একেই বলে রজনীকান্ত স্টাইল! বছরের শেষ দিনেই বোমা ফাটালেন এই দক্ষিণী মেগাস্টার।

সব জল্পনা-কল্পনায় ইতি টেনে রাজনীতিতে সক্রিয় ভাবে প্রবেশের কথা ঘোষণা করে দিলেন রজনীকান্ত। সুপারস্টার রজনীকান্ত রাজনীতিতে পা রাখবেন কি না সেই নিয়ে বহুদিন ধরেই নানা মহলে আলোচনা চলছিল। ৩১ ডিসেম্বর তাঁর সিদ্ধান্ত খোলাখুলি জানাবেন বলে ঘোষণাও করেছিলেন তিনি। রবিবার চেন্নাইয়ের রাঘবেন্দ্র মণ্ডপে ভক্তদের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতপর্বের ষষ্ঠ দিনে রাজনীতিতে প্রবেশের কথা স্পষ্ট করে দিলেন ‘থালাইভা’ স্বয়ং।

গত মঙ্গলবার ভক্তদের সমাবেশে রজনী বলেছিলেন, ‘‘রাজনীতির সঙ্গে আমার যোগ নতুন কিছু নয়। ১৯৯৬ সাল থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যোগ রেখে চলেছি। তবে, প্রত্যক্ষ ভাবে রাজনীতিতে আসতে একটু দেরিই হয়ে গেল। আগামী ৩১ ডিসেম্বর আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাব।’’

রবিবার, সকাল থেকেই রাঘবেন্দ্র মণ্ডপে ছিল উপছে পড়া ভিড়। ‘থালাইভা’কে দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ। তাঁর বক্তব্য শুরু হওয়ার পরই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে জনতা। রজনী বলেন, ‘‘দেশের গণতন্ত্র বিপর্যস্ত। রাজনীতিকরা গণতন্ত্রের নামে সাধারণ মানুষের জমি এবং সম্পত্তি হরণ করছেন। এটাই সঠিক সময় পরিবর্তনের।’’ রজনীর মতে, ‘‘গণতন্ত্রের অবস্থা খুব খারাপ। দেশের অন্যান্য রাজ্য আমাদের (তামিলনাড়ু) নিয়ে মজা করছে। এখন সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করলে পরে আফশোস করব।’’

গত কয়েক মাস ধরেই তামিল রাজনীতির অন্দরে নানা প্রশ্ন আনোগোনা করছিল। রজনীকান্ত কি রাজনীতিতে আসতে চলেছেন? এলেও কোন দলে যোগ দেবেন তিনি? বিজেপি-তেই কি যোগ দেবেন রজনী, না কি নিজের আলাদা দল গড়বেন? ঘনিষ্ঠ মহলেও সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। তবে, এ দিন নিজের আলাদা দল গড়ার কথা স্পষ্ট করেছেন রজনী। চার বছর পরেই তামিলনাড়ু বিধানসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনকে পাখির চোখ করেই এগিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘শুধু নাম এবং যশের জন্য রাজনীতিতে আসছি না। তাহলে ১৯৯৬ সালেই সেটা করতে পারতাম। রাজ্য রাজনীতির শুদ্ধিকরণের জন্যই সক্রিয় রাজনীতি করব।’’ আগামী নির্বাচনে তামিলনাড়ুর সবকটি আসনে তাঁর দল প্রার্থী দেবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকাকালীনই ২০১৬-র ৫ ডিসেম্বর মারা যান এআইএডিএমকে-র সর্বময়ী নেত্রী জয়রাম জয়ললিতা। তারপরই তামিল রাজনীতি সন্ধিক্ষণে পৌঁছে যায়। জয়ার প্রয়াণে মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসেন পনীরসেলভম। অন্যদিকে, জয়ার দীর্ঘ দিনের সঙ্গী শশিকলা দল এবং সরকারের কর্তৃত্ব নিজের হাতে নিতে তৎপর হন। দলের সাধারণ সম্পাদক পদ শশিকলা কব্জাও করে নেন। মুখ্যমন্ত্রী পদে বসা ছিল সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু তার আগেই দুর্নীতির মামলায় শশিকলার কারাদণ্ড ঘোষিত হয়। তিনি ভাইপো দিনকরণকে দলের উপ-সাধারণ সম্পাদক পদে বসিয়ে জেলে চলে যান। মুখ্যমন্ত্রী পদে নিজে বসতে না পারলেও থাকতে দেননি পনীরকে। পলানীস্বামীকে ওই পদে বসিয়ে যান শশিকলা। সেই থেকেই দুই শিবিরে ভেঙে যায় তামিলনাড়ুর শাসক দল। পরবর্তীকালে অবশ্য পুনর্মিলন হয় তামিলনাড়ুর শাসক দল এআইএডিএমকে-র দুই বিবদমান শিবিরের মধ্যে।পনীরসেলভমকে মন্ত্রিসভায় নিজের ডেপুটি করে নেন পলানীস্বামী।

এআইএডিএমকে-র শিবিরের টানাপড়েনের মধ্যেই বিরোধী দল ডিএমকের কাছাকাছি চলে আসেন আর এক সুপারস্টার কমল হাসান। আর নতুন সমীকরণে হাওয়া জোরালো করতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন রজনী-ভক্তেরা। তামিলনাড়ুর দুর্দিনে হাল ধরুন থালাইভা (নেতা) রজনীকান্ত, এমনটাই চেয়েছিলেন তাঁর ভক্ত-কূল। এমজিআর কিংবা জয়ললিতা যে ভাবে তামিল রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন, রজনীকান্ত সে ভাবে নিজের ‘ক্যারিসমা’ দেখান। এটাই আর্জি ‘থালাইভা’র কোটি কোটি ভক্তগণের।