শীত গেলো গেলো করে চলেই গেলো, তবে এখনো বাজারে প্রচুর পরিমানে সবজি পাওয়া যাচ্ছে। এখন দাম কম হলেও কয় দিন পরেই এই সব সবজি আর পাওয়াও যাবে না, গেলেও দাম থাকবে অনেক বেশি। তাই চাইলেই আপনি এই সব সবজি ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষন করতে পারেন। আজ আপনাদের সাথে শীতের নানা সবজি কিভাবে সারা বছর এর জন্য সেভ করে রাখবেন তা জানাবো। আসুন তাহলে দেখে নেই। 

পেঁয়াজ কলি - 

বাজার থেকে পেঁয়াজের কালি কেনার সময় একটু টাটকা ও ভালো দেখে কিনে আনবেন। তার পর পেঁয়াজের কালি গুলো পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নেবেন। পানি দিয়ে ধোঁয়ার পর পানি ঝরিয়ে তার পর ফ্যানের বাতাসে শুকিয়ে নেবেন। অথবা ভালোভাবে একটি তোয়াল দিয়ে কলির পানি গুলো মুছে নিন। মনে রাখবেন পানি থাকলে সংরক্ষণ করতে সমস্যা হয়। এবার কলি গুলোকে আপনার সুবিধামত সাইজে কেটে নিন। এবার কলি গুলো কাটা হয়ে গেলে একটি জিপ লক ব্যাগ বা এয়ারটাইট ফুড কন্টেইনারে পেঁয়াজ গুলো নিয়ে নিন। তবে জিপ লক ব্যাগ না থাকলে সাধারন প্লাস্টিকের ব্যাগেও রাখতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যাগের মুখ ভালোকরে সুতা দিয়ে আটকে দেবেন। এটাকে ডিপ ফ্রিজে রেখে অনায়াসে ৬ থেকে ৭ মাস সংরক্ষণ করতে পারবেন। 

বাঁধাকপি কপি - 

বাঁধাকপি সংরক্ষণ করার ২টি পদ্ধতি সেয়ার করবো আপনাদের সাথে। আস্ত বাঁধাকপি ও বাঁধাকপির পাতা সংরক্ষণ। আসুন তাহলে জেনে নিন বাঁধাকপি সংরক্ষণ করার পদ্ধতি।

ডিপ ফ্রিজে আস্ত বাঁধাকপি সংরক্ষণ - ২থেকে ৪টি আস্ত বাঁধাকপি ধুয়ে নিন। একটি হাড়িতে পানি গরম দিন। ফুটন্ত পানিতে এই বাঁধাকপি ছেড়ে নিন। ৫-৭ মিনিট পর পানি থেকে তুলে ঠান্ডা পানিতে ডুবিয়ে রাখুন। ২০ মিনিট পর পানি বদলিয়ে আবার ডুবিয়ে রাখুন। তার ২০ মিনিট পর চালুনিতে রাখুন। আস্তে আস্তে হাত দিয়ে চেপে পানি বের করে দিন। এবার আলাদা আলাদা প্যাকেটে ভরে ফ্রিজে রেখে দিন।

বাঁধাকপির পাতা সংরক্ষণ - কয়েকটি বাঁধাকপির পাতা ছাড়িয়ে নিন। এবার পাতা গুলো ভালো করে ধুয়ে ভাপিয়ে পানিতে কিছু সময় রাখুন। এভাবে ৫-৬টি পাতা করে এক একটি পলিব্যাগে ভরে ডিপ ফ্রিজে ভরে রাখুন।

ফুলকপি - 

ফলকপি ভালো করে ধুয়ে নিন। এবার পানি ঝরিয়ে নিন। ভালো করে পরিস্কার করার পর ছোট ছোট টুকরা করে কাটবেন। এমন সাইজ করবেন, যাতে পরবর্তীতে আর কাটতে না হয়। কারন ফ্রিজে রাখার পর তা কাটতে গেলে অনেক সময় অসুবিধায় পড়তে হয়। এবার চুলায় একটি পাত্রে পানি ফুটতে দিন।

