সালোয়ার পোশাকটি সাধারণত মেয়েরাই বেশি ব্যবহার করে থাকে। যেকোনো সালোয়ারেরই দুটি অংশ থাকে। যেমনঃ

১. কোমরের অংশ যাকে কোমর পট্টি বলে।

২. কোমরের নিচের অংশ যাকে পায়ের অংশ বলে।

 

সালোয়ারের প্রতিটি পায়ে আবার ৩টি অংশ থাকে। একটি হলো মধ্য অংশ যার দুই পাশে কলির দুটি অংশ জোড়া দিতে হয়। সালোয়ারের পায়ের মধ্য অংশের দুই পাশে দুই টুকরা কাপড় থাকে। এই দুই টুকরা কাপড়কে কলি বলে। এখন আমরা ১৫-২০ বছর বয়সের একটি মেয়ে পরতে পারবে এমন একটি সালোয়ার কিভাবে তৈরি করতে হবে তা আলোচনা করবোঃ

 

প্রথমে বলা যাক ১৫-২০ বছর বয়সী মেয়ের সালোয়ারের আনুমানিক সাইজ কেমন হবে। এক্ষেত্রে-

 

ঝুল ৪০ ইঞ্চি

কোমর পট্টির লম্বা ৭ ইঞ্চি ও চওড়া ৪০ ইঞ্চি

কোমরের নিচের অংশের লম্বা ৩৩ ইঞ্চি ও চওড়া ২০ ইঞ্চি

কোমর- ৪০ ইঞ্চি

হাই- ১৫ ইঞ্চি

হিপ- ৪০ ইঞ্চি

মুহুরী- ১৮ ইঞ্চি


এখন কিভাবে সালোয়ারের জন্য নির্ধারিত কাপড়টি কাঁটার নিয়মগুলো জেনে নেই:

 

  • সালোয়ার বানানোর জন্য প্রথমে আড়াই হাত বহরের (ধরে নেই) ২ গজ কাপড় নিতে হবে। কাপড়টিকে লম্বালম্বিভাবে ৪ ভাঁজ করতে হবে।
  • ভাঁজ করা এই কাপড় থেকে প্রথমে কোমর পট্টির কাপড় কেটে নিতে হবে। এই কাপড়টি লম্বায় হবে ৭ ইঞ্চি। আর কোমর পট্টি ৭ ইঞ্চি রাখার জন্য কাপড় কাটতে হবে লম্বায় ঌ ইঞ্চি আর চওড়ায় ১০ ইঞ্চি। এখানে কোমর পট্টি হবে (৭ ইঞ্চি + কোমরের ভাঁজ ১১/২ ইঞ্চি + সেলাই ১/২ ইঞ্চি) = মোট ঌ ইঞ্চি।
  • এরপর এই কাপড় থেকেই সালোয়ারের ২ পায়ের মধ্য অংশের জন্য ২ টুকরা কাপড় কাটতে হবে। সালোয়ারের মধ্য অংশের লম্বা ৩৩ ইঞ্চি আর চওড়া ২০ ইঞ্চি হবে (সালোয়ারের মধ্য অংশের চওড়ার মাপ হবে হিপের মাপের অর্ধেক)।
  • কাপড়টির ৪ ভাঁজ থেকে একটি ভাঁজ খুলতে হবে। তাহলে কাপড়টি ২ ভাঁজ হবে। এবার কলির কাপড় কাটতে হবে। এক্ষেত্রে সালোয়ারের ২ পায়ের জন্য ৪ টুকরা লাগে। এই অংশের লম্বা হবে ৩৩ ইঞ্চি আর চওড়া হবে ২০ ইঞ্চি। চওড়ার মাপ নেওয়ার নিয়ম হচ্ছে হিপের মাপের অর্ধেক দিতে হবে।
  • এই কাপড়টি দুই ভাগ করে দাগ দিতে হবে। এমনভাবে দাগ দিতে হবে যেন কাপড়ের উপরের দিকে বামপাশে ১৮ ইঞ্চি ও ডানপাশে ২ ইঞ্চি থাকে। আর এই কাপড়ের নিচের দিকে ডানপাশে ১৮ ইঞ্চি থাকে আর বামপাশে ২ ইঞ্চি থাকে। এখন মাঝের দাগ থেকে এই কাপড়টিকে কোণাকুণিভাবে সমান দুই ভাঁজ করতে হবে।
  • এবার মাঝখানের ভাঁজ বরাবর কাপড় কেটে নিতে হবে। কাটার পর কাপড়টি তিন টুকরা হবে যেখানে এক টুকরা থাকবে দু ভাঁজ করা। ভাঁজ করা কাপড়টি পরে সমান দুই টুকরা করতে হবে।
  • কোণাকুণিভাবে কাটা কাপড়ের একটি অংশের উপর আরেকটি অংশ এমনভাবে রাখতে হবে যেন কাপড়ের চওড়ার পাশ (১৮ ইঞ্চি দাগ দেওয়া) চওড়ার দিকে থাকে। আর চিকন পাশ (২ ইঞ্চি দাগ দেওয়া) চিকন দিকে থাকে।
  • এই কাপড়ের যেদিকে ১৮ ইঞ্চি আছে সেদিক থেকে লম্বায় ৮ ইঞ্চি মেপে দাগ দিতে হবে।
  • এবার এই দাগের নিচের দিক থেকে (৮ ইঞ্চি দাগ দেওয়া দিক) সামান্য বাঁকা করে দাগ দিতে হবে। এই অংশটা হল সালোয়ারের হাই।
  • এবার এই দাগের উপর দিয়ে সামান্য বাঁকা করে কাটতে হবে। এরপর আগের দু ভাঁজ করা কাপড়ের টুকরাটি নিতে হবে। ভাঁজের উপর দিয়ে টুকরোটি কেটে কাপড় সমান করে দুই টুকরা করতে হবে। তাহলে কাটা অংশে মোট ৪টি টুকরা হবে।
     

এবার কিভাবে কাপড়টি সালোয়ারের মত করে সেলাই করতে হবে তা জানা দরকার। এজন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবেঃ

  • সালোয়ারের ২ পায়ের মধ্য অংশের জন্য ২ টুকরা কাপড় কাটা আছে। এখান থেকে ১ টুকরা কাপড় নিতে হবে।
  • এই কাপড়ের দুই দিকে কলির ২টি অংশ একে একে সেলাই করে জোড়া দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, জোড়া দেওয়ার সময় কলির চওড়ার দুই দিক থাকবে উপরের দিকে আর চিকন দুই দিক থাকবে নিচের দিকে।
  • এবার সালোয়ারের পায়ের মুহুরীর জন্য ১৮ ইঞ্চি লম্বা ও ১১/৪ ইঞ্চি চওড়া করে দুই টুকরা বকরম কেটে নিতে হবে।
  • এরপর অবশিষ্ট কাপড় থেকে ১৮ ইঞ্চি লম্বা ও ১১/৪ ইঞ্চি চওড়া করে কাপড় কেটে নিতে হবে। কাটা ঐ টুকরা কাপড় থেকে এক টুকরা কাপড় নিয়ে তার উপর এক টুকরা বকরম রাখতে হবে। তারপর তা সেলাই করে জোড়া দিতে হবে।
  • এবার সালোয়ারের পায়ের সোজা পাশের মুহুরীর দিকে সেলাই করা টুকরোটি এমনভাবে রাখতে হবে যেন বকরমটি উপরের দিকে থাকে। এবার সালোয়ারের পায়ের সাথে তা সেলাই করে জোড়া দিতে হবে।
  • সেলাইয়ের পর সালোয়ার উল্টিয়ে নিতে হবে। তাহলে বকরমটি পায়জামার পায়ের ভিতরের দিকে থাকবে। এবার সালোয়ারের পায়ে পছন্দমত নকশা করে সেলাই করতে হবে।
  • তারপর পায়ের মুহুরী থেকে হাই পর্যন্ত সেলাই করে জোড়া দিতে হবে। একইভাবে সালোয়ারের আরেকটি পা সেলাই করতে হবে।
  • এখন একটি পায়ের হাই -এর উপর আরেকটি পায়ের হাই-এর অংশ রাখতে হবে। এরপর তা সেলাই করে জোড়া দিতে হবে।
  • তারপর কোমরপট্টি ১১/২ ইঞ্চি ভাঁজ করে সেলাই করতে হবে। সেলাইয়ের পর এই অংশে ফিতা ঢুকানোর জন্য সামান্য একটু জায়গা ফাঁকা রাখতে হবে।
  • এবার সালোয়ারের পায়ের অংশের কোমরের দিকের কোমরপট্টির নিচের অংশ সেলাই করে জোড়া দিতে হবে। এখন সালোয়ারটি উল্টিয়ে দিলেই তা তৈরি হয়ে যাবে।

 

সুবিধার জন্য বয়স অনুযায়ী সালোয়ারের কয়েকটি সাইজের আদর্শ মাপ নিচে দেওয়া হলোঃ

 

বয়স

মোট ঝুল

কোমরের অংশ

কোমরের নিচের অংশ

হাই

মুহুরী

লম্বা

চওড়া

মধ্যের অংশ

কলির অংশ

লম্বা

চওড়া

লম্বা

চওড়া

২-৩

১৬''

৫''

২২''

১১''

ঌ''

১১''

১২''

৮''

ঌ''

৩-৪

১৭''

৫''

২৩''

১২''

ঌ''

১২''

১২''

ঌ''

ঌ''

৫-৬

২২''

৫''

২৪''

১৭''

১০''

১৭''

১৩''

১০''

১০''

৭-৮

২৬''

৬''

২৬''

১ঌ''

১০''

১ঌ''

১৫''

১১''

১০''

ঌ-১০

৩৪''

৬''

২৮''

২৮''

১১''

২৮''

১৭''

১২''

১১''

১১-১৪

৩৮''

৭''

৩০''

৩২''

১২''

৩২''

১ঌ''

১৫''

১২''-১৪''

১৫-২০

৪০''

৭''-৮''

৩২''-৪০''

৩৩''

২০''

৩৩''

২০''

২০''

১৫''-২০''

 

সবশেষে বলা যায়, এভাবে শার্ট, প্যান্ট, ব্লাউজ, শিশুদের জামা ইত্যাদি অনেক কিছু তৈরি করা যায়। তবে মনে রাখা দরকার, বয়স অনুযায়ী যেকোনো পোশাক তৈরি করার সময় কাপড় কাটার সাইজ বা পরিমাপও ভিন্ন হবে। যেমন- ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সের ছেলেদের হাফ হাতা শার্টের আনুমানিক সাইজ হবে নিচের মাপ অনুযায়ীঃ

  • কাপড়ের পরিমাণ ২ গজ
  • ঝুলের মাপ হবে- ৩০ ইঞ্চি
  • বুকের মাপ হবে- ১২ ইঞ্চি
  • কাঁধের মাপ হবে- ২০ ইঞ্চি
  • গলার লম্বার মাপ হবে- ১৪১/২ ইঞ্চি
  • গলার চওড়ার মাপ হেব- ৩১/২ ইঞ্চি
  • পকেটের মুখের মাপ হবে- ৫ ইঞ্চি
  • হাতের লম্বার মাপ হবে- ১১ ইঞ্চি
  • হাতের চওড়ার মাপ হবে- ১৬ ইঞ্চি

 সূত্র - ইনফোকোষ