আমাদের প্রায়শই ঘাড় বা পিঠে ব্যাথা হয়ে থাকে। সারভিকাল স্পন্ডাইলোসিস (cervical spondylosis) হলে ঘাড়ে যেমন ব্যথা হয় তেমনি মাথার নিম্নাংশেও ব্যথা হয়ে থাকে। মাঝে মাঝে এই ব্যথা দুই কাধ, বাহু, হাত এমন কি আঙ্গুলেও ছড়িয়ে পরতে পারে। কারো কারো আবার মাথা ব্যথা/ পিঠের পিছনে ব্যথা, হাত/বাহু দুর্বল বা অবশ হয়ে আসা বা চিনচিনে ব্যথা করা এসব উপসর্গ ও দেখা দিতে পারে।

এই ঘাড়ে ব্যাথার জন্য কয়েকটি ব্যায়ামই যথেষ্ট। তবে কশেরুকার মাংশপেশীতে টান পড়া, হাড় ক্ষয়ে যাওয়া বা বৃদ্ধি পাওয়া, অস্থিসন্ধিতে (joint) রোগ হওয়া, লিগামেন্ট এ টান পরা ইত্যাদি নানাবিধ কারনে ঘাড় ব্যাথা হতে পারে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

এবার আসুন এসব ব্যাথা দূর করার ব্যায়ামগুলো জেনে নেই।

প্রথম ধাপ- ব্যথার জায়গাটি চিহ্নিত করুন। ডান দিকে বা পিঠের ওপরের দিকে ব্যথা হলে নিজের ডান হাত সেখানে রাখুন। বাম দিকে ব্যথা হলে, হাত রাখুন সে দিকেই।

দ্বিতীয় ধাপ- ব্যথার জায়গায় আঙুল দিয়ে চাপ দিন। মনে রাখবেন, চাপ দেওয়ার সময়ে ব্যথা হতে পারে, তবে সেটি এমন ব্যথা যা আপনি সহ্য করতে পারবেন। কিন্তু হাত পৌঁছতে পারে না, এমন কোনও জায়গায় ব্যথা হলে টেনিস বল বা এ ধরনের অন্য কোনও বস্তু সেই কাজ করে দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ান। ব্যথায় জায়গায় সেই টেনিস বলটি রাখুন।

তৃতীয় ধাপ- টানের বিপরীতে আড়াআড়ি ভাবে ঘাড় বাঁকান, যেন থুতনি নিজের বাহুমূলের সঙ্গে মেশাতে চাইছেন।

চতুর্থ ধাপ- এই তিনটি স্টেপই ২০ বার করুন। এর পর নিজের ঘাড় এবং পিঠকে স্ট্রেচ করুন। এখনই ঘুম থেকে উঠলেন গোছের স্ট্রেচ করতে হবে। এতেই আপনার পেশির টান ছেড়ে যাবে।

নিশ্চয়ই মনে প্রশ্ন আসে কেন এমন ব্যথা হয়? আপনার ঘাড়খানা কষ্টকরে যেই হাড়গুলো শক্ত করে রাখে তারা হলো কশেরুকা (cervical vertebra)এবং তাদের মাংশপেশী। আর এই কশেরুকাদের মাঝের স্বাভাবিক ফাক গুলো যখন কমে আসে তখন ই শুরু হয় ঘাড়ে ব্যথা। কারণ এই ফাকগুলোদিয়ে বের হয় আপনার স্নায়ু (nerve), আর হাড়ের ফাক কমেগেলে এই নার্ভের উপড় চাপ পরে এবং এইসকল নার্ভ যেসকল জায়গায় অনুভুতি বহন করে তারা সকলে বেদনার্ত হয়ে উঠে।

পুরুষের তুলনায় মহিলারা এই রোগে অনেক বেশী আক্রান্ত হয়। যে সকল পেশায় দীর্ঘক্ষন মাথা নীচু করে কাজকরতে হয় (স্বর্ণকার, ড্রাইভার, কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ, সেলাইকারি ইত্যাদি) বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে তারাই এই রোগের ভুক্তভোগী।

