গুটি গুটি পায়ে শীতের আমেজ চলে এসেছে। রাত বাড়ার সাথে সাথে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা হিমেল হাওয়া শীতের আগমনী বার্তার জানান দিচ্ছে। শীতকালে আমাদের ত্বক সহজেই শুষ্ক হয়ে যায়। এর কারণ হলো শীতে বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকে বিধায় ত্বকের এপিডার্মাল লেয়ার থেকে আর্দ্র ভাব কমে যায়। শীতকালে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক উপাদানযুক্ত ক্রিম ব্যবহার করে নিজেদের ত্বককে নরম রাখতে চান। শীতে আপনার ত্বককে সতেজ রাখতে এখনি প্রয়োজন সঠিক পরিচর্যা—
শুষ্ক ত্বক:
শীতে শুষ্ক ত্বক আর্দ্রতা হারিয়ে আরও যেন দিশেহারা হয়ে পড়ে। তাই এ ধরনের ত্বকের চাই বাড়তি যত্ন। সে কারণে শীতে তো বটেই বরং শীত আসার আগে থেকেই শীতের রুক্ষ আবহাওয়া মোকাবেলা করার প্রস্তুতি নিতে হবে।
বিভিন্ন উৎু ঝশরহ ঈৎবধস- যুগ যুগ ধরে আমরা ব্যবহার করে আসছি আমরা। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন কোম্পানিও তাদের ফর্মুলা গুলোতে পরিবর্তন এনেছে। এই ক্রিমি ফর্মুলা ত্বকের গভীরে পৌঁছে ত্বক কে করে তোলে চটপট প্রাণবন্ত। ডারমাটোলজিক্যালি টেস্টেড এসব ক্রিম সেনসিটিভ ত্বকের অধিকারীরাও নিশ্চিন্তে ত্বকে বুলিয়ে নিতে পারেন। খুব সহজেই লোকাল মার্কেটে আপনি পেয়ে যাবেন বিভিন্ন ব্রান্ডের ক্রিম।

তবে ত্বকের জন্য দাম বেশি হলেও ভাল ক্রিম ব্যবহার করুন। দামি ও ভাল ক্রিম ব্যবহার করলে এদের মধ্যে পার্থক্য আপনি নিজেই করতে পারবেন। দেখবেন ক্রিমের সফট টেক্সচারের মত আপনার রুক্ষ শুষ্ক ত্বকও হয়ে উঠবে নরম তুলতুলে। অতিরিক্ত শুষ্কতার কারণে ত্বকে যে টানটান ভাব আসে তা থেকেও আপনি মুক্তি পাবেন নিমিষে। দিনরাত পুরো ২৪ ঘণ্টা আপনার ত্বককে দেবে সুরক্ষা। এতে বিদ্যমান রাইস ব্রান অয়েল, কর্ণ অয়েল, এপ্রিকট কার্নেল অয়েল, মিনারেল অয়েল আপনার ত্বকে এই শীতেও এনে দেবে বাড়তি চমক।
ত্বকের যত্নে শীতের প্রসাধনী

তৈলাক্ত ত্বক:
তৈলাক্ত ত্বক বলে শীতে কোন ময়েশ্চারাইজার লাগবে না এই ধারণা কিন্তু একদম ভুল। শীতকালেও আপনার ব্যবহারের জন্য আছে স্পেশাল কিছু ফর্মুলা।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য আপনি নিয়মিত যে ক্রিমটি ব্যবহার করেন সেটাই ব্যবহার করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন ক্রিমটি যেন ভালো কোম্পানির হয়। আপনি যদি স্নিগ্ধ গন্ধযুক্ত কোন লোশনের খোঁজে থাকেন তবে কোন রূপ বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিয়ে আপনি ক্রিম নির্বাচন করতে পারেন।
বাইরের দিক থেকে ত্বককে শুষ্ক রাখবে কিন্তু অভ্যন্তরীণ দিক থেকে আপনার ত্বক থাকবে অর্দ্র ত্বকের জন্য অবশ্যই এমন ক্রিম বেছে নিন। ত্বক খুব দ্রুত এই ক্রিম শোষণ করে নেয়। এই ক্রিম অতিরিক্ত সেবাম কন্ট্রোল করে স্কিনকে রাখে সতেজ, পরিষ্কার এবং নরম।

