চুল ধোয়ার আগে তেল গরম করে মাথায় মালিশ করে তারপর একটা তোয়ালে গরম পানিতে ভিজিয়ে পানি নিংড়ে মাথায় ১০ মিনিট জড়িয়ে রাখবেন। তারপর খুশকি দূর করার ওষুধ বা শ্যাম্পু দিয়ে মাথা পরিষ্কার করবেন। এছাড়া প্রাকৃতিক উপায়েও আপনি খুশকি দূর করতে পারেন। যেমনঃ কাঁচা পেঁয়াজের রস মাথায় ভালভাবে দিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রাখবেন। তারপর চুল ভাল করে পরিষ্কার করবেন। এভাবে কিছুদিন করার পর খুশকি দূর হবে। প্রতিদিন চিরুনী ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করবেন। অন্যের ব্রাশ, চিরুনী ব্যবহার করবেন না।

 চায়ের কড়া লিকারের সাথে পাতি লেবুর রস
চায়ের কড়া লিকারের সাথে কয়েক ফোটা পাতি লেবুর রস মিশিয়ে মাথা ধোয়ার পর এই লিকার পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিবেন। এতে চুল ওঠা বন্ধ হবে এবং চুল চক চক করবে।

শুকনো আমলকি
শুকনো আমলকি দুধে ৪/৫ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখবেন। নরম হলে বেটে পেস্টের মত করে মাথায় বিলি কেটে চুলের গোড়ায় ঘষে ঘষে লাগাবেন। অন্তত পক্ষে ১ ঘন্টা রেখে মাথা ধুয়ে ফেলবেন। আমলকির সাথে কয়েকটা মেহেদি পাতা দিতে পারলে খুব ভাল। এই পদ্ধতিতে চুল খুব ভাল থাকে।

দূর্বাঘাস ও নারকেল তেল
এক মুঠো দূর্বাঘাস খাঁটি নারকেল তেলের মধ্যে সারা রাত ভিজিয়ে রাখবেন। পরের দিন এই তেল রোদে ভাল করে গরম করে নিয়ে মাথায় বিলি কেটে লাগালে চুল ঘন হয়। এই তেল বোতলে রেখে দিতে পারেন। তবে রোজ রোদে দিতে হবে। মাথায় দেয়ার সময় রোদে গরম করে নেবেন।

চুলে উকুন হলে কি করবেনঃ
উকুন চুলের জন্যে যেমন ক্ষতিকর তেমনি নিজের কাছে অস্বস্তিকরও বটে।
‘পেডিকুলসি ক্যপিটিস’ জাতের উকুন পরাশ্রয়ী জীবাণু। উকুন একজনের মাথা থেকে অন্যের মাথায় ছড়ায়। এরা মাথার ত্বকের উপর বাস করে। এদের ধূসর বা সাদা রংঙের লিক বা ডিম চুলের গোড়া থেকে একটু দূরে চুলের গায়ে গেঁথে থাকে। এর চিকিৎসা খুবই সহজ। বাজারে আজকাল উকুন মারার সাবান এবং শ্যাম্পুও পাওয়া যায়। এ দিয়েও আপনি উকুন দূর করতে পারেন

ক. সাড়ে পাঁচ গ্রাম ডিডিটির সঙ্গে সাড়ে তিন আউন্স ট্যালকম পাউডার মিশিয়ে একটা চূর্ণ তৈরি করে রাতে শোবার আগে চুলের উপর বেশি করে দিয়ে একটা কাপড় দিয়ে মাথা ঢেকে রাখতে হবে। পরের দিন চিরুনী দিয়ে মাথা অাঁচড়াতে হবে। এভাবে দু’তিন দিন ওষুধ প্রয়োগ করলে উকুন মরে যাবে।

খ. নারকেল তেলের সাথে ন্যাপথালিন গুঁড়ো করে মিশিয়ে চুলে ঘন্টা খানেক লাগিয়ে রেখে দেবেন। তারপর মাথা ধুয়ে ফেলবেন। এভাবে কয়েকদিন লাগানোর পর উকুন মরে যাবে।

