শীতকাল মানেই বেশ উৎসব উৎসব একটা ব্যাপার। পার্টি, টুকটাক ঘুরতে যাওয়া, বিয়েবাড়ি লেগেই থাকে এই মৌসুমে। বাইরে বের না হয়ে উপায় নেই।

অন্যদিকে, সাজগোজের জন্যও একেবারে আদর্শ সময় এখন। রোদে বের হওয়ার চিন্তা নেই, সাজলে মেক-আপ ঘেমে মুছে যাওয়ার চিন্তা নেই, চুল ছেড়ে হাটলে ঘেমে নেয়ে ওঠার চিন্তা নেই। চিন্তা শুধু এক জায়গায়— রুক্ষতা। সে ত্বক হোক বা চুল, শীতকালীন রুক্ষতায়, স্বাভাবিক আদ্রর্তা বজায় রাখা খুব সহজ নয়। চুলের জন্য এই মৌসুম যেন এক শাস্তি!
এইসময় অনেকেই গরম পানি দিয়ে গোসল করেন যা মাথার ত্বককে আরও শুষ্ক করে দেয়। সরাসরি রোদের তাপও চুলের ক্ষতি করে। আবার মাথায় স্কার্ফ বা টুপি পরলে যদি ঘাম জমে, তা থেকেও হতে পারে চুলের বিভিন্ন সমস্যা। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত শ্যাম্পু বা বিভিন্ন হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে চুলের রুক্ষতা আরও বেড়ে যায়। সবমিলিয়ে কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়, তাই নিয়ে ভাবতে ভাবতেই চুলের দফারফা।

তাই রুক্ষতাকে দূরে ঠেলে, এই মৌসুমে হয়ে উঠুন মসৃণ চুলের অধিকারি। খুব বেশি কিছু করার প্রয়োজন নেই। কিছু দিকে নজর রাখলেই দূর হবে চুলের রুক্ষতা।

চুলের পরিচর্যা

সাড়া সপ্তাহের জন্য একটা রুটিন বানিয়ে নিন। খুব ঘন ঘন শ্যাম্পু করবেন না। বাইরে বের হলে যাতে চুলে বেশি ধূলো-ময়লা না জমে, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। সপ্তাহে তিনদিন শ্যাম্পু করলেই যথেষ্ট। চেষ্টা করুন হাল্কা গরম পানিতে চুল ধোয়ার। ময়েশ্চারাইজ়ারযুক্ত শ্যাম্পু এবং সঙ্গে অবশ্যই ক্রিম কন্ডিশনার বেছে নিন।

শ্যাম্পু করার সময় কয়েক ফোঁটা তেল মিশিয়ে নিতে পারেন। এতে চুল সিল্কি হবে, রুক্ষতাও কম হবে। শীত হোক বা গ্রীষ্ম, তেল মাখা অবস্থায় রাস্তায় বের না হওয়াই ভালো। এতে ধূলো জমবে চুলে এবং বারবার শ্যাম্পু করতে গিয়ে চুলের স্বাভাবিক আদ্রর্তা নষ্ট হয়ে যাবে।

রাতে ঘুমানোর আগে সামান্য অলিভ অয়েল হাতের তালুতে নিয়ে ঘষুন। এবার তা পুরো চুলে এবং মাথার ত্বকে হাল্কা হাতে ম্যাসাজ করুন। এছাড়া সপ্তাহে একদিন রাতে তেল গরম করে ম্যাসাজ করতে পারেন।

সপ্তাহে অন্তত একদিন ডিপ কন্ডিশনিং মাস্ক বা কোনও ময়েশ্চারাইজ়িং হেয়ার প্যাক ব্যবহার করুন। চুলের ধরন বুঝে মাস্ক বা প্যাক ব্যবহার করতে পারেন।

একটা পাকা কলা চটকে তাতে এক চা-চামচ নারকেল তেল, এক চা-চামচ অলিভ অয়েল এবং এক টেবলচামচ মধু মিশিয়ে চুলে লাগান। ৫-১০ মিনিট রেখে চুল ধুয়ে নিন। শ্যাম্পু করবেন না। এবার বড় দাঁড়ার চিরুণি দিয়ে একবার চুল আচড়ে ভাল করে ধুয়ে নিন।

খুশকির সমস্যা থেকে বাঁচতে দু’-তিন টেবল চামচ অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে এক টেবল চামচ নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল এবং কয়েক ফোঁটা পাতিলেবুর রস মিশিয়ে চুলে এবং মাথার ত্বকে লাগাতে পারেন। ৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে নিন।

টিপস

চুলের যত্নে কিছু ছোট ছোট বিষয়ও মানতে হবে নিয়মিত:

১.যতই শীতকালের মিষ্টি রোদ ভালবাসুন না কেন, চুলের কথা মাথায় রেখে তা থেকে কিছুটা দূরে থাকুন। দিনেরবেলা বের হলে মোটা স্কার্ফ নয় বরং হাল্কা স্কার্ফ ব্যবহার করুন যা সরাসরি রোদ থেকে চুলকে বাঁচাবে।

২.যারা চুলে নানা রকম রং ব্যবহার করেন, তারা এই মৌসুমে তা থেকে বিরত থাকুন। কেননা, হেয়ার কালারে থাকা বিভিন্ন কেমিক্যাল চুলকে রুক্ষ করতে পারে। হেনা চুলের জন্য উপকারী হলেও তা আদ্রর্তা টেনে নিয়ে চুলকে শুষ্ক করে দেয়। তাই শীতকালে হেনা ব্যবহার করাও ঠিক নয়।

৩.শীতের শুরুতেই একবার চুল ট্রিম (চুলের আগা ছাটা) করে নিন।

৪.সপ্তাহে দু’-তিনবার ফিশ অয়েল ক্যাপসুল বা ভিটামিন-ই ক্যাপসুল খেতে পারেন। এতে চুল ভাল থাকবে।