গলায় ও ঘাড়ে সানট্যান, পিগমেন্টেশন বা ডার্ক প্যাচের সমস্যা? সমাধান সম্ভব সহজেই। প্রয়োজন শুধু নিয়মিত যত্নের। সাহায্যে নিয়মিত রূপচর্চার বিশেষ কিছু টিপস।

যাঁরা রোজ অফিসে যান বা দীর্ঘক্ষণ বাইরে থাকেন, প্রবল রোদে পুড়ে তাঁদের ত্বকের বারোটা বেজে যাওয়াটা আদৌ অসম্ভব নয়। তবে মুখের রূপচর্চার জন্য যেমন আমরা হাজারো কসরত্‌ করি, গলা বা ঘাড়ের জন্য তার ছিটেফোঁটাও করি না! আসলে, গলা বা ঘাড়ের মতো জায়গাগুলো শরীরের সবচেয়ে অবহেলিত অংশ। ফলত,পিগমেন্টেশন, আনইভেন স্কিনটোন, সানট্যান, বলিরেখার মতো নানা সমস্যা দেখা দেয় এসব জায়গায়। ফলে গলা বা ঘাড় মুখের তুলনায় বেমানান দেখায়। আসলে মুখের বা চুলের নিয়মিত যত্ন নিলেও ক্লান্তি বা সময়ের অভাবে গলা বা ঘাড়ের দিকে তেমন নজর দেওয়া হয়ে ওঠে না। আর ট্যানড গলা বা পিগমেন্টেড ঘাড় নিয়ে কোনও অনুষ্ঠানে পিষ্ঠপ্রদর্শন করে যেতে চাইলে বা অফিস পার্টিতে ডিপ কাট পোশাক পরলেই তো সত্যিটা সবার সামনে বেরিয়ে পড়বে! তাই, মাথায় রাখতে হবে রূপচর্চা মানেই শুধু মুখ বা চুলের যত্ন নয়। গলা, ঘাড় শরীরের এই অংশগুলোরও একইরকম খাতির প্রয়োজন।

সারাদিনে যদি ১০ মিনিট সময় বের করে একটু যত্ন নিতে পারেন তাহলেই হবে। আর এর জন্য বেশি কিছু জিনিসেরও প্রয়োজন নেই। স্ক্রাবার, ময়েশ্চারাইজারের মতো ছোট ছোট দু’চারটে জিনিস একটু কিনে নিন। আর বেসন, হলুদগুঁড়ো, লেবুর রসের মতো বাকি উপাদানগুলো আপনার রান্নাঘরে উঁকি দিলেই পেয়ে যাবেন। তাহলে আর দেরি না করে আজ থেকেই শুরু করুন গলা ও ঘাড়ের যত্ন।

গলা ও ঘাড়ের নিয়মিত যত্ন

ক্লেনজিং-টোনিং-ময়েশ্চারাইজিং

সকালে ঘুম থেকে উঠে ও রাতে শুতে যাওয়ার আগে নিয়ম মেনে মোটামুটি আমরা সকলেই মুখ পরিষ্কার করি। কিন্তু গলা বা ঘাড়েরও যে ক্লেনজিং প্রয়োজন, তা আর মাথায় থাকে না। গলা ও ঘাড় ঠিকমতো পরিষ্কার না করলে ধুলোময়লা ও তেল জমে ত্বকে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে হ্যাঁ, সাবান দিয়ে ধোবেন না। এতে গলা ও ঘাড়ের ত্বক আরও রুক্ষ হয়ে যেতে পারে। পরিবর্তে ক্লেনজিং ক্রিম বা জেল ব্যবহার করুন। এতে একদিকে যেমন ত্বক পরিষ্কার হবে তেমনই ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতাও বজায় থাকবে। এরপর তুলোয় টোনার লাগিয়ে গলা ও ঘাড় ভাল করে মুছে নিন। টোনার ত্বকে রক্তসঞ্চালন ভাল করতে সাহায্য করে। ফলে ত্বক মসৃণ, টানটান ও উজ্জ্বল হয়। তারপর কোনও ভাল ময়শ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। হালকা হাতে আপওয়ার্ড মুভমেন্টে গলা ও ঘাড় কিছুক্ষণ মাসাজ করুন। প্রয়োজন হলে হাতে সামান্য জল নিয়ে নিতে পারেন। ইচ্ছে হলে বাড়িতেও ময়শ্চারাইজার বানিয়ে নিতে পারেন। গোলাপ জল, গ্লিসারিন ও অ্যালোভেরার রস একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি এয়ারটাইট কন্টেনারে রেখে ফ্রিজে স্টোর করতে পারেন। ময়শ্চারাইজার হিসেবে নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন। এতে গলা ও ঘাড়ের ত্বক নরম ও কোমল হবে।

