঝড়ে তছনছ হয়ে যেতে পারে জনজীবন। কালবৈশাখি আসলেই নানা জায়গা থেকে খবর পাওয়া যায় নানা দুর্ঘটনার। আপনিও যাতে ঝড়ের প্রভাবে দুর্ঘটনায় না পড়েন,

তাই জেনে নিন প্রচণ্ড ঝড়ে কীভাবে বাঁচবেন-

১। ড্যাম্প বা অন্য কোনও কারণে যদি বাড়িতে কোথাও কোনও ফাটল ধরে থাকে, তাহলে অবশ্যই এখনই সারিয়ে ফেলুন।

২। জানালা-দরজার লক ঠিক আছে কিনা দেখে নিন।

৩। হ্যারিকেনে সবসময় কেরোসিন তেল ভরে হাতের কাছে রাখুন। এছাড়া, মোমবাতি কিংবা ব্যাটারি চালিত কোনও আলো সবসময় হাতের কাছে রাখুন। যাতে লোডশেডিং হলে অন্ধকারে অসুবিধা না হয়।

৪। ঘরে পর্যাপ্ত পরিমানে শুকনো খাবার, জল, ওষুধ হাতের কাছে রাখবেন।

৫। অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ওয়াটারপ্রুফ ফাইলে ভরে রাখুন।

৬। মোবাইলে সবসময় পুরো চার্জ দিয়ে রাখুন।

৭। ঝড়-বৃষ্টির সময়ে ঘরের বাইরে বেরোবেন না। বাচ্চাদের সবসময় নজরে রাখুন। যাতে তারা কোনওভাবেই ঘরের বাইরে যেতে না পারে।

৮। ঝড়ের সময়ে বাড়ির ইলেক্ট্রিক কানেকশন বন্ধ করে দিন। মেন সুইচ বন্ধ রাখুন।

বজ্রপাত থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখার কিছু টিপস : 

১. উঁচু জায়গায় বা খোলা মাঠে দাঁড়িয়ে থাকবেন না।

২. খোলা জায়গায় থাকলে ছাতা ব্যবহার করবেন না।

৩. গাছের নীচে আশ্রয় নিবেন না।

৪. বাইরে হাটার সময় বজ্রপাত দেখা দিলে দ্রুত মাটিতে বসে পড়ুন

৫. বাড়িতে আশ্রয় নিন। তবে ঘরের বাইরে উঁচু এন্টেনা থাকলে তা টিভি থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে মাটির সংস্পর্শে রাখতে হবে। এছাড়া খোলা মাঠে আশেপাশে উঁচু বৃক্ষবিহীন এলাকায় বাড়ি নির্মাণ করলে সেটিও বজ্রপাতে আক্রান্ত হতে পারে। ভবনের উপরে একটি খুঁটির সাথে লোহার তার স্থাপন করে তা মাটির সাথে সংযুক্ত করে দিলে উঁচু ভবনও বজ্রপাত থেকে রক্ষা পায়। এ পদ্ধতিতে টিভিও চালু রাখা যায়।

৬. আপনার বাসার বিদ্যুৎ নিরোধক যন্ত্রের (Lightning protector ) কার্যকারিতা যাঁচাই করুন (যদি থাকে)। পূর্ব প্রস্তুতি নিন এবং নিরাপদ থাকুন।

৭. বাসা থেকে বের হবার পূর্বে কম্পিউটার, টিভি ও অন্যান্য বিদ্যুৎ চালিত যন্ত্রপাতির, সম্ভব হলে, বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করুন।

৮. পরিবারের সকলের মধ্যে বজ্রপাতের প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা জাগ্রত করুন এবং বজ্রপাতের সময় বৈদ্যুতিক ও যোগাযোগ তার সমূহ ( টিভির এন্টেনা, ডিসের এ্যান্টেনা, টেলিফোনের তার ইত্যাদি ) বিচ্ছিন্ন রাখার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

৯. বিদ্যুৎ চমকানোর কারনে ভোল্টেজ প্রচন্ড ভাবে উঠা-নামা করে। এ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার জন্য বাসার টেলিফোন সেট, কর্ডলেস ফোন, টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, সাউন্ড সিস্টেম, ইন্টারনেট লাইন ইত্যাদির সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখুন।

১০. সম্ভব হলে মেইন পাওয়ার সুইচ বন্ধ করুন। কারণ প্রচন্ড বজ্রপাতে সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

১১. কার বা জীপে আরোহনরত থাকলে গাড়ীর দরজা ও জানালা বন্ধ রাখুন। এটি সরাসরি বিদ্যুৎ স্পৃষ্ঠ হওয়ার সম্ভাবনা কমাবে এবং তীব্র শব্দের সরাসরি আঘাত হতে আপনাকে রক্ষা করবে।

