৩৯তম বিশেষ বিসিএসের সঙ্গে ৪০তম সাধারণ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে প্রকাশ করবে পিএসসি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী ৪০তম বিসিএসে দুই হাজারের বেশি পদে নিয়োগের জন্য দরখাস্ত আহ্বান করা হবে। চিকিৎসকদের জন্য বিশেষ বিসিএস ও সাধারণ বিসিএসের অগ্রগতির বিষয়ে জনপ্রশাসন ও পিএসসি সূত্র জানায়, চিকিৎসকদের বিশেষ বিসিএসের জন্য সাধারণ বিসিএসের কার্যক্রমে কোনো ব্যাহত হয়নি। ফলে পরবর্তী সাধারণ বিসিএস পরীক্ষার জন্য দুই হাজারের বেশি পদে রিকু্যইজেশন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যথাসময়ে জমা হয়েছে। চলতি মাসেই এর সারসংক্ষেপ চূড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর পিএসসিতে পাঠানো হবে। এরপর আগামী ফেব্রুয়ারিতে অথবা মার্চে এই বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশিস্নষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, ৩৯তম বিসিএস চিকিৎসকদের জন্য বিশেষ হিসেবে নেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও এটি সাধারণ বিসিএসও হতে পারে। কারণ, বিশেষ বিসিএসের পরীক্ষা গ্রহণের জন্য বিধিমালা সংশোধন করতে আরও কমপক্ষে প্রায় দুই মাস সময় লাগবে। অথচ সাধারণ বিসিএসের সব প্রস্তুতিও শেষ। আর পিএসসি যে পরীক্ষার রিকু্যইজেশন আগে পাবে, সেটাই আগে নিতে হবে। তবে ৩৯ ও ৪০তম বিসিএসের সার্কুলার খুব কাছাকাছি সময়ে প্রকাশ করা হবে।

জানা যায়, সাধারণ বিসিএসের সব প্রস্তুতি থাকার পরও পিএসসি ও জনপ্রশাসনের অনাগ্রহের কারণে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে। কারণ, পিএসসি একসঙ্গে দুই বিসিএসের (বিশেষ ও সাধারণ) চাপ নিতে চাচ্ছে না। এ জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ও সাধারণ বিসিএসের কাজ ধীরে আগাচ্ছে। তবে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পরও বিশেষ বিসিএসের কারণে সাধারণ বিসিএস পিছিয়ে দেয়া হলে প্রায় অর্ধলাখ শিক্ষার্থীর সরকারি চাকরির বয়সসীমা শেষ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পিএসসি ৩৮তম বিসিএসেও জনপ্রশাসন থেকে রিকু্যইজেশন হাতে পাওয়ার ৩ মাস ২০ দিন পর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল। কারণ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৩৮তম বিসিএসের রিকু্যইজেশন পিএসসিতে পাঠিয়েছিল গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি। আর পিএসসি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে গত ২০ জুন। ফলে গত ৩৮তম বিসিএসেও প্রায় অর্ধলাখ শিক্ষার্থী কয়েক বছর ধরে পড়ালেখা করার পরও বয়স শেষ হওয়ার কারণে শেষ পর্যন্ত ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষা দিতে পারেননি। এবারও একই চিন্তা করছে পিএসসি।

বয়সসীমা শেষ হওয়ার উপক্রম হওয়া শিক্ষার্থীরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, কয়েক বছর ধরে বিসিএস পরীক্ষার জন্য দিন-রাত পড়াশুনা করছেন। এখন বিশেষ বিসিএসের কারণে সাধারণ বিসিএস পরীক্ষা বিলম্ব হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, কোনো ক্যাডারে শূন্য পদ বেশি থাকলে সে ক্যাডারে বেশি জনবল নিয়োগ দিতে পারে পিএসসি। এতে আলাদা পরীক্ষা নিয়ে সময় নষ্ট করার কোনো প্রয়োজন নেই। বরং এভাবে পরীক্ষা নিয়ে অন্য ক্যাডারের প্রার্থীদের বঞ্চিত করা হলে দেশের ক্ষতি। তাই বিশেষ পরীক্ষা বাদ দিয়ে সবার একসঙ্গে পরীক্ষা নেয়া হোক।