স্ক্রাবিং

গলা ও ঘাড়ের কালো দাগ দূর করতে হোক বা কোমল ত্বক পেতে এক্সফোলিয়েট করাটা অত্যন্ত জরুরি। এরজন্য সপ্তাহে দু’-তিনদিন ফেশিয়াল স্ক্রাবার ব্যবহার করতে পারেন। যে কোনও ভাল কসমেটিক্সের দোকানেই স্ক্রাবার কিনতে পেয়ে যাবেন। প্রয়োজনে একটু মোটা দানার স্ক্রাবার কিনুন। গলা ও ঘাড়ে স্ক্রাবার লাগিয়ে পাঁচমিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর ভিজে হাতে সার্কুলার মুভমেন্টে ভাল করে কিছুক্ষণ ঘষে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ইচ্ছে হলে বাড়িতেও স্ক্রাবার তৈরি করে নিতে পারেন। ময়দার সঙ্গে দই, ওটমিল, গোলাপজল মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে নিন। স্ক্রাবার হিসেবে মিশ্রণটি দারুণ কাজ করবে। নিয়মিত লাগালে গলা ও ঘাড়ের ত্বকের মরা কোষ ঝরে যাবে। ত্বক মসৃণ হবে। শুধু তাই নয়, ডার্ক প্যাচ বা কালো দাগ থাকলে তাও চলে যাবে।

স্নানের আগে

স্নানের আগে দুধের সর, চালেরগুঁড়ো, বেসন, টক দই ও কাঁচা হলুদবাটা একসঙ্গে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিন। সপ্তাহে তিনদিন এই প্যাক গলা ও ঘাড়ে ভাল করে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে হালকা হাতে সার্কুলার মুভমেন্টে কিছুক্ষণ ঘষে স্নান করে নিন। নিয়মিত লাগালে দেখবেন সানট্যানের সমস্যা অনেক কমে যাবে। হলুদে আছে অ্যান্টি-এজিং প্রপার্টি। ফলে গলা ও ঘাড়ে যদি বলিরেখা থাকে তাও ধীরে ধীরেকমে যাবে। এর পাশাপাশি স্নানের আগে গলা ও ঘাড়ে তিলতেল মাসাজ করতে পারেন। ত্বক তো নরম হবেই, ডার্ক প্যাচের সমস্যাও কমে যাবে।

সান প্রটেকশন

গলা ও ঘাড়ে অনেক সময় সানট্যান, ডার্ক প্যাচ, বলিরেখা, পিগমেন্টেশনের মতো নানা সমস্যা দেখা দেয়। এগুলোর বেশিরভাগই দেখা দেয় সূর্যের ক্ষতিকারক আলট্রাভায়োলেট রশ্মির প্রভাবে। তাই দিনেরবেলা রোদে বাইরে বেরনোর অন্তত ২০ মিনিট আগে মুখের সঙ্গে সঙ্গে গলায় ও ঘাড়ে উচ্চ এসপিএফযুক্ত সানস্ক্রিন অবশ্যই লাগাবেন। তবে নিজের ত্বকের প্রকৃতি অনুযায়ী সানস্ক্রিন বেছে নিন। শুষ্ক ত্বকের জন্য ক্রিমবেস সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। আর তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে জেলবেস সানস্ক্রিন ভাল কাজ করে।

নাইট কেয়ার

রাত্রে শুতে যাওয়ার আগে গলা ও ঘাড়ে নারিশিং ক্রিম লাগিয়ে হালকা হাতে কিছুক্ষণ মাসাজ করুন। নারিশিং ক্রিম ত্বকের ভেতরে গিয়ে পুষ্টি জোগাবে। ফলে গলা ও ঘাড়ের ত্বকের জেল্লা বহুগুণ বাড়বে। প্রয়োজন হলে হাতে সামান্য জল নিতে পারেন। সবচেয়ে ভাল হয় যদি হলুদ ও লেবুর নির্যাসযুক্ত ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। এতে গলা ও ঘাড়ের ত্বক কোমল তো হবেই সঙ্গে যদি কোন দাগ থাকে তাও হালকা হয়ে যাবে। সবশেষে ভিজে তুলো দিয়ে অতিরিক্ত ক্রিম মুছে নিন।

পার্লারে পরিচর্যা

মাসে একবার করে কোনও ভাল সালঁতে গিয়ে ট্রিটমেন্ট করতে পারেন। যাঁদের গলা ও ঘাড়ে সানট্যানের সমস্যা তাঁরা অ্যান্টিট্যান ক্রিম দিয়ে মাসাজ করিয়ে প্যাক লাগাতে পারেন। সালঁতে প্রফেশনালরা দক্ষ হাতে বিভিন্ন মাসাজ টেকনিকের দ্বারা গলা ও ঘাড়ের ত্বকের এক্সফোলিয়েশন ও মাসাজ করে থাকেন। এরপর মাস্কও ব্যবহার করা হয়। মাসাজের ফলে আপনার গলা ও ঘাড়ের ত্বকের উপর জমে থাকা মরা কোষ দূর হয়ে যায়। পাশাপাশি ব্লাড সার্কুলেশন ভাল হয়, চামড়া টানটান হয়, ত্বকের জেল্লাও বাড়বে।

