চুল হলো মূলত কেরাটিন নামক শক্ত প্রোটিন দিয়ে তৈরি এক ধরনের তন্তু।এর পিএইচ প্রায় ৫.৫।কোন কারণে এই পিএইচ বেড়ে গেলে এই প্রোটিনের চারিত্রিক পরিবর্তন ঘটে অর্থাৎ কিছুটা নরম হয়ে আঠালোমত হয় ফলে এক চুল আরেক চুলের সাথে জোড়া লেগে যায়।স্বাভাবিক অবস্থায় এটা যেন না হয় তার জন্য প্রতিটি চুলের গোড়ায় একটি করে তেল গ্রন্থি (সিবেসিয়াস গ্ল্যান্ড থাকে) যা থেকে উৎপন্ন তেল চুলের দৈর্ঘ্য বরাবর ছড়িয়ে পড়ে।সেবাম তেল ফ্যাটি এসিড দিয়ে তৈরি তাই এর পিএইচ চুলের পিএইচের খুব কাছাকাছি।কিন্তু চুল লম্বা হওয়ার কারণে কিংবা চুল আঁচড়ানোর মাধ্যমে সেবাম তেল পুরো চুলে ছড়িয়ে না দেবার কারণে কিংবা কোন কারণে তৈলগ্রন্থি থেকে কম তেল (সেবাম) তৈরি হলে চুলে জট লেগে যেতে পারে।আপনি খেয়াল করে দেখবেন চুলের জট চুলের গোড়ায় নয় বরং চুলের শেষ প্রান্তে লাগে।কারণ সবসময় সেবাম তেল চুলের প্রান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে না।এ কারণেই নিয়মিত চুল আঁচড়ানো খুব দরকার।এবং একই কারণে চুলে নারিকেল তেল বা অন্যন্য উপকারি তেল ব্যবহার করা হয়।

গোসলের পর চুলে জট লেগে যাওয়ার কারণও একই।পানির পিএইচ ৭ যা চুলের চেয়ে বেশি।তাই চুল বেশিক্ষণ পানিতে ভিজে থাকলে ভেজা চুলে জট বেঁধে যায়।এজন্যই অনেকে চুলে তেল ম্যসেজ করে গোসল করতে যায়।চুলে তেল মেখে থাকায় পানি চুলের সংস্পর্শে আসতে পারে না,ফলে জট বাঁধাতে পারে না।

স্যাঁতস্যাঁতে বর্ষা হোক বা ভয়ানক গরম, আর্দ্র আবহাওয়া, ধুলো, ধোঁওয়া, দূষণ আর ঘামে জেবড়ে চুলে জট পড়ে একেবারে যাচ্ছেতাই অবস্থা হয়। তবে আর চিন্তার কিছু নেই। কয়েকটি সহজ ঘরোয়া উপায়েই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।

কার্বোনেটেড জল
শ্যাম্পু করার পর সোডা ওয়াটার, ক্লাব সোডা বা স্পার্কলিং ওয়াটার দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।কার্বোনেটেড জলের পিএইচ লেভেল কম হওয়ায় এটা চুলে জট পড়া আটকায়।

অ্যাপল সাইডার ভিনিগার
মাসে এক বা দু’বার জলের সঙ্গে সামান্য অ্যাপল সাইডার ভিনিগার মিশিয়ে চুল ধোবেন। অ্যাপল সাইডার ভিনিগারের অ্যাসিডিক প্রকৃতি চুলে জট পাকানো অনেকটাই রোধ করবে।

নারকেলের দুধ
নারকেলের দুধে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন আছে যা চুলে পুষ্টি যোগায়। সামান্য নারকেলের দুধ নিয়ে অল্প গরম করে চুলে মাসাজ করুন। খানিকক্ষণ শাওয়ার ক্যাপ পরে থাকুন বা তোয়ালে জড়িয়ে রাখুন। সারা রাত থেকে পরের দিন শ্যাম্পু করুন।

১। চুলের আগা ছাঁটুন নিয়মিত
চুলের আগা নিয়মিত ছেঁটে রাখলে জট কম পরে৷ এছাড়া আপনার চুলের আগা যদি ফেটে গিয়ে থাকে, তাহলে ছেঁটে দিলে আগা ফাটা ও জট লাগা দু’টোই সামলানো যায় একসঙ্গে।

২। কন্ডিশনার ব্যবহার করুন
শ্যাম্পু করার পর চুলে কন্ডিশনার লাগানো মাস্ট। এতে চুