চুলের বেশির ভাগ যত্ন কিন্তু নির্ভর করে শ্যাম্পুর ওপর। কারণ চুল ভালো করে ধুলে তবেই চুল ভালো থাকে। কিন্তু শ্যাম্পু যদি ভালো মানের না হয় তবে মাথায় হাত! চুলের খুশকি দূর করতে, শুষ্কতা ও চুল পড়া কমানোর জন্য কত রকমের শ্যাম্পু! রইল চুলের যত্নে শ্যাম্পুর বৃত্তান্ত।

বাজারে কত রকমের শ্যাম্পু পাওয়া যায়। কিন্তু সব শ্যাম্পু আর ভালো মানের নয়। কোন শ্যাম্পুর কী কাজ, তা ভালো করে রপ্ত করতে পারলেই বুঝতে পারবেন, কোন শ্যাম্পু আপনার প্রয়োজন।

হাইড্রেটিং বা ময়েশ্চারাইজীয় শ্যাম্পু

এ ধরনের শ্যাম্পু চুলে ময়েশ্চার অ্যাড করে। ফলে চুল হয় অনেক উজ্জ্বল ও মসৃণ। তাই যাদের চুল খুব ড্রাই আর উষ্কখুষ্ক তারা মুশকিল আসানের জন্য ময়েশ্চারাইজীয় শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।

ভলিউমাইজিং শ্যাম্পু

এ শ্যাম্পু ব্যবহারে চুল ফুলে উঠে দ্বিগুণ। তাই যাদের মাথায় চুল কম তারা এই শ্যাম্পু ট্রাই করতে পারেন। যাদের চুল ড্রাই তারা ভুলেও এই শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন না। উল্টো ক্ষতি হতে পারে। সাধারণত খুব ভালো চুলে বা অয়েলি হেয়ারে এই শ্যাম্পু ব্যবহার করলে সুফল পাবেন।

স্ট্রেংদেনিং শ্যাম্পু

এ ধরনের শ্যাম্পুতে অতিরিক্ত প্রোটিন থাকায় এই শ্যাম্পু চুলকে পুষ্টি জোগায়। তাই চুলের ডগা ফাটলে, রং করালে বা অত্যধিক চুল পড়ার সমস্যা থাকলে এই শ্যাম্পু ভালো কাজে দেবে।

ব্যালান্সিং শ্যাম্পু

এ শ্যাম্পু সব ধরনের চুলে মানানসই। কারণ এই শ্যাম্পু যেমন চুল ড্রাই করে দেয় না, তেমনই চুলে অতিরিক্ত ময়েশ্চারও অ্যাড করে না। ফলে চুল যেমন, তেমনই থাকে। তাই চুলে কোনো সমস্যা না থাকলে এই শ্যাম্পু উত্তম।

স্মুদনিং বা স্ট্রেটনিং শ্যাম্পু

এ শ্যাম্পুতে ময়েশ্চারাইজীয় বা স্মুদনিং এজেন্ট বেশি থাকায় চুলের কিউটিকল সিল করে দেয়, ফলে চুল অপেক্ষাকৃত স্ট্রেট বা স্মুদ দেখায়। তাছাড়া এই শ্যাম্পু চুলে হিট দেওয়ার ক্ষতিকর প্রভাব থেকেও রক্ষা করে। তবে জাদের অয়েলি হেয়ার তারা ভুলেও এ শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন না।

কার্লি হেয়ার শ্যাম্পু

এ ধরনের শ্যাম্পু চুলের শুষ্কতা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ফলে কোঁকড়া চুলে পুষ্টি জোগায় আর চুল রাখে উজ্জ্বল আর মসৃণ। তবে এই শ্যাম্পু শুধু কার্লি হেয়ার হলেও ব্যবহার করুন।

আপনার চুলের ধরন বুঝে শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে হেয়ার এক্সপার্টের সাহায্য নিন। শ্যাম্পু কেনার আগে শপের হেয়ার ট্রেইনারদের কাছে জেনে নিন কোন শ্যাম্পুর গুণ কী।

শীতে শ্যাম্পু করার টিপ্স

প্রথমে পুরো কুসুম গরম পানি দিয়ে চুল ভালো করে ভিজিয়ে নিন। কুসুম গরম পানি কিউটিকল ওপেন করতে সাহায্য করে। ফলে মাথায় জমে থাকা আলগা ময়লা খুব সহজেই বেরিয়ে আসে। শ্যাম্পু করার পর অবশ্যই ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নেবেন।

শ্যাম্পু করার শুরুতে একটি পাত্রে সামান্য পানি নিয়ে তাতে শ্যাম্পু নিয়ে গুলে নিন। এবার সেই শ্যাম্পুর মিশ্রণ ভালো করে মাথায় লাগিয়ে আঙ্গুলের ডগা দিয়ে স্ক্যাল্পে চাপ দিয়ে হালকা ম্যাসাজ করে নিন। এতে মাথায় রক্ত সঞ্চালন ভালো হবে, সঙ্গে ময়লাও পরিষ্কার হয়ে যাবে। স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ হয়ে গেলে পুরো চুলে ভালো করে হাত দিয়ে কচলে ময়লা পরিষ্কার করে নিন। এবার ঠাণ্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। শ্যাম্পু করা শেষে ভালো করে পুরো চুলে কন্ডিশনার লাগাতে হবে।

ঘরোয়া শ্যাম্পু সম্পর্কে জেনে নিন!

একের পর এক ব্র্যান্ডের শ্যাম্পু ব্যবহার করছেন কিন্তু কোনটিতেই ফল পাচ্ছেন না? জেনে রাখুন একদম ঘরোয়া উপায়ে এই ৭টি শ্যাম্পু তৈরির উপায়। রাসায়নিক শ্যাম্পু ব্যবহারে আপনার যতো ক্ষতি হচ্ছে, এসব প্রাকৃতিক শ্যাম্পু ব্যবহারে কমে যাবে সেই ক্ষতি। সুস্থ ঝলমলে চুল হয়ে উঠবে ভেতর থেকে সুন্দর।

১) বেকিং সোডা শ্যাম্পু :
এক টেবিল চামচ সোডার সাথে এক কাপ পানি মিশিয়ে সাধারণ শ্যাম্পুর মতো ব্যবহার করুন। চুলের ময়লা কমানো এবং ড্যানড্রাফ দূর করতে এটি কাজে লাগবে। তবে এই শ্যাম্পু কিছুদিন পর পর ব্যবহার করাই ভালো।

২) লেবু ও শসার শ্যাম্পু :
যাদের চুল শুষ্ক তাদের জন্য এই শ্যাম্পু খুবই কাজে আসবে। একটি লেবু ও একটি শসার খোসা ছিলে নিন। এগুলো ব্লেন্ড ক্লরে নিন ভালোমত। এরপর সাধারণ শ্যাম্পুর মতো ব্যবহার করুন। চুলে কিছু লেবুর অংশ লেগে থাকতে পারে। চুল শুকিয়ে যাবার পর চিরুনি চালিয়ে এগুলো পরিষ্কার করে ফেলুন।

৩) কর্ন স্টার্চ শ্যাম্পু :
এই শ্যাম্পু চুল ঘন করতে সাহায্য করবে। এক কাপ পানিতে এক টেবিল চামচ বেকিং সোডা গুলে নিন। এরপর এতে কর্ন স্টার্চ বা কর্ন ফ্লাওয়ার যোগ করুন যতক্ষণ না তা শ্যাম্পুর মতো ঘন হয়। এরপর সাধারণ শ্যাম্পুর মতো ব্যবহার করুন।

৪) অ্যাপল সিডার শ্যাম্পু :
এক কাপ বেবি শ্যাম্পুর সাথে যোগ করুন দুই টেবিল চামচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার। এর সাথে সিকি কাপ পানি যোগ করুন। যোগ করতে পারেন এক টেবিল চামচ টি ট্রি অয়েল। ব্যবহার করুন সাধারণ শ্যাম্পুর মতো। শুধু শ্যাম্পুই নয়, এটি কন্ডিশনারেরও কাজ করবে।

৫) নারিকেল দুধ শ্যাম্পু :
চুলের জন্য নারিকেলের দুধ খুবই ভালো। পৌনে এক কাপ বেবি শ্যাম্পুর সাথে যোগ করুন সিকি কাপ নারিকেল দুধ। এর সাথে যোগ করতে পারেন এক টেবিল চামচ আমন্ড অয়েল এবং দশ ফোঁটা আপনার প্রিয় যে কোন এসেনশিয়াল অয়েল। ব্যবহার করুন সাধারণ শ্যাম্পুর মতো।

৬) তেলের শ্যাম্পু :
কী, নাম শুনেই খটকা লাগছে? কোথায় তেল আর কোথায় শ্যাম্পু! যাদের মাথার ত্বক শুষ্ক তাদের জন্য কিন্তু এটা দারুণ উপকারী! সিকি কাপ পানির সাথে যোগ করুন সিকি কাপ বেবি শ্যাম্পু। এর মাঝে যোগ করুন আধা টেবিল চামচ ভেজিটেবল তেল।

৭) মাখন শ্যাম্পু :
কোঁকড়া চুলের মেয়েদের জন্য এই শ্যাম্পুটি খুব কাজের। একটি বাটিতে মিশিয়ে নিন দুই টেবিল চামচ অ্যালো ভেরা জেল, দুই চা চামচ নারিকেল তেল এবং দুই টেবিল চামচ মাখন। সাধারণ শ্যাম্পুর মতোই ব্যবহার করুন একেও।