পানিতে বলক চলে এলে ফুলকপি গুলো ছেড়ে দিন। এমন পরিমান পানি দেবেন যেন সব ফুলকপি গুলো ডুবে যায়। সাধারন আঁচে ফুলকপি গুলো সিদ্ধ দিতে হবে। মনে রাখবেন আমরা হাফ সেদ্ধ থেকে একটু কম সেদ্ধ করবো। এক চামচ দুধ দিয়ে দিন। এবার ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন। পানি ফুটে উঠলে ২ মিনিট জ্বাল দিয়ে চুলা বন্ধ করে নিন। ফুলকপি গুলো তুলে নিয়ে ঠান্ডা পানিতে দিয়ে দিন। ফুলকপি গুলো স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এলে তুলে ছড়িয়ে দিন। ফ্যানের বাতাসে পানি শুকিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে এয়ারটাইট বক্স বা জিপ লকার ব্যাগে ভরে ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন।

টমেটো -

প্রথমে ভালো ও তাজা দেখে বাজার থেকে টমেটো কিনে আনুন। মনে রাখবেন যে টমেটো সংরক্ষণ করার জন্য কিনবেন সেগুলো যেন একটু টাটকা এবং শক্ত হয়। নরম টমেটো কিনলে কাটার সময় থেতলে বা গলে যেতে পারে। এর পর টমেট গুলো ভালো ভাবে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। ভালো ভাবে পানি শুকিয়ে গেলে তার পর টমেটো গুলো কিউব করে কাটুন। কিউব করে বলতে ফালি কে বুঝিয়েছি, একটি টমেটোকে ৪টি করে কাটুন। তাহলে হবে কি, আপনি যখন টমেটো রান্নার জন্য বের করবেন তখন টমেটো কাটতে অসুবিধা হবে না। বা কাটার সময় গলেও যাবে না। সব টমেটো কাটা হয়ে গেলে একটি এয়ার টাইট ব্যাগে, বা ফুড কন্টেইনারে ভরে ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন। এই টমেট আপনি ৬মাস পর্যন্ত খেতে পারবেন। স্বাদ গন্ধ একদম অটুট থাকবে। 

মটরশুটি -

বাজার থেকে ভালোমানের ও পুষ্ট দেখে মটরশুটি কিনে আনুন। এর পর ভালোভাবে ধুয়ে তা থেকে মটর দানা গুলো ছাড়িয়ে নিন। মটর দানা গুলো ছাড়ানো হয়ে গেলে ভালোভাবে ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে নিন। এবার একটি পাত্রে পানি গরম করে নিন। তাতে মটর দানাগুলো ঢেলে দিন। অল্প আচে মটর দানা গুলো ৪-৫ মিনিট রাখুন। মনে রাখবেন আমরা মটর দানা আধা সিদ্ধ করবো, পুরো সিদ্ধ করবো না। ৪-৫ মিনিট পর পানি থেকে মটর দানা গুলো আরেকটি পাত্রে নিয়ে নিন। এবং পানি ঝরিয়ে নিন। 

এক্ষেত্রে একটি বিষয়, অনেকেই মটর সেদ্ধ করার সময় ছাল সহ সেদ্ধ করেন। ছাল সহ সেদ্ধ করলে দানা ছাড়াতে সুবিধা হয়। কিন্তু মটরের ভিতরে কোন পোকা মাকড় থাকলে কি হয় সেটা আপনারা সবাই বুঝতে পারছেন। তাই আমি মটর দানা আলাদা করে তবেই সেদ্ধ করেছি। যারা মটরে একটু নোনতা স্বাদ আনতে চান, তারা আধা সেদ্ধ করার সময় সামান্য লবন দিতে পারেন পানিতে। 

