24 Live Bangla News

চুল পড়া প্রতিরোধে পরীক্ষিত কার্যকর ১০ প্রাকৃতিক উপাদান

আপনি যদি চুল পড়ার সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সমস্যার মূল খুঁজে বের করাই উত্তম। তবে ঘরে বসেই ব্যবহার করতে পারেন এমন ১০টি প্রাকৃতিক উপাদান, যা আপনার চুল পড়া বন্ধ করবে এবং চুলে ফিরিয়ে আনবে পুরোনো ঔজ্জ্বল্য।

অ্যালোভেরা
আপনি যদি অত্যাধিক মাত্রায় চুল পড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন তাহলে অ্যালোভেরা হতে পারে আপনার জন্য চমৎকার এক ঘরোয়া সমাধান। অ্যালোভেরা আপনার ক্ষতিগ্রস্ত স্ক্যাল্পকে করে তোলে সতেজ এবং মাথাভরা নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। স্ক্যাল্পের গ্রন্থিকোষে জমে থাকা তেল জাতীয় পদার্থ যা নতুন চুল উঠতে বাধা দেয় তা দূর করার জন্যেও অ্যালোভেরা ভীষন কার্যকরী। ব্যবহারের জন্য বিশুদ্ধ অ্যালোভেরা সরাসরি প্রয়োগ করুন আপনার মাথার তালুতে অথবা ব্যবহার করুন অ্যালোভেরা সমৃদ্ধ কোনো শ্যাম্পু।

যষ্টি মধু
চুল পড়া রোধে যষ্টিমধুর একাধিক উপকারী গুণ রয়েছে। এটা মাথার শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বককে কোমল করে তোলে। এর সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে, এটা ময়লা বা তেল জমে বন্ধ হয়ে যাওয়া গ্রন্থিগুলোকে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসে এবং দুর্বল গ্রন্থিকোষগুলোকে শক্তিশালী করে যা চুল পড়া শুরু হওয়ার প্রধানতম কারণ। দ্রুত ফলাফল দেখতে চাইলে প্রতি সপ্তাহে যষ্টিমধু চুলে ব্যবহার করুন অথবা চায়ের সঙ্গে পান করুন।

পেঁয়াজের রস
জার্নাল অব ডার্মাটোলজি কর্তৃক প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, পেঁয়াজের রস চুল বৃদ্ধি ও নতুন চুল গজাতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করে। পেঁয়াজের রস দিনে দুইবার করে ছয় সপ্তাহ ব্যবহার করে ২৩ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ২০ জন-ই ভালো ফলাফল পেয়েছেন এবং তারা বলেছেন পেঁয়াজের রস চুল পড়া রোধে সত্যিই কাজ করে। পেঁয়াজ দীর্ঘদিন ধরেই চুল পড়ার প্রাকৃতিক চিকিৎসা হিসেবে বেশ জনপ্রিয়, কারণ পেঁয়াজে থাকা সালফার রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং পেঁয়াজে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান স্ক্যাল্প ইনফেকশন দূর করে। ব্যবহারের জন্য পেঁয়াজ ছোট ছোট করে কেটে নিয়ে ব্লেন্ড করে বা পাটায় বেটে নিয়ে জুস করে নিতে হবে। এরপর তা মাথার তালুতে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখতে হবে। সবশেষে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।

রোজমেরি তেল
রোজমেরি তেলে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিসেপ্টিক উপাদান যা খুশকি এবং ইনফেকশন থেকে স্ক্যাল্পকে রক্ষা করে যেগুলো চুল পড়ার অন্যতম কারণ। সরাসরি স্ক্যাল্পে ব্যবহার করলে এটি চুল পড়া রোধে কার্যকরী চিকিৎসা হিসেবে কাজ করে। বায়োটেকনোলজির আন্তর্জাতিক জার্নালে বলা হয়েছে, রোজমেরি তেলে উচ্চতর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে এবং এই দুইটি উপাদানের ফলে চুল বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ভাবে বেড়ে ওঠে ও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

রসুন
২০০৭ সালে এক গবেষণায় ত্বক বিশেষজ্ঞরা প্রমাণ পেয়েছেন যে, চুলের যে সব জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা চুল পড়ার স্বীকার হয়েছে সেখানে রসুন বেটে লাগালে তা চুল পড়ার প্রতিরোধে বাজারে পাওয়া ওষুধের চেয়ে ভালো কাজ করতে সক্ষম এবং সংস্পর্শে আসা সকল চুলকে শক্তিশালী করে তোলে। পেঁয়াজের মতোই রসুনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল ও ভিটামিন যা চুলের ক্ষয়পূরণ করে চুলকে করে তোলে আরো শক্তিশালী। বাটা বা ব্লেন্ড করা রসুন আপনার চুল পড়া প্রতিরোধে হতে পারে চমৎকার এক তাৎক্ষণিক সমাধান।