এ রোগ হলে অবশ্যই চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হওয়া উচিত। তিনি পরীক্ষা করে সহজেই এই রোগটি নিশ্চিত করতে পারেন। তবে রোগের বিস্তৃতি এবং কারণ নির্ণয়ে ঘাড়ের এক্সরে এবং অনেক সময় এম,আর,আই (MRI) পরীক্ষা করার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। ঘাড়ের বিশ্রাম নেয়া এ রোগের প্রধান চিকিৎসা, সেই সাথে ব্যথার অসুধ (NSAID) সেবন, গরম সেক নেয়া, কখনো কখনো গলায় শক্ত কলার (cervical collar) ব্যাবহার এবং সেই সাথে ফিজিওথেরাপি (physiotherapy)নিলে এ রোগ থেকে নিস্তার মেলে। তবে অনেক সময় ব্যথার তীব্রতা বেশি হলে এবং অসুধে তা নিয়ন্ত্রন করা না গেলে সার্জারি বা অপারেশন ই এর একমাত্র চিকিৎসা হয়ে দাঁড়ায়।এ জন্য শুরুতেই এ রোগের চিকিৎসা করিয়ে নেয়া উত্তম। যেহেতু নির্দিষ্ট পেশাজীবিদের মাঝে এ রোগের প্রকোপ অনেক বেশী তাই এ রোগের ঝুকিতে (repetitive strain injury) থাকা পেশাজী্বিদের অবশ্যই কাজের ফাকে ফাকে ঘাড়ের বিশ্রাম নেয়া উচিৎ এবং ধীরে ধীরে ঘাড় চারপাশে ঘুড়িয়ে দৈনিক নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত। 

"ঘাড়ের ব্যথা, হাড়ের ব্যথা কনটেন্টটিতে রোগের কারণ, কারা বেশি আক্রান্ত হন, রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা, চিকিৎসার জন্য যোগাযোগ, প্রতিরোধ সন্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।

মেরুদন্ডের ঘাড়ের অংশে অনেকসময় বিশেষ ক্ষয় ও অবাঞ্ছিত হাড়ের সৃষ্টি হয়। এটা একটি প্রাকৃতিক ক্ষয় প্রক্রিয়া। ৩০ বা তদূর্ধ্ব এমনকি ২০ বছর বয়সেও এই প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। দুইটি হাড়ের (কশেরুকা) মধ্যবর্তী অংশের ডিস্ক বা চাকতির মধ্যবর্তী অংশের দুরত্ব খুব বেশি কমে যায়। দুই কশেরুকার মাঝ দিয়ে আমাদের  স্নায়ুনালী গুলি বের হয়। এই ক্ষত বা অবাঞ্চিত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত অংশ আশেপাশের মাংস, স্নায়ু বা ঝিল্লীতে চাপ সৃষ্টি করে। ফলে ঐ অংশ সমূহে তীব্র ব্যথা হয়। এই ব্যথা বাহু এমনকি হাতের আঙ্গুল পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে ।

রোগের কারণ

হঠাৎ করেই তীব্র অথবা ধীরে ধীরে এ ব্যথা শুরু হতে পারে
রোগী ঘাড়ের পিছনে ব্যথা অনুভব করেন
ঘাড় নাড়াতে অসুবিধা হয়, সামনে ঝুঁকতে বা পাশে ফিরতে কষ্ট হয়
ক্ষেত্র বিশেষে কাশি দিতে ইলেক্ট্রিক শকের মতো ব্যথা হয়। খুব বেশি ব্যথার ক্ষেত্রে রোগীর হাত, মাথার উপর তুলে রাখতে আরামবোধ করে
অনেকের ঢোক গিলতে অসুবিধা হয়
এ রোগে যদি স্নায়ু আক্রান্ত হয় তবে একটি হাত বা তার অংশ বিশেষে ব্যথা থাকতে পারে
কারা বেশি আক্রান্ত হন

সাধারণত ৩০ বছরের বেশী  বয়সের যেকোনো বয়সী পুরুষ বা মহিলা এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
বিশেষ করে যারা ঘাড় ঝুঁকিয়ে কাজ করেন বা ঘাড়ের নড়াচড়া বেশি হয় এমন কাজ করেন (যেমন সার্জন, দাঁতের ডাক্তার, অভিনেতা, গাড়ির ড্রাইভার প্রমুখ) তাদের এ রোগ বেশি হয়।
 দৈনন্দিন জীবনে ব্যক্তিগত অভ্যাসের তারতম্যের জন্যও এটি হতে পারে। যেমন দীর্ঘদিন মাথার নিচে মোটা বালিশ ব্যবহার করলে বা শুয়ে, ঝুঁকে বই পড়লে কিংবা এসি/নন-এসি পরিবেশে ঘন ঘন অবস্থান পরিবর্তন করলে এ রোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
 

