নাইট ক্রিম ! আমাদের ডেইলি ত্বক চর্চায় সত্যিই কি এই ক্রিমের প্রয়োজন আছে ? নাকি নাইট ক্রিম শুধুই একটি বারতি বিউটি প্রোডাক্ট ? আমি বিগত দুই দশক ধরে বিভিন্ন ধরনের ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করে আছি। তবে আমার জীবনে নাইট ক্রিমের প্রবেশ ঘটেছে মাত্র তিন কি চার বছর হল। এখানেও একটা কথা বলার আছে, আমি জানি না আপনাদেরও এই রকমটি হয় কি না, তবে আমি বেশির ভাগ সময়ই নাইট ক্রিম লাগাতে ভুলে যেতাম। যাই হোক, অভ্যাসটির আমি পরিবর্তন করছে পেরেছি। দু মাসের মতো হল আমি এখন রোজ নাইট ক্রিম লাগিয়ে শুতে যাই।


এখন আপনাদের মনে একটা প্রশ্ন আসতে পারে, এমন কি হল, যে আমার নাইট ক্রিম লাগানোর কথা মনে থাকতো না সেই আমি এখন রোজ নাইট ক্রমি ব্যবহার করছি। হ্যাঁ আজ আমি আপনাদের সঙ্গে নাইট ক্রিম নিয়ে কিছু অভিজ্ঞতা সেয়ার করবো। এই কিছু দিনের ব্যবহারের পর যা আমি বুঝতে পেরেছি।

আমরা যদি উদ্দেশ্যে দিক থেকে ভাবি, তাহলে নাইট ক্রিমকে দু টি ভাবে ভাগ করা যেতে পারে।

প্রথমত এন্টি এজিং নাইট ক্রিম, নিশ্চয় বুঝতে পারছেন এই ধরনের নাইট ক্রিম কেন ব্যবহার করা হয়। বয়সের ছাপ যেমন চামড়া কুঁচকে যাওয়া, ত্বকে কালো ছোপ, বলিরেখা ইত্যাদি দূর করার জন্য এই ধরনের নাইট ক্রিমের ব্যবহার হয়ে থাকে। এন্টি এজিং নাইট ক্রিমে রেটিনোল, গ্লাইকোলিক অ্যাসিড, স্যালিসিলিক অ্যাসিড এবং রেটিনেল অ্যাসেট এর মতো উপাদান থাকে। এই সমস্ত উপাদান আপনার পুরনো ত্বকে সরিয়ে নতুন ত্বককে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এমনও বলা যেতে পারে যে, এই উপাদানগুলি সারা রাত ধরে ত্বকের কোষগুলিকে উদ্দীপিত করে এবং এর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটায়। এর ফলে বয়স বাড়ার যে সমস্ত লক্ষণ রয়েছে তা ধীরে ধীতে ত্বক থেকে হ্রাস পেতে থাকে। এই সমস্ত উপাদানগুলি ত্বকের সংবেদনশীলতা অনেক বেশি বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই সূর্যের এক্সপোজার এড়ানো উচিত।নয় তো UV রেগুলিতে আপনার ত্বক আরও বেশি প্রভাবিত হবে। তাই এই ধরনের প্রোডাক্ট রাতেই ব্যবহার করা উচিৎ।

দ্বিতীয়ত ডীপ ময়শ্চারাইজার, আমরা দিনের বেলা বা অন্য সময় যে ধরনের ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করি তার থেকেও অনেক বেশি হাইড্রটিং এবং উচ্চ মাত্রায় ময়শ্চারাইজিং উপাদান থাকে নাইট ক্রিমে।

রাতেই ত্বককে বেশি আর্দ্রতা রাখা দরকার, এর পেছেনে কোনও প্রকৃত কারণ নেই। তবে হ্যাঁ সারা রাত ধরে নাইট ক্রিমের উপাদানগুলি তার কাজ বেশি সময় ধরে করতে পারবে এবং ক্রিমটি ত্বকের গভীরে প্রবেশ করতে পারবে বলেই নাইট ক্রিমের ব্যবহার হয়ে থাকে।

আপনার ত্বকের চাহিদা অনুসারে উপরের দু'টির মধ্যে থেকে যে কোন প্রকারের একটি নাইট ক্রিম নির্বাচন করতে পারে।


আমি কে নাইট ক্রিম ব্যবহার করছি বা আপনারা কেন নাইট ক্রিম ব্যবহার করবেন ?

১। মা হওয়ার আগে পর্যন্ত আমার ত্বকে কোন প্রকারের সমস্যা ছিল না। বিশেষ করে বয়সের ছাপ পরার মতো সমস্যা তো একেবারেই ছিল না। আমি নিয়মিত ক্লিনিং, টোনিং, ময়শ্চারাইজিং এই স্টেপগুলি অনুসরণ করে এসেছি। তাই আমার কোন প্রকারের ভারি ক্রিমের প্রয়োজন পরে নি। কিন্তু মা হওয়ার পরেই এক লাফে বয়স যেন ৫ বছর বেড়ে গেছে। অনিদ্রা, ক্লান্তিভাব সব কিছুর প্রভাব পরে আমার ত্বকের উপরে। তার দেরী না করেই আমি এন্টি এজিং নাইট ক্রিম ব্যবহার করতে শুরু করি। যদিও প্রথম দিকে আমি নিয়মিত ব্যবহার করতাম না। আসলে মনেও থাকতো না।

এটা একটা কারন যে সময় থাকতে বুঝতে পারা, ত্বক কি চাইছে।

২। আমার ছেলের বয়স এখন ১৬ মাস। সারা দিন তার পেছনে ছুটতে ছুটতে আমি ত্বকের যত্ন নেওয়ার একদম সময় পাই না আর সুযোগ নেই। রাতে সে যখন ঘুমায়, সেই সময়টাই শুধু আমার। সারা দিনে ত্বকের যে ক্ষতি হল সেই ক্ষতি পূরণের জন্যই আমি এখন নিয়মিত নাইট ক্রিম ব্যবহার করছি।

৩। এন্টি এজিং নাইট ক্রিম সাধারণত অন্যান্য ময়শ্চারাইজারের তুলনায় একটু ভারি হয়ে থাকে। এটি ত্বককে ডীপ ময়শ্চারাইজ করে। আমি আগেই বলেছি, সারা দিনে আমি ক্রিম বা ময়শ্চারাইজা লাগানোর টাইম পাই না। তাই এন্টি এজিং নাইট ক্রিম আমার এখন ভরসা। এটি একদিকে যেমন ত্বককে ডীপ হাইড্রেটেট রাখতে সাহায্য করে, তেমনি এর এন্টি এজিং উপাদান গুলি ত্বকে বয়স বাড়ার হাত থেকে রক্ষা করে।

৪। নাইট ক্রিম রাতে ব্যবহারের আরেকটি কারন হল এটি ত্বকে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টার জন্য রাখা যেতে পারে। তবে এটা নির্ভর করে আপনি কতক্ষণ ঘুমাচ্ছেন। আমি যেমন ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা ঘুমাই। এই ৫ থেকে ৬ ঘণ্টার জন্য আমার ত্বকে ক্রিমটি তার বেস্ট কাজটি করবে এবং এর জন্য আমাকে কোন পরিশ্রমও করতে হবে না। আমিও আরাম করতে পারলাম অন্য দিকে আমার ত্বকের রিপেয়ার হল।

আশা করি বোঝা গেল, কেন আমি নাইট ক্রিম নিয়ে এখন এতো সিরিয়াস।


নাইট ক্রিম কি ভাবে ব্যবহার করবেন ?

খুব সহজ, ক্লিজিং ও টোনিং এর পর্বটা প্রথমেই সেরে সেরে ফেলতে হবে। মুখ শুকিয়ে নিয়ে আপনার প্রয়োজন মতো ক্রিম হাতে নিয়ে মুখে লাগান। নাইট ক্রিম সাধারণত ভারি হয়। তাই আঙুল দিয়ে হালকা মাসাজ করুন। মাসাজের স্ট্রোক যেন ঊর্ধ্বগামী হয়। আপনার চোখের আশপাশ এড়িয়ে চলুন। গলা ও ঘাড়ে ক্রিম লাগাতে ভুলবেন না। ঘুমোতে যাওয়ার ২০ থেকে ২৫ মিনিট আগে নাইট ক্রিম লাগানো উচিত।

ঠিক কোন বয়স থেকে নাইট ক্রিম ব্যবহার করা উচিৎ ?

আপনি যদি ত্বকের সঠিকভাবে যত্ন নিয়ে থাকেন এবং নিয়ম করে প্রতিদিন ভালোভাবে ক্লিজিং টোনিং ময়েশ্চারাইজিং পরপর মেনে করেন তাহলে আপনার ত্বকে এ ধরনের সমস্যা হবে না। অর্থাৎ বয়সের ছাপ বা আর্দ্রতার অভাবের মতো সমস্যার সম্মুখীন আপনাকে হতে হবে না। তাই যতো দিন পারা যাই আলাদা করে নাইট ক্রিম ব্যবহার করা থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখুন।

যখনই মনে হচ্ছে ত্বকের সঠিক যত্ন আপনি নিতে পারছেন না, সারা দিন এতো ব্যস্ত যে নিজের জন্য সময়টুকু নেই, তখনই আপনি নাইট ক্রিমের কথা ভাবতে পারেন।

এছাড়াও যারা সারা দিন এয়ার কন্ডিশন ঘরে কাজ করছেন, বাড়ি ফিরে মনে হচ্ছে, ত্বকের জন্য একটু বাড়তি আর্দ্রতার দরকার আছে, অথবা আপনি রাতে এয়ার কন্ডিশন ঘরে শুতে যাচ্ছেন, সেই ক্ষেত্রে আপনি নাইট ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।

তবে আমি ব্যক্তিগত ভাবে বলবো ২৫/২৬ বছরের আগে নাইট ক্রিমের কোন প্রয়োজন নেই। আর যাদের আমার মতো মনে হচ্ছে যে, না এখন থেকে নাইট ক্রিম ব্যবহারের প্রয়োজন আছে, তাহলে তাদের জন্য আমার সাজেশন থাকবে, আগে দেখে নিন আপনার ত্বকে ঠিক কি ধরনের নাইট ক্রিম প্রয়োজন। এন্টি এজিং নাইট ক্রিম নাকি ডীপ ময়শ্চারাইজিং নাইট ক্রিম।


শেষে একটা কথাই বলবো, নাইট ক্রিম নিজের প্রয়োজন বুঝে ব্যবহার করুন। যখনই কোন নাইট ক্রিম বা অন্যান্য কোন ক্রিম বা বিউটি প্রোডাক্ট কিনবেন, সব সময় ভাল কোম্পানীর বা ব্যান্ডের নাম দেখে কেনার চেষ্টা করবেন। কেনার আগে জিনিসটির অবশ্যই একবার রিভিউ দেখে নেবেন। স্রোতের সঙ্গে গাঁ ভাসিয়ে বা কারও অন্ধ অনুকরণ করেও বিউটি প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে যাবেন না।