১২. মোটরসাইকেল, সাইকেল চালকরা বাইক/সাইকেল থেকে নেমে পড়ুন এবং নিরাপদ আশ্রয় খুঁজুন।

১৩. বড় গাছের নিচে কখনও অবস্হান করবেন না কারণ গাছ বিদ্যুৎ সুপরিবাহী ও বিদ্যুৎ আকর্র্ষী।

১৪. ঝড়ের সময় গ্যাসোলিন জাতীয় দাহ্য পদার্থ ব্যবহার পরিহার করুন।

১৫. শিশুদের প্রতি বিশেষ যত্নবান হোন। কারণ বজ্রপাতের বিকট শব্দে তারা ভীত হতে পারে। বজ্রমেঘ দেখা মাত্র শিশুদের খেলার মাঠ থেকে ডেকে নিন।

১৬. ঘরের সব দরজা জানালা বিশেষ করে কাঁচের জানালা বন্ধ রাখুন এবং লোহার রড, গ্রীল স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন।

১৭. বিদ্যুৎ চমকানোর সময় স্টীলের হাতলের পরিবর্তে কাঠের হাতলযুক্ত ছাতা বেশী নিরাপদ।

১৮. বজ্রমেঘ দেখে, চিনতে শিখুন। নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ গ্রহন করুন। নিজের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা করুন।

১৯. পুকুর, খাল, নদী বা এ জাতীয় জলাশয়ে অবস্হান করবেন না। কারন এসব জলাশয়ে বজ্রপাত হলে পুরো জলাশয়টি উচ্চ ভোল্টেজ এ পরিনত হবে। আপনি যদি উম্মুক্ত স্হানে নৌকায় অবস্হান করেন তবে যত দ্রুত সম্ভব ভূমিতে নামার চেষ্টা করুন।

২০. তীব্র বজ্রপাতের সময় কেউ ঘরের বাহিরে যাবেন না। আপনি যদি খোলা জায়গায় থাকেন তাহলে তবে দ্রুত নিকটতম যেকোন ঘরে ঢুকে পড়ুন। একান্তই সুযোগ না থাকলে বুকে হাত রেখে মাথা নিচু করে মাটিতে বসে পড়ুন। ( সিরিয়াস )

২১. বজ্রপাতের সময় জনবহুল এলাকা পরিহার করুন কারন আপনার সংস্পর্শে থাকা ব্যক্তি বিদ্যুৎ স্পৃষ্ঠ হলে তার দ্বারা আপনিও বিদ্যুৎ স্পৃষ্ঠ হতে পারেন।

২২. যখন কোন ঘর বা আশ্রয় না থাকলে আপনার গোড়ালি বা পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলির উপরে ভর করে দু’হাঁটুর মধ্যে মাথা রেখে মাটিতে বসে থাকতে হবে।

২৩. শুষ্ক কোন গর্ত বা খাদ থাকলে তার মধ্যে ঢুকে পড়তে হবে।

২৪. কখনই কোন বৈদু্যতিক খুঁটির নিচে বা বড় বৃক্ষ অথবা টেলিফোনের খাম্বার নিচে আশ্রয় নেয়া যাবে না।

২৫. মনে রাখতে হবে যে কোন উঁচু অবস্থানের উপরে বজ্রপাত আছড়ে পরে বেশি।

২৬. বজ্রপাতের সময়ে যে কোন ঘরের মধ্যে আশ্রয় নেয়াই সর্বশ্রেয়।

২৭. ঘরে থাকলেও শয়ন অবস্থায় না থাকাই ভাল।

২৮. ঝড় এবং মেঘের গর্জন ও বিদ্যুত চমকানোর আগেই ঘরের মধ্যকার বৈদ্যুতিক সংযোগ বন্ধ রাখুন।

২৯. মোবাইল ফোন ব্যবহার মানুষের ওপর বজ্রপাতের আশঙ্কা বাড়ায়। বজ্রপাতের সময় মোবাইল ফোন বা ইলেকট্রনিক্স ব্যবহার খুবই বিপজ্জনক। একজন মানুষের সঙ্গে যখন সচল মোবাইল বা ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি থাকে, তখন তা একটি সার্কিট হয়ে যায়। ওই সার্কিটের মধ্য দিয়ে বজ্রপাতের বিদ্যুৎ প্রবাহ ভেতরে প্রবেশ করে। তাই সতর্কতা জরুরী।

৩০. আগাম আবহাওয়া বার্তা জেনে সময়মতো কাজ সম্পন্ন করে ঘরে ফেরা দরকার।

সূত্র : ইন্টারনেট