মিশ্র ত্বক:
মিশ্র ত্বক ২ ধরনের হয়ে থাকে- অয়েলি কম্বিনেশন এবং ড্রাই কম্বিনেশন। অ এই ২ ধরনের ত্বকের উপযোগী কিছু ক্রিমের নাম ইচ্ছে করলে জেনে নিতে পারেন পরিচিত বিউটি পার্লার থেকে।

Clinique Dramatically Different Moisturizing Gel: আপনার যদি অয়েলি কম্বিনেশন টাইপের স্কিন হয়ে থাকে অর্থাৎ ত্বকে তৈলাক্ত ভাগ বেশি থাকে তাহলে এই ক্রিমটি আপনার জন্য বেছে নিতে পারেন। এর দাম ২৪০০ টাকা, যা বিভিন্ন চেইন শপে পেয়ে যাবেন। তবে ব্যবহারের আগে কোন রূপ বিশেষজ্ঞর সঙ্গে পরামর্শ করে নিন।

Olay Quench Ultra Moisture Lotion: মিশ্র ত্বকের বডির জন্য তেমন কোন বডি লোশন বা ক্রিম নেই। তাই সব স্কিন টাইপের জন্য ফরমুলেটেড কোন একটি লোশন আপনি বেছে নিতে পারেন। Olay Quench Ultra Moisture লোশনটি তার মধ্যে একটি। এই সুগন্ধিবিহীন সিই বাটার, ভিটামিন ই এবং বি ৩ সমৃদ্ধ লোশনটি পুরো ২৪ ঘণ্টা ধরে যেমন শুষ্ক ত্বক কে সুরক্ষা দিবে তেমনি আপনার কম্বিনেশন বডিকে ময়েশ্চারাইজ করবে। ভালো ফলাফল পেতে গোসলের পর পরই শরীরে লাগাবেন। বিভিন্ন্য মার্কেটে ক্রিমটি পেয়ে যাবেন ৫৫০-৬০০ টাকার মধ্যে।
ত্বকের যত্নে শীতের প্রসাধনী


স্বাভাবিক ত্বক:
যেকোনো ক্রিম বা লোশন আপনি আনায়াশে ব্যবহার করতে পারেন।
শীতকালে ত্বকের যত্নে কিন্তু আপনাকে খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারেও মনোযোগী হতে হবে। শীতের শাকসবজি ও ফল সুন্দর স্বাস্থ্যজ্জ্বল ত্বকের জন্য প্রয়োজন।
আরেকটি প্রয়োজনীয় ছোট টিপস রইল আপনার জন্য। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে আধা গ্লাস ঈষদুষ্ণ পানিতে এক চামচ মধু ও এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে খেয়ে নেবেন। দেখবেন এই শীতেও ত্বক হবে লাবণ্যময়।

তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন
যাদের ত্বক খুব তৈলাক্ত তারা ক্লিনজিং ও ময়েশ্চারাইজিংয়ের ক্ষেত্রে অয়েল ফ্রি প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। ঘরোয়া ময়েশ্চারাইজার হিসেবে এক্ষেত্রে টমাটোর রস খুব কার্যকর। ক্লিনজিং ও টোনিংয়ের পর লেটুস পাতার রস, মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে লাগাতে পারেন। আনারস, আপেল, পাকা পেঁপের সঙ্গে মধু মিশিয়ে প্যাক ব্যবহার করতে পারেন।
শুষ্ক ত্বকের যত্ন
শুষ্ক ত্বকের প্রধান কাজ হল ত্বকের ময়েশ্চারাইজার ধরে রাখা। ভিটামিন-ই অয়েল ১/২ চামচ, ১/২ চামচ গ্লিসারিন মিশিয়ে প্রতিদিন লাগাতে পারেন। ত্বকে পুষ্টি জোগাতে ডিমের কুসুম, ১ চা-চামচ মধু, আধা চামচ অলিভ অয়েল ও গোলাপজল মিশিয়ে সারা মুখে লাগিয়ে ১৫ মি. রেখে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২ দিন ব্যবহার করতে পারেন।
মিশ্র ত্বকের যত্ন
প্রতিদিন হালকা ক্লিনজার ব্যবহার করতে পারেন। তবে ত্বকের শুষ্ক জায়গাগুলো অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার লাগাবেন। সিদ্ধ করা মিষ্টি কুমড়ো চটকে তার সঙ্গে মধু ও দুধ পরিমাণ মতো মিশিয়ে ২০ মি. রেখে তারপর ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। এ প্যাকটি সপ্তাহে ৩ দিন ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।
এছাড়া ত্বকের যত্নে নিম্নোক্ত কাজগুলো করতে পারেন:
নিয়মিত ত্বকে ময়েশ্চারাইজ করুন
শীতে ত্বকের যত্নের শুরুতে একটি ভালো ময়েশ্চারাইজার বেছে নিন। বাজার থেকে বাদাম তেল বা এভাকাডো সম্বৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার কিনুন। এগুলো ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে। প্রতিদিন অন্তত দুবার অথবা যতবার ত্বক শুষ্ক মনে হবে ততবার ব্যবহার করুন।
সানস্ক্রিন ক্রিম ব্যবহার
শীতকালেও বাইরে বের হওয়ার ৩০ ‍মিনিট আগে এসপিএফ ১৫-৩০ সম্পন্ন সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
আর্দ্রতা বজায় রাখুন
শীতকালে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে মাঝে মাঝে মুখে পানির ঝাপটা দিন। তাহলে সহজে ত্বক শুষ্ক হবে না।
অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার করবেন না
গোসলের সময় আরাম অনুভব হলেও অতিরিক্ত গরম পানি দিয়ে মুখ, মাথা ধোয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, অতিরিক্ত গরম পানি ত্বকের কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর ফলে ত্বকের আর্দ্রতা নষ্ট হয়। গোসলের সময় পানিতে কয়েক ফোটা জোজোবা বা বাদাম তেল দিয়ে নিলে তা ত্বককে আর্দ্র এবং মসৃণ করতে সহায়তা করে।
ভেজা ত্বকে পরিচর্যা করুন
গোসলের পর এবং প্রতিবার মুখ ধোয়ার পর ভেজা ‍অবস্থায় ময়েশ্চারাইজার বা লোশন ব্যবহার করুন। এতে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে।
ঠোঁটের পরিচর্যা
কখনোই ‍জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজানো উচিৎ নয়। কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল মধুর সাথে মিশিয়ে ঠোঁটে লাগালে ঠোঁট কখনোই ফেটে যাবে না।
চুলের যত্ন
শীতে ত্বক শুষ্ক হয়ে মাথার ত্বকেও এর প্রভাব পড়ে। এজন্য সপ্তাহে অন্তত একদিন প্রোটিন প্যাক ব্যবহার করতে হবে। আমলকীগুঁড়া, হরীতকীগুঁড়া, বহেরাগুঁড়া, মেথিগুঁড়া, ব্রাহ্মিগুঁড়া, হেনাগুঁড়া, ডিমের সাদা অংশ, টক দই, পানি একসঙ্গে মিশিয়ে চুলে আধা ঘণ্টা মেখে পরে চুল ধুয়ে ফেলুন। এটি চুলের উজ্জ্বলতা বাড়বে এবং খুশকি দূর হবে।
হ্যাট পরুন
চুল এবং মাথার তালুর আর্দ্রতা ধরে রাখতে হ্যাট পরুন। তবে হ্যাটটি যাতে বেশি টাইট না হয় সে দিকে খেয়াল রাখবেন।
হাত ও পায়ের যত্ন
হাত এবং পায়ের আর্দ্রতা ধরে রাখতে যতবার প্রয়োজন ততবার লোশন বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
রূপচর্চার পাশাপাশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত খাবারের প্রতিও। সবুজ শাক-সবজি ও ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস করুন। এছাড়া শরীরের ভেতরের আর্দ্রতা ধরে রাখতে প্রচুর পানি পান করুন।