গ. প্রাকৃতিক উপায়েও উকুন দূর করা যায়। তুলসী পাতার রস উকুন নিধনে উপকারী। এর রস মাথায় বিলি কেটে দিয়ে ঘন্টা খানেক রাখবেন। পরে মাথা ধুয়ে ফেলবেন।

ঘ. ধুতরা পাতার রস, পানের রস, কর্পূর এক সঙ্গে মিশিয়ে মাথায় লাগালে উকুন মরে যায়। এরপর মাথা ভালভাবে ধুয়ে ফেলবেন।]

চুলের ডগা ফেটে গেলে
চুলের ডগা ফেটে গেলে মনে করবেন চুলের সর্বনাশ হয়েছে। কাজেই ডগা ফাটলে ডগা ছেটে ফেলবেন। এছাড়া কোন উপায় নেই। তা না হলে চুল আর বাড়বেনা। ধৈর্য ধরে চুল ব্রাশ করবেন। নিয়মিত খাবারের মধ্যে ভিটামিন ‘সি’ জাতীয় খাবার রাখবেন। তাহলে উপকার পাবেন। নিয়মিত তেল মালিশ করবেন। সপ্তাহে দু’দিন চুল ধুবেন। খাবারের মধ্যে ‘এ’ জাতীয় ভিটামিন রাখবেন। তা হলে চুল ও ত্বক উভয়ই সুন্দর হবে। গাজরে প্রচুর ‘এ’ ভিটামিন পাওয়া যায়। আমড়া, আমলকি, লেবু, পেয়ারায় প্রচুর ‘সি’ ভিটামিন পাওয়া যায়। মৌসুমের সময় এগুলো খেলে আপনি উপকার পাবেন। বাচ্চা হবার পরও অনেক মায়ের চুল পড়ে যায়। ক্যালসিয়াম ও আয়রণের অভাব হলে এটা হয়ে থাকে। তখন ডাক্তার দেখিয়ে পরামর্শ নিতে পারেন। মনে রাখবেন চুল নারীর সৌন্দর্যের এক অপরিহার্য অঙ্গ। একে অবহেলা করা উচিত নয়।

সব ধরনের চুলের যত্নে করণীয়ঃ
১. সব সময় চিরুনী, ব্রাশ পরিষ্কার রাখবেন।
২. অন্যের চিরুনী, ব্রাশ ব্যবহার করবেন না।
৩. খুব ঘন ঘন চুল ছাটবেন না। অন্ততপক্ষে ১ মাস বা দেড় মাস অন্তর ছাটবেন।
৪. চুলের আগা ফাটলে ছেটে ফেলবেন।
৫. চুল খুব শক্ত কিংবা টান টান করে বাঁধবেন না।
৬. চুলে রাসায়নিক দ্রব্য পারত পক্ষে ব্যবহার করবেন না।
৭. অন্ততপক্ষে সপ্তাহে দুদিন চুলে তেল মালিশ করবেন।
৮. অতিরিক্ত সূর্যের আলো চুলের জন্যে খারাপ। তাই এর হাত থেকে চুলকে রক্ষা করবেন।
৯. বাইরে থেকে এসে চুল ব্রাশ করবেন যাতে ধুলোবালি জমতে না পারে।
১০. খাবারের সাথে ভিটামিন ‘এ’, ভিটামিন ‘সি’, ভিটামিন ‘বি’ কমপ্লেক্স ও প্রোটিন রাখবেন এতে চুলের স্বাস্থ্য ভাল থাকবে এবং চুল অকালে পাকবে না।
১১. ছোট মাছ খাবেন।
১২. সর্বোপরি জাজিন বা বজ্রাসনে বসে ছোট বেলা থেকে প্রতিদিন ১০০ বার চুল ব্রাশ করলে চুল অকালে পাকবে না। চুলে খুশকি হবে না।