এবার আসি প্রোসেস এ,ভালো ভাবে পানি ঝরা হয়ে গেলে এবং ঠান্ডা হওয়ার পর একটি এয়ার টাইট প্লাস্টিক কন্টেইনারে, অথবা ব্যাগে ভরে ডিপ ফিজে রেখে দিন। এভাবে আপনি এই মটর দানা ৬-৭মাস পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবেন। ব্যবহারের সময় বের করে সরাসরি তরকারিতে দিতে পারবেন।

সীমের বীচি - 

১ কেজি সিমের বিচি একটি পাত্রে নিয়ে নিন। তাতে পানি দিয়ে দিন। যাতে করে সিমের বিচি গুলো সারা রাত ধরে ভিজতে পারে। এভাবে ১রাত রাখার পর সিমের বিচির খোসা ছাড়ানো বেশ সহজ হয়ে যাবে। ভালো ভাবে সব সিমের বিচির খোসা ছাড়িয়ে নিন। এবার একটু পাত্রে পানি দিয়ে চুলায় জ্বাল দিন। পানির ভেতর সিমের বিচি গুলো দিয়ে দিন। সিমের বিচি কিন্তু পুরোপুরি সেদ্ধ করা যাবে না। পানিতে বলক এলে চুলা বন্ধ করে একটি ছাকনি দিয়ে ছেকে নিন। এবং ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। 

বিচি গুলো একেবারে ঠান্ডা হয়ে এলে একটি এয়ার টাইট প্লাস্টিক ব্যাগ বা ফুড কন্টেইনারে ভরে রেখে দিন। এভাবে সিমের বিচি আপনি ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবেন। 

ধনিয়া পাতা - 

প্রথমে ধনিয়া পাতার গোড়া কেটে ফেলে দিন। তার পর ধনিয়া পাতা থেকে ভালো করে পানি ঝরিয়ে শুকিয়ে নিন। ফ্যানের বাতাসে শুকিয়ে নিতে পারেন। সম্পুর্ন শুকিয়ে গেলে, ধনিয়া পাতা কুচি কুচি করে কেটে নিন। এবার এই পাতা এয়ারটাইট জিপ লকার ব্যাগে ডিপ ফ্রিজে ভরে রেখে দিন। তবে চেস্টা করবেন পলিথিনের বেতর থেকে বাতাস বের করে দিতে। 

আরও একটি পদ্ধতিতে ধনিয়া পাতা সংরক্ষঙ্করা যায়। উপরের পদ্ধতির মতন করে একই ভাবে ধনিয়া পাতা কুচি করে আইস ট্রেতে অল্প করে পূর্ন করে নিন। ট্রে পুর্ন হলে এতে সামান্য পরিমাণ পানি দিয়ে দিন। এই ট্রে ডিপ ফিজে সংরক্ষণ করুন। এতে করে আপনি ধনিয়া পাতার কিউব পাবেন। যে কয়টা দরকার সে কয়টা বের করে আপনি ব্যবহার করতে পারবেন। 

কাঁচা মরিচ - 

বাজারে সবজিতে প্রচুর পরিমাণে পানি ছিটায়।আর পানি সহ ফ্রিজে রাখলে পচন ধরবেই।তাই কাচা মরিচ গুলো বাজার থেকে আনার পর একটা পরিষ্কার কাপড়ে বিছিয়ে বাতাসে ভালো ভাবে পানি শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর মরিচের বোটাগুলো ছাড়িয়ে পঁচা বা আধা পঁচা মরিচ গুলো আলাদা করে ফেলে দিয়ে শুকনো পলিথিন ব্যাগে ভর্তি করে বায়ুশূন্য করে মুখটা ভালো ভালে পেচিয়ে ফ্রিজে রাখলে তুলনামূলক ভাবে বেশী দিন ভালো থাকবে। অন্যান্য সবজিও বাজার থেকে এনে সরাসরি ফ্রিজে না ডুকিয়ে পানি মুছে তারপর রাখলে বেশি দিন ভালো থাকে।