রোগ নির্ণয় 

উপসর্গ এবং লক্ষণ বিবেচনায় ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগ শনাক্ত করা যায়। ঘাড়ের এক্সরে এক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

 

চিকিৎসা 

তীব্র  ব্যথায় অবস্থাভেদে পূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে
প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খেতে হবে
 ঘাড়ের মাংশপেশীতে থার্মোথেরাপি, সর্টওয়েভ ডায়থার্মি ও ট্র্যাকশন প্রয়োগ করে ভালো ফল পাওয়া যায়। ব্যথা কমে গেলে বেশ কিছুদিন ঘাড়ের ব্যায়াম করতে হবে যাতে পরবর্তী সময়ে আবার আক্রান্ত  না হয়
 ক্ষেত্রবিশেষে সার্ভাইক্যাল কলার পরতে হতে পারে
 

 

চিকিৎসার জন্য যোগাযোগ

মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
বিশেষায়িত বেসরকারী হাসপাতাল/পূনর্বাসন কেন্দ্র
 

প্রতিরোধ  

যিনি একবার সার্ভাইক্যাল স্পন্ডিলাইসিসে আক্রান্ত হয়েছেন তাকে যে বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে সেগুলো হলোঃ

নিয়মিত ঘাড়ের বিশেষ ব্যায়াম
শক্ত সমান বিছানায় এবং পাতলা বালিশে শোয়ার অভ্যাস করতে হবে
লেখাপড়ার কাজে ‘শূন্য’ ডেক্স ব্যবহার করতে হবে (শূন্য ডেক্স হলো যেখানে পিঠ সোজা রেখে হাত বুক বরাবর রেখে লেখা যায়)
গোসলে গরম পানি ব্যবহার
ঘাড়ে কোনো ওজন বহন  করা যাবে না
 কোনা প্রকার ম্যাসাজ ও মালিশ  করা যাবে না
 ঠান্ডা থেকে দূরে থাকতে হবে
 

এসব ব্যবস্থা যথাযথভাবে পালনের পরও যদি ঘাড়ে ব্যথা হয় তাহলে অবহেলা না করে সঙ্গে সঙ্গে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

 

সচরাচর জিজ্ঞাসা 

প্রশ্ন.১. ঘাড়ের ব্যথা/ হাড়ের ব্যথা কেন হয়? 

উত্তর.

হঠাৎ করেই তীব্র অথবা ধীরে ধীরে এ ব্যথা শুরু হতে পারে
রোগী ঘাড়ের পিছনে ব্যথা অনুভব করেন
ঘাড় নাড়াতে অসুবিধা হয়, সামনে ঝুঁকতে বা পাশে ফিরতে কষ্ট হয়
ক্ষেত্র বিশেষে কাশি দিতে ইলেক্ট্রিক শকের মতো ব্যথা হয়। খুব বেশি ব্যথার ক্ষেত্রে রোগীর হাত, মাথার উপর তুলে রাখতে আরামবোধ করে
অনেকের ঢোক গিলতে অসুবিধা হয়
এ রোগে যদি স্নায়ু আক্রান্ত হয় তবে একটি হাত বা তার অংশবিশেষে ব্যথা থাকতে পারে
 

প্রশ্ন.২. ঘাড়ের ব্যথা/ হাড়ের ব্যথার চিকিৎসা কি? 

উত্তর.

তীব্র  ব্যথায় অবস্থাভেদে পূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে
প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খেতে হবে
 ঘাড়ের মাংশপেশীতে থার্মোথেরাপি, সর্টওয়েভ ডায়থার্মি ও ট্র্যাকশন প্রয়োগ করে ভালো ফল পাওয়া যায়। ব্যথা কমে গেলে বেশ কিছুদিন ঘাড়ের ব্যায়াম করতে হবে যাতে পরবর্তী সময়ে আবার আক্রান্ত হতে না হয়।
 ক্ষেত্রবিশেষে সার্ভাইক্যাল কলার পরতে হতে পারে।
 

প্রশ্ন.৩. ঘাড়ের ব্যথা/ হাড়ের ব্যথার চিকিৎসার জন্য কোথায় যোগাযোগ করতে হবে? 

উত্তর.

মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
বিশেষায়িত বেসরকারী হাসপাতাল/পূনর্বাসন কেন্দ্র
সূত্র - ইনফো কোষ ও ইন্টারনেট