চোখের নিচে সাধারণত নীলচে এবং বাদামি দুই ধরনের দাগ পড়তে পারে। বাদামী দাগ সাধারণত তৈরি হয় জিনগত কারনেই। তবে চোখ বেশি কচলালে বা রোদে পুড়েও হতে পারে এমন অবস্থা। এ অস্বস্তি এড়াতে এমন ক্রিম ব্যবহার করুন যাতে সয়া বা সাইট্রাস আছে। এগুলো ত্বক উজ্জ্বল হতে সাহায্য করে। চোখের নিচের কালি দূর করার জন্য বিভিন্ন ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে।

তবে এসব ক্রিম ব্যবহারে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও হতে পারে। ক্রিম ব্যবহারের আগেই তা খেয়াল রাখতে হবে। ক্রিম ব্যবহার বা অন্য কোনো ধরনের চিকিৎসা নিলেই যে চোখের নিচের কালি পুরোপুরি চলে যাবে, তা নয়। তবে তা অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। সানস্ক্রিন তো ব্যবহার করতে হবে এবং চোখ কচলানো চিরতরে বন্ধ করতে হবে। চোখের নিচের দাগ যদি নীলচে হয় তবে দুশ্চিন্তা করবেন না। কৈশিক জালিকায় রক্ত প্রবাহের কারনেই এমন দেখায়।

বেশিরভাগ সময়ই আমরা আমাদের চোখের নিচের কালি ঢাকার জন্য ফাউণ্ডেশন কিনে নিয়ে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করে থাকি , কিন্তু কখনোও কি আমরা আমাদের চোখের নিচের কালি কেন জমে তার কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করে থাকি ? আমাদের চোখ এর নিচে যে ত্বক অনেক বেশি

স্পর্শকাতর এবং এর নিচে অনেক ছোট ছোট রক্তনালী বয়ে গেছে যারা আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে এবং চোখের নিচের ত্বক কালো হতে থাকে। চোখের নিচের অংশে ফ্লুইড জমা হতে থাকার কারণে চোখের নিচটা ফুলে যেতে থাকে এবং চোখের নিচে কালি পড়ে। এর পিছনে অনেকগুলো কারণ আছে।

আপনি জেনে অবাক হবেন যে কেবল ঘুম না হওয়া, কম্পিউটার এর মনিটর এর সামনে বসে থাকাটাই চোখ এর নিচে কালি পড়া কিংবা চোখ ফুলে যাওয়াটাই প্রাথমিক কারণ নয়। বংশগত সমস্যা এবং এলার্জি, মূত্রগ্রন্থিতে সমস্যা কিংবা রক্ত চলাচলে সমস্যা থাকার কারণেও চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে। মূলত চোখের নিচের কালি হওয়ার পিছনে তিনটি কারণ থাকে।

*মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা

চোখ এর নিচে কালি পড়ার জন্য খুব প্রচলিত একটি কারণ সেটি হলো কোন কারণে খুব বেশি চাপে থাকা বা কোন ব্যাপার নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা।

*পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া

কেউ যদি দিনে কমপক্ষে আট ঘণ্টা না ঘুমাতে পারে , তবে তার চোখ এর নিচে কালি পড়ার সম্ভাবনা থাকে।৮ ঘন্টা সম্ভব না হলে অন্ত ছয় ঘন্টা ঘুমানো উচিত।

*পানিশূন্যতা

শরীর থেকে অনেক বেশি মাত্রায় পানি বেরিয়ে গেলে ত্বক শুষ্ক এবং শরীর দূর্বল হয়ে যায়। এর ফলে চোখের নিচে কালি পড়ে। এখন গরম পরে গেছে, শরীর থেকে তাই ঘামও বের হয় প্রচুর। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেয়ে এর মাত্রাটা ব্যালেন্স করতে হবে।

আসুন দেখে কিভাবে আমরা ঘরে বসেই প্রাকৃতিক উপায়ে চোখের নিচের কালি দূর করতে পারি ।

১। শসা:

সজীব শসা স্লাইস করে কেটে আধ ঘণ্টা ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করুন। দশ মিনিট চোখের উপর রেখে পরিস্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দিনে অন্তত দুবার, একটানা সাত দিন। আবার শসা আর লেবুর রস সমান পরিমাণ মিশিয়ে মাখতে পারেন ত্বকে। দিনে একবার করে সাত দিন মাখুন। স্বাভাবিক রং ফিরে আসবে।

২। কাঁচা আলু:

কাঁচা আলু ঠাণ্ডা করে ব্লেন্ডারে পিষে পেস্ট তৈরি করুন। পেস্ট দাগের উপর মেখে ১০-১৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আলু পেস্ট করতে ঝামেলা মনে হলে শসার মত স্লাইস করেও ব্যবহার করতে পারেন। সপ্তাহব্যাপী দিনে ১-২ বার ব্যবহার করলেই চলবে।

৩। গোলাপ জল:

প্রাকৃতিক ভাবেই গোলাপ জল স্কিন টোনার হিসেবে কাজ করে। ছোট্ট পরিস্কার কাপড়ের টুকরা বা আই প্যাড গোলাপ জলে ভিজিয়ে রাখুন কয়েক মিনিট। পুরো ভিজলে চোখ বন্ধ করে চোখের পাতার উপর রেখে দিন ১০-১৫ মিনিট। দিনে একবার করে ৭-১০ দিন ব্যবহার করলে চোখের স্বাভাবিক রং ফেরত আসবে।

৪। টমেটো:

টমেটো চোখের নীচের কালো দাগ দূর করতে অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এর সাথে সাথে আপনার ত্বককে করবে কোমল লাবন্যময়। ১ চা চামচ টমেটোর রস, ১ চাচামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এটি চোখের নিচে লাগান। ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি দিনে ২ বার করা চেষ্টা করুন। টমেটোর রস , লেবুর রস আর সাথে পুদিনা পাতা যোগ করে তৈরি করে নিতে পারেন দারুন একটি হেলথ ড্রিংক। এটি আপনার চোখের নীচের কালি ভিতর থেকে দূর করতে সাহায্য করবে।

৫। আমন্ড ওয়েল:

স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য আমন্ড ওয়েলের খ্যাতি আছে। প্রতি রাতে ঘুমুতে যাওয়ার আগে চোখের নিচে হালকা আমন্ড ওয়েল মেখে শুয়ে পড়ুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কালো দাগ বিদায় হওয়ার আগ পর্যন্ত এ পদ্ধতি চালু রাখুন। ধন্যবাদ

৬। আলুর পেষ্ট

১/২ টি আলু পেষ্ট করে রস বের করে নিন। ছোট ছোট তুলার বল করে সেটি আলুর রসের মধ্যে ভিজিয়ে নিন। এখন চোখ বন্ধ করুন এবং তুলাটি চোখের ওপর রাখেন। তুলা এমনভাবে রাখবেন যাতে চোখের নিচের কালি পড়া স্থানটি ঢেকে যায়। এইভাবে ১০/ ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

৭। ঠাণ্ডা চায়ের ব্যাগ

চায়ের ব্যাগ দিয়ে ও চোখের নিচে কালি দূর করা সম্ভব। সবুজ বা কালো চায়ের ব্যাগ ঠান্ডা করে নিন। আপনার চোখের ওপর ঠান্ডা চায়ের ব্যাগটি রাখুন। ১০/ ১৫ মিনিট পর চায়ের ব্যাগ সরিয়ে ফেলুন। দিনে ২/৩ বার করার চেষ্টা করুন।

৮। ঠান্ডা দুধ

প্রতিদিন ঠাণ্ডা দুধ ব্যবহারে আপানার চোখের নীচের কালো দাগ দূর করে থাকে। তুলার বল ঠাণ্ডা দুধে ভিজিয়ে নিন। ভেজা তুলার বল আপানার চোখে ওপর রাখুন। ১০/১৫ মিনিট পর তুলা সরিয়ে নিন। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি প্রতিদিন করাতে আপানার চোখের নীচের কালির দাগ করবে।

৯। কমলার রস

কমলার রস চোখের কালি দূর করার অন্যতম একটি উপায়। কমলার রসের সাথে কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন মিশিয়ে নিন। এটি চোখের নিচে লাগান। এটি শুধু চোখের নীচের কালি দূর করবে না আপনার চোখের গ্লো বাড়িয়ে দিবে বহুগুণ।

১০। দুধ ও কাজু বাদাম মিশ্রণ

দুধের সাথে কাজু বাদাম বাটা মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন । এরপর পেস্টটি চোখের চারপাশে লাগান । এতে অনেক ভালো ফল পাওয়া যায় ।

১১। কদম ফুলের পাপড়ি

কদম ফুলের পাপড়ি বেটে ৫ থেকে ১০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এতে চোখের নিচের কালো দাগ অনেকটাই দূর হবে। এটি না পেলে পুদিনাপাতা বা নিমপাতাও ব্যবহার করতে পারেন।

১২। চামচ থেরাপি

বাসার রেফ্রিজারেটরে ২টি চা চামচ রেখে ঠান্ডা করুন । চামচ যখন ঠাণ্ডা হয়ে যাবে ,তখন বিছানায় শুয়ে চোখের উপর চামচ দুইটি রাখুন যতক্ষণ না এটি সাধারন তাপমাত্রায় আসে ।এটি একই সাথে চোখের ক্লান্তি ও চোখের নিচের কালি দূর করে থাকে।

১৩। আমলকী তেল

চোখের নিচে যেসব যায়গায় কালি পড়ে গিয়েছে , সে সব জায়গায় আমলকী তেল লাগিয়ে দিয়ে ঘুমাতে যেতে পারেন। তাহলে চোখের নিচের কালি কমে যাবে বলে আশা করা যায়।

দূর করুন চোখের নিচের কালি !এর জন্য আপনাকে কতগুলো নিয়ম মেনে চলতে হবে তাহলে আর এই সমস্যা সহজে কাছে আসবে না :-

১৪। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে যেদি ঠান্ডা পানির জাপ্টা দেয়া যায় তবে বেশ উপকার পাওয়া যায় । অনেক উপকার পাওয়া যায় এবং এটি চোখের নিচের ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে।

১৫। চোখের নীচে কালোদাগ দুর করতে প্রচুর পরিমানে পানি পান করা , সবুজ শাক-সবজি গ্রহন এবং নিয়ম মাফিক ঘুম এর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে ও মানসিক চাপ কমাতে হবে৷

১৬। মাল্টিভিটামিন খেলে, ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম খাওয়াও চোখের নিচে কালি দূর করতে সাহায্য করে।

১৭। রক্ত চলাচল বাড়াতে হলে লবন এবং ধূমপান ছেড়ে দিতে হবে ।

১৮। যদি আপনার চোখ কচলানোর অভ্যাস থাকে, তাহলে সেটি বাদ দিন। কেননা এটি আপনার ত্বকের নিচের রক্ত কণাগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

১৯। প্রতিদিন ঘুমানোর আগে অবশ্যই মুখ পরিষ্কার করবেন।

২০। হরমোনজনিত সমস্যা বা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যার কারণে চোখের নিচে কালো দাগ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
তবে বংশানুক্রমিকভাবে চোখের নিচে কালি হলে, তা দূর করার জন্য তেমন কিছুই করার থাকে না।

২১। চোখের নিচের কালি প্রতিরোধে রোদে যাওয়ার সময় ছাতা ব্যবহার করুন।

২২। সানব্লকও ব্যবহার করতে পারেন।

২৩। যেকোনো ধরনের মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন।

২৪। প্রচুর পানি ও দুধ পান করুন।