নারকেল দুধ
বাজারে এতো পরিমাণ নারকেল দিয়ে তৈরি শ্যাম্পু বা কন্ডিশনার এর পেছনে রয়েছে চুলের উপকারীতায় এর অসংখ্য গুণাগুণ। শক্তিশালী ময়েশ্চারাইজিং ক্ষমতার জন্য নারকেলের পরিচিতি রয়েছে। আপনার মাথার চুল ঝরে যাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে, চুলের শুষ্ক ত্বক। চুলের ত্বকের শুষ্কতার হাত থেকে মুক্তি পেতে আপনার চুলের গোড়ায় নারকেল এর দুধ লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।

আপেল সিডার ভিনেগার
মাথার চুল ঝরে যাওয়ার পেছনে শুষ্কতা ছাড়া আরেকটি অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে, মাথার ত্বকের বা স্ক্যাল্পের রন্ধ্রগুলো আটকে যাওয়া বা বন্ধ হয়ে যাওয়া। যখন স্ক্যাল্পের এই গ্রন্থিগুলো বন্ধ হয়ে যায় মাথার ত্বক প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় না ফলে ব্যাকটেরিয়া জন্মায় এবং শুরু হয় চুল পড়া। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এবং গ্রন্থিসমূহ পুনরুজ্জীবিত করতে আপেল সিডার ভিনেগার এবং পানি মিশিয়ে করে মাথায় লাগান। এছাড়াও চুলের বৃদ্ধি এবং চুলকে শক্তিশালী করতে আপেল সিডার ভিনেগারের রয়েছে আরো কিছু উল্লেখযোগ্য ভূমিকা।

গোলমরিচ
চুল পড়া রোধের অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে, স্ক্যাল্পের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করা। আর এর জন্য গোলমরিচের চেয়ে ভালো আর কিছুই হতে পারে না। গোলমরিচে আছে ক্যাপসাইসিন যা আপনার রক্ত সঞ্চালনকে দারুনভাবে বৃদ্ধি করে। মাথায় দেয়ার জন্য গোলমরিচের মাস্ক কিভাবে তৈরি করবেন তা খুব সহজেই দেখে নিতে পারেন অনলাইন থেকে এবং ব্যবহার শুরু করুন চুল পড়া রোধে দারুন কার্যকরী এই প্রাকৃতিক চিকিৎসা।

সানফ্লাওয়ার তেল
পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম প্রাচীন শস্য সানফ্লাওয়ার ফুলের বীজ থেকে তৈরি হয় সাফফ্লাওয়ার তেল, যার বহুবিধ উপকারীতার জন্য হাজার বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটা আপনার মাথার মরা কোষগুলোকে নতুন করে কাজ করতে সহায়তা করে এবং মাথার খুশকি দূর করে। এটা আপনার স্ক্যাল্পের গভীরে পৌঁছে ভেতর থেকে আপনার কোষগুলোকে শক্তি যোগায় এবং আপনার স্ক্যাল্পকে করে সমৃদ্ধ। ব্যবহারের জন্য আপনার চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করুন এবং ১০-২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। ব্যবহারের ফলে চুলের উন্নতির ফলাফল হাতেনাতেই পাবেন।

ডিম
যদিও এই পদ্ধতিটা অদ্ভুত মনে হতে পারে, কিন্তু চুল পড়ার প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসেবে ডিম সত্যিই কাজ করে। ডিম নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে কারণ এতে রয়েছে উচ্চ মাত্রার প্রোটিন। আমাদের চুলের ৭০ শতাংশ ক্যারোটিন নামক প্রোটিন দ্বারা গঠিত। সুতরাং এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে ডিম চুলের ক্ষয়পূরণে কাজ করে। বাটিতে একটি ডিম ফেটিয়ে ১ টেবিল চামচ অলিভ ওয়েল এর সঙ্গে মিশিয়ে নিন। চুল ভালো করে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে তারপর মিশ্রণটি চুলে লাগিয়ে কমপক্ষে ১০ মিনিট রাখুন। শুকিয়ে আসলে ভালো কোনো ময়েশ্চারাইজিং কন্ডিশনার দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

Read More Bangla News