প্রেগন্যান্সিতেও মাথাভর্তি চুল ছিল। সবাই বলতো, “কি সুন্দর লাগছে তোমাকে দেখতে! গ্লো করছো! আর চুল দেখি আরও লম্বা হয়ে গিয়েছে!”

মেয়েটার জন্মের ছয় মাসের মাথায় আমার কাছে যা রয়ে গেলো তা হলো এক্সাক্টলি ঝাড়ুর আগার মতো পাতলা নিষ্প্রাণ চুল!

আমার চুল সারাজীবনই লম্বা, কাটতে মন চাইলেও মায়া লাগে, সারাজীবন নিজেকে আয়নার সামনে লম্বা চুলে দেখে অভ্যস্ত। আর এইদিকে বাচ্চাটাও ছোট। মাথায় যে কোন প্যাক বানিয়ে তারপর লাগিয়ে বসে থাকবো সেই উপায়ও নেই। শুক্রবারে ১টা ডিম আর টকদই মিক্স করে লাগানো শুরু করলাম, চুলের নিষ্প্রাণ ভাবটা দূর হলো, সফট হলো, শাইনি হলো, কিন্তু চুল পড়া কমলো না, আর না নতুন চুল গজানো স্টার্ট ও হলো না। এর মধ্যে চলে এলো শীতকাল, আর আমার মাথায় শুরু হলো খুশকির উপদ্রব! বাজলো তো বারোটা!

আমার স্কুলফ্রেন্ড জাপানে থাকে, ও দেশে এসেছে কয়েকদিন হলো। ওর বাসায় ওর সাথে দেখা করতে গেলাম, আড্ডা দিতে দিতে ও আমার চুল ধরে বলছে, “কিরে? তোর চুল কই?” হেয়ারফলের কথা বললাম ওকে। ও তখন বললো “কামিনোমোতো” ব্র্যান্ডের কথা। জাপানী এই ব্র্যান্ডটি ১৯০৮ সালে এস্ট্যাবলিশড এবং এর হেয়ারকেয়ার রেইঞ্জের জন্য বিখ্যাত। প্রাকৃতিক ঔষধি গুণাগুণ সমৃদ্ধ গাছপালা এবং সেই সাথে মডার্ন টেকনোলজি, এই দুইয়ের কম্বিনেশনেই তারা দারুণ সব প্রোডাক্ট তৈরি করে এবং গত ১০৯ বছর ধরে বাজারে টিকে আছে! আমাকে বসতে বলে ও রুমে গিয়ে হাতে করে তেলের বোতলটা নিয়ে ফেরত এলো। বললো, “তুই এইটা নিয়ে যা, কামিনোমোতো হেয়ার গ্রোথ এক্সিলারেটর। অল্পই আছে, ইউজ করে দেখ, আমি জাপানে ফেরত গিয়ে তোর জন্য আবার পাঠাবো যদি তোর কাজ হয় ওতে।”

মিথ্যে বলবো না, বেশ অবিশ্বাস নিয়েই ইউজ করা স্টার্ট করি তেলটা। প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে চুলের জট ছাড়িয়ে চুলের গোঁড়ায় বিলি কেটে অল্প পরিমাণে তেল নিয়ে চুলের গোঁড়ায় আস্তে আস্তে প্রায় ১০-১৫ মিনিট সময় নিয়ে ম্যাসাজ করি। তারপর ঘুমিয়ে যাই। পরদিন সকালে উঠে রিঠা ভেজানো পানিতে চুল ধুয়ে ফেলি। যেদিন বাইরে যাই, সেদিন The Body Shop Rainforest Shampoo দিয়ে মাথা ধুয়ে নিই। আর উইকেন্ডে দিনের বেলা গোসল করে চুল শুকিয়ে গেলে আবারো মাথার স্ক্যাল্পে তেলটা ম্যাসাজ করি। এই নিয়মে তেলটা ইউজ করি প্রায় এক মাস, এখন চুল আঁচড়ালে ২/৪ টার বেশি চুল পড়ে না। আর মাথায় অনেক বেবি হেয়ার, নতুন চুলও গজাচ্ছে। খুশকি নেই এক্কেবারেই।

অবশ্যই মনে রাখবেন, যদি আপনার চুল অলরেডি ময়লা থাকে, তাহলে তেল ইফেক্টিভলি কাজ করতে পারবে না। আমরা অনেকেই এই ভুলটা করি যে, মাথা অলরেডি ময়লাই থাকে, ভাবি যে শ্যাম্পুই যখন করতে হবে তেলটা দিয়েই করি, কিন্তু ময়লা থাকা অবস্থায় তেল ম্যাসাজ করি বলেই কিন্তু ইফেক্টিভনেস পায় না।

কামিনোমোতো তেলে যা যা আছে

রোজম্যারি এক্সট্রাক্ট – এতে থাকা অ্যান্টিসেপটিক উপাদানের জন্য এটা স্ক্যাল্পকে খুশকি এবং ইচিং থেকে রক্ষা করে, এবং ব্লাড সার্কুলেশন বৃদ্ধি করে চুল পড়া কমায় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
কুজিন এক্সট্রাক্ট – স্ক্যাল্পে কোষের ফাংশন ঠিক রাখতে সাহায্য করে এবং চুলের গোঁড়ায় রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে।
কানজো এক্সট্রাক্ট – ড্যান্ড্রাফ এবং ইচিং থেকে মুক্তি দেয়।
হিনোকি এক্সট্রাক্ট – চুলের গোড়া মজবুত করতে সাহায্য করে এবং খুশকিসহ যাবতীয় চুলকানি দূর করতে সাহায্য করে।
অ্যালানটয়েন – ড্যান্ড্রাফ এবং ইচিং থেকে মুক্তি দেয়।
ডি প্যানথোথেনাইল অ্যালকোহল – চুলের কোষের বৃদ্ধি ঘটায় এবং স্ক্যাল্পের পি এইচ লেভেল ঠিক রাখে।
ক্যামিজেন কে এবং ই – স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালনের বৃদ্ধি ঘটায় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
পাইরিডক্সাইন হাইড্রোক্লোরাইড – খুশকি হওয়া প্রতিরোধ করে এবং অতিরিক্ত সেবাম তৈরি হওয়া কমায়।
বিটা গ্লাইসেরহেটেনিক এসিড – খুশকি দূর করে, হেলদি স্ক্যাল্প বজায় রাখতে সহায়তা করে।
ক্যাপসিকাম টিংচার – স্ক্যাল্পে এবং চুলের গোঁড়ায় রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে চুলকে মজবুত করে তোলে এবং চুল পড়া কমিয়ে চুলের বৃদ্ধি ঘটায়।
নিওটাক্যানাল – স্ক্যাল্পে এবং চুলের গোঁড়ায় রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে চুলকে মজবুত করে তোলে এবং চুল পড়া কমিয়ে চুলের বৃদ্ধি ঘটায়। সেই সাথে খুশকি এবং ইচিং দূর করে।
প্যাকেজিং

১৫০ মি.লি.র প্যাকেজিং এ আসে তেলটি। কাঠ রঙের প্যাকেটের ভিতরে থাকে এই কালচে রঙের কাঁচের বোতলে আসে এই তেলটি। বোতলের মুখ খুললে ছোট ছিদ্র দিয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় তেল বের হয়।

তেলের কনসিস্টেন্সি, গন্ধ এবং স্ট্রাকচার

তেলের গন্ধটা কিছুটা আফটার শেইভের মতো, একটু কড়া মনে হতে পারে। কনসিসটেন্সি হালকা এবং নন স্টিকি। দেখতে স্বচ্ছ রঙের।


এইবার আমার ফ্রেন্ডের দেয়া সেই তেলের বোতল তো শেষ, সে জাপানে ফেরত ও চলে গিয়েছে। আমার আরেক ফ্রেন্ড বললো যমুনা ফিউচার পার্কে স্যাফায়ার নামের একটা শপ আছে, ঐখানে এই তেলটা পাওয়া যায়, পরে আমি ওখান থেকেই তেলটা কিনি। দাম নিয়েছিল ১,৮৫০/- টাকা। এই তেল শুধু স্ক্যাল্পে ব্যবহার করি আমি, চুলে না। একটা বোতলের দাম অনেক হলেও শুধু স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করার জন্য একটা বোতলে মোটামুটি তিন মাসের একটু বেশি সময় গিয়েছে। আমি এখন আমার তৃতীয় বোতলটা ব্যবহার করছি। এটা শেষ হলে আমি আবারো কিনবো। আর আমার চুল! দেখাচ্ছি দাঁড়ান!

এই ছিল আমার চুল পড়া বন্ধ হবার গল্প।

লিখেছেন – অর্থিয়া

মূল লেখা সাজগোজ ডট কম