বিগত দশকগুলোতে বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ড্রাস্টি ধুঁকতে থাকলেও সম্প্রতি আয়নাবাজি, শিকারী, অগ্নি সহ কিছু বহুল আলোচিত চলচ্চিত্রের হাত ধরে আবারো জেগে উঠছে বাংলা সিনেমা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ইন্টারনেট এবং ক্যাবল টিভির কল্যাণে হলিউডে বা বলিউডে কোন সিনেমা কত আয় করেছে, কোন সিনেমা সব রেকর্ড ভঙ্গ করে দিচ্ছে- এগুলার খোঁজখবর পাওয়া আমাদের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।

আজ আপনাদের জানাব বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যাবসাসফল ৭ বাংলা সিনোমা সম্পর্কে। তো চলুন জেনে নেয়া যাক:

বেদের মেয়ে জোসনা: বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যবসাসফল ছবি ‘বেদের মেয়ে জোসনা’। ১৯৮৯ সালে তোজাম্মেল হক বাবুল পরিচালিত ছবিটি মোট ১,২০০টি হলে মুক্তি পেয়েছিলো। ইলিয়াস কাঞ্চন এবং অঞ্জু ঘোষ অভিনীত এই সিনেমার ‘বেদের মেয়ে জোসনা আমায় কথা দিয়েছে’ শিরোনামের গানটি ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করে। ছবিটি এতই জনপ্রিয়তা পায় যে, পরবর্তীতে এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পুননির্মাণ করে মুক্তি দেওয়া হয়। মোট ২০ লাখ টাকা নির্মাণ ব্যয়ের বিপরীতে ছবিটি আয় করেছিলো মোট ২০ কোটি টাকা। ব্যাপক চাহিদায় ঢাকা সহ সারাদেশে মুক্তি দেওয়ার পর সিনেমাটি বেশ আলোড়ন তোলে দেশজুড়ে।

স্বপ্নের ঠিকানা: ‘বেদের মেয়ে জোসনা’র পর সালমান শাহ ৯২-৯৭ এই সময়ে অনেক হিট চলচ্চিত্র উপহার দিলেও এর রেকর্ড ভাঙতে পারেনি, তার অভিনীত স্বপ্নের ঠিকানা (১৯৯৫) সব চেয়ে কাছাকাছি গিয়ে ১৯ কোটি টাকা আয় করে।

সত্যের মৃত্যু নেই: সেরা ব্যবসাসফল তালিকায় তিন নাম্বারে থাকা চলচ্চিত্রটিও সালমান শাহ অভিনীত। ১৯৯৬ সালে ছটকু আহমেদ পরিচালিত ‘সত্যের মৃত্যু নেই’ সিনেমাটি। ছবিটির ‘চিঠি এলো জেলখানাতে অনেক দিনের পর’ গানটি সারাদেশজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। বাংলাদেশের সিনেমার ইতিহাসে ১০ কোটির বেশি আয় করা সিনেমার মধ্যে এটিই সর্বশেষ সিনেমা যেটি ১০ কোটির গন্ডি পেরোতে পেরেছিলো।

কেয়ামত থেকে কেয়ামত: সেরা দশের তালিকায় থাকা এটি সালমান শাহের তৃতীয় সিনেমা। এই সিনেমাটি মূলত আমির খান-জুহি চাওলা জুটির সুপারহিট হিন্দি ছবি ‘কেয়ামাত সে কেয়ামাত তাক’ এর অফিশিয়াল রিমেক। ১৯৯৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবির পরিচালক ছিলেন সোহানুর রহমান সোহান। এই সিনেমার মাধ্যমে সালমান শাহ এবং মৌসুমী চলচ্চিত্র জগতে তাদের যাত্রা শুরু করেন।

এই সিনেমাটি নাকি ইমনের (সালমান শাহ ) এতই প্রিয় ছিলো যে, মোট ২৬ বার সিনেমাটি দেখেছেন বলে পরিচালকে জানান তিনি। শেষ পর্যন্ত পরিচালক রাজি হয়ে যান এবং ইমনের নাম পরিবর্তন করে সালমান শাহ রাখা হয়। একই সিনেমার মাধ্যমে অভিষেক হয় আরেক জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আগুনের। ‘বাবা বলেছে ছেলে নাম করবে’, ‘ও আমার বন্ধু গো’, ‘এখন তো সময়’ শিরোনামের গানগুলো বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো সে সময়ে। এই সিনেমা মোট আয় করেছিলো ৮ কোটি ২০ লক্ষ টাকা।

মনপুরা: অশ্লীলতা এবং কুরুচিপূর্ণ সিনেমার আগ্রাসনে ডুবে যেতে বসেছিলো বাংলা চলচ্চিত্র জগত। ২০০৯ সালে সেই অন্ধকার যুগে আলোর দিশারী হয়েই এসেছিলো গিয়াসউদ্দিন সেলিম পরিচালিত ‘মনপুরা’ সিনেমাটি। মুক্তি পাওয়ার পর সাধারণ দর্শক থেকে শুরু করে সমালোচকদের কাছে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিলো মনপুরা। গ্রামবাংলার পটভূমিতে নির্মিত এই সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন টিভি অভিনয় শিল্পী ফারহানা মিলি এবং চঞ্চল চৌধুরী। সিনেমাটির সংগীতায়োজনের দায়িত্বে ছিলেন তরুণদের মাঝে জনপ্রিয় শিল্পী অর্ণব। ‘নিধুয়া পাথারে’, ‘যাও পাখি বলো তারে’, ‘আগে যদি জানতাম রে বন্ধু’ সহ এই সিনেমার গানগুলো ঠাঁই পেয়েছিলো মানুষের মুখে মুখে। মনপুরা ছবিটি ২০০৯ সালে শ্রেষ্ট চলচ্চিত্রসহ মোট ৫টি ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। ব্যবসাসফল এই চলচ্চিত্রের মোট আয় ছিলো ৮ কোটি টাকা।

স্বামী কেনো আসামী: মনোয়ার খোকন পরিচালিত স্বামী কেনো আসামী ছবিটি আছে এ তালিকার ৬ নম্বরে। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৯৭ সালে। ছবিটি মোট আয় করে ৭ কোটি টাকার বেশি।

কুলি: ১৯৯৭ সালে ১৬ মে ঈদুল ফিতরে মুক্তি পায় ‘কুলি’ সিনেমাটি। হিন্দি ছবি ‘কুলি নাম্বার ওয়ান’ এর ছায়া অবলম্বনে এই সিনেমাটি বানিয়েছিলেন মনতাজুর রহমান আকবর। ‘কুলি’র প্রধান কিছু চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ওমর সানী, পপি, হুমায়ুন ফরিদী এবং আমিন খান।
এই সিনেমার মাধ্যমেই চলচ্চিত্র জগতে যাত্রা শুরু করেছিলেন জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা সাদিকা পারভীন পপি। সিনেমাটির মোট আয় ছিলো ৭ কোটি টাকা।