এ বিষয়ে সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, ৩৮তম ও বিশেষ বিসিএসের পাশাপাশি ৩৬তম বিসিএসের নন-ক্যাডারদের নিয়োগ ও ৩৭তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা নেয়ার কাজ করছে পিএসসি। এর মধ্যে সাধারণ বিসিএসের পরীক্ষা নেয়া কঠিন হবে। তবে জনপ্রশাসন থেকে রিকু্যইজেশন পেলে বিষয়টি কমিশন সভায় উপস্থাপন করা হবে। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী বিসিএসের তারিখ ও আবেদনের সময় নির্ধারণ করা হবে। তিনি বলেন, যে বিসিএসের রিকু্যইজেশন আগে পাবেন সেটাই আগে নিবেন। বিশেষ বিসিএসের কারণে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ড. সাদিক বলেন, বিসিএস পরীক্ষা হলো শুভঙ্করের খেলা। কেউ বাদ যাবে, কেউ আসবে। এতে কেউ খুশি হবে, কেউ অখুশি হবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান বলেন, সাধারণ বিসিএসের রিকু্যইজেশন তারা এ মাসেই পাঠিয়ে দিবেন। এ জন্য কোনো দেরি করছেন না। শিগগিরই এই বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। কারণ, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে একদিন দেরি করলেই কয়েক হাজার শিক্ষার্থী বয়সের কারণে বঞ্চিত হবেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (মাপ্র ও ননি) মো. সাহেদ আলী বলেন, পিএসসিতে কয়েকটি পরীক্ষার কার্যক্রম চলছে এবং ৩৯তম বিসিএস চিকিৎসকদের জন্য বিশেষ হিসেবে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তাই ৪০তম বিসিএসের রিকু্যইজেশন নিয়ে তারা খুব বেশি তাড়াহুড়া করছেন না। তবে এই বিসিএসের সব কার্যক্রম শেষ হয়ে গেছে। চলতি মাসেই এর ফাইল উপস্থাপন করা হবে।

জানা যায়, বিশেষ বিসিএসের পরীক্ষা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা, ২০১৪ এর একটি এককালীন সংশোধনী জারি করতে হবে। এজন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (বিধি) প্রধান করে এ সংক্রান্ত একটি কমিটিও গঠন করেছে। বিধিমালা-২০১৪ এর সংশোধনীর সার্বিক কাজ করছেন এই কমিটি। গত ১৮ জানুয়ারি প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় এই বিধিমালা সংশোধনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহে এটি পিএসসিতে পাঠানো হবে। পিএসসি অনুমোদন দিলে ভ্যাটিংয়ের জন্য পাঠানো হবে আইন মন্ত্রণালয়ে।

আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর আবার জনপ্রশাসনে আসবে। জনপ্রশাসনমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সচিব অনুমোদন দিলে পাঠানো হবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর প্রজ্ঞাপন জারির জন্য পাঠানো হবে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে। এরপর প্রজ্ঞাপন জারি হলেই চিকিৎসকদের বিশেষ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা যাবে। তবে এসব কাজ শেষ করতে কমপক্ষে প্রায় দুই মাস সময় লাগবে।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিধি) মো. আব্দুল হাকিম বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের সহকারী সার্জনের ৪৫৪২ ও সহকারী ডেন্টাল সার্জনের ২৫০টি শূন্যপদ পূরণের জন্য বিশেষ পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। এজন্য বিধিমালা, ২০১৪ এর সংশোধনীর কাজ চলছে। তিনি বলেন, এটি সরকারের সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকারের কাজ। এ জন্য কোনো দেরি করা হবে না। ফাইল আসার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থাপন করা হবে। যত দ্রুত সম্ভব এই বিধিমালা সংশোধন করা হবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও পিএসসি সূত্র জানিয়েছে, দুই হাজারের বেশি পদে ৪০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে প্রশাসন ক্যাডারে সহকারী কমিশনার পদ ২২৮টি, পুলিশ ক্যাডারে সহকারী পুলিশ সুপার ৭০টি, পররাষ্ট্র ক্যাডারে সহকারী সচিব ২৫টি, আনসার ক্যাডারে ১২, মৎস্য ক্যাডারে ৩৪৪, নিরীক্ষা ও হিসাব ক্যাডারে সহকারী মহা-হিসাবরক্ষক ১৫, শিক্ষা ক্যাডারে বিভিন্ন বিষয়ের প্রভাষক পদে প্রায় ১ হাজার এবং স্বাস্থ্য ক্যাডারের সহকারী সার্জন, সহকারী ডেন্টাল সার্জন, কৃষি ক্যাডারের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, সহকারী বন সংরক্ষক, ভেটেরিনারি সার্জন, সহকারী প্রকৌশলী, কর ক্যাডারের সহকারী করকমিশনার, তথ্য ক্যাডার, রেলওয়ে প্রকৌশল ক্যাডারের নির্বাহী প্রকৌশলী ও সমমানের পদ, ইকোনমিক ক্যাডারের সহকারী প্রধান, রেলওয়ে পরিবহন ও ডাক ক্যাডারে সহকারী পোস্টমাস্টার জেনারেল পদে ৫ শতাধিক কর্মকর্তা নিয়োগের কথা উল্লেখ থাকবে।

৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারির ফল ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে : ৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ফল তৈরির কাজ গত ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে সব উত্তরপত্র স্কেনিং শেষ হবে। এরপর রোল নম্বরের সঙ্গে উপস্থিতি খাতার স্বাক্ষর মিলানোসহ বিভিন্ন বিষয় যাচাই-বাছাই করবে পিএসসি। এ ক্ষেত্রে ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই বিসিএসের ফল প্রকাশ হতে পারে।

সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারির ফলাফল প্রকাশের টার্গেট নিয়ে তারা কাজ করছেন। আশা করেন এর মধ্যেই ফল প্রকাশ করা যাবে।