 

ঘরোয়া যত্ন

যাঁদের গলা ও ঘাড়ে কালো দাগ, পিগমেন্টেশন বা বলিরেখার সমস্যা আছে তাঁরা কয়েকটা ঘরোয়া প্যাক ট্রাই করে দেখতে পারেন। একটা ডিমের সাদা অংশ, দু’টেবলচামচ দই, দু’চা-চামচ মূলতানি মাটি, এক চা-চামচ মধু ও সামান্য বেকিং সোডা একসঙ্গে মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে নিন। গলা ও ঘাড়ে ভাল করে লাগিয়ে নিন। ২০ মিনিট অপেক্ষা করে ভিজে হাতে ঘষে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। গলা ও ঘাড়ের কালো দাগ দূর করতে এর জুড়ি নেই। য
বেসন, টক দই, চিনি, পাতিলেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে গলা ও ঘাড়ে ভাল করে লাগিয়ে নিন। যতক্ষণ না চিনি গলে যাচ্ছে ততক্ষণ হালকা হাতে ঘষতে থাকুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন। ইচ্ছে হলে এর সঙ্গে সামান্য মধুও মেশাতে পারেন। মধু ন্যাচারাল ময়েশ্চারাইজারের কাজ করবে। ফলে একদিকে যেমন গলা ও ঘাড়ের কলো দাগ কমবে, তেমনই ত্বক নরম হবে।

কালো দাগ দূর করতে লেবু অর্ধেক করে কেটে চিনির সঙ্গে মিশিয়ে গলা ও ঘাড়ে সার্কুলার মুভমেন্টে ঘষতে পারেন। নিয়মিত লাগালে কালো দাগ অনেকটা কমে যাবে।

যাঁদের গলা ও ঘাড়ে সানট্যানের সমস্যা আছে তাঁরা বেসন, সামান্য দই, হলুদ মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে গলায় ও ঘাড়ে লাগান। আধশুকনো হলে ঘষে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। বেসন-হলুদের এই পেস্ট ক্লিঞ্জার হিসেবে দারুণ কাজ করে।

আলু পাতলা করে কেটে নিয়ে গলা ও ঘাড়ে ঘষুন। নিয়মিত লাগালে সানট্যানের সমস্যা অনেক কমবে।

পিগমেন্টেশনের সমস্যাতে আমন্ডগুঁড়ো ও দই একসঙ্গে মিশিয়ে পিগমেন্টেশনের উপর লাগিয়ে নিন। ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত করলে দেখবেন, পিগমেন্টেসনের সমস্যা আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। এক চা-চামচ মধু ও দু’চা-চামচ লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে পিগমেন্টশনের উপর লাগিয়ে নিন। ২০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন।

বলিরেখার সমস্যায় পাকা পেঁপে সামান্য চটকে নিয়ে গলা ও ঘাড়ে লাগিয়ে নিন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন।

মেক-আপ

পার্টি বা অনুষ্ঠানের জন্য মুখের সঙ্গে সঙ্গে গলায় ও ঘাড়েও কিন্তু সামান্য মেক-আপ করা জরুরি। গলা ও ঘাড় ক্লেনজিং ক্রিম দিয়ে পরিষ্কার করার পর ভাল করে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। তবে আপনার ত্বক যদি খুব তৈলাক্ত হয় তাহলে ময়েশ্চারাইজারের পরিবর্তে তুলোয় অ্যাস্ট্রিনজেন্ট লোশন নিয়ে গলা ও ঘাড় মুছে নিন। যদি গলা বা ঘাড়ে পিগমেন্টশনের সমস্যা থাকে তাহলে দাগের উপর কটন বাডে করে কনসিলার লাগিয়ে নিন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে গলায় ও ঘাড়ে ফোঁটা ফোঁটা করে ফাউন্ডেশন লাগিয়ে নিন। তারপর ভিজে স্পাঞ্জ দিয়ে ফাউন্ডেশন ভাল করে ব্লেন্ড করে নিন। সবশেষে গলায় ও ঘাড়ে কমপ্যাক্ট লাগিয়ে নিন। যাঁদের ডবল চিনের সমস্যা আছে তাঁরা মেক- আপ করার সময় এক শেড গাঢ় রহের ফাউন্ডেশন চিনের ঠিক নীচে লাগিয়ে নিন। উপরে সামান্য হাইলাইটার দিলেই সমস্যার সমাধান। খেয়াল রাখবেন, মুখের সঙ্গে গলা ও ঘাড়ের মেক-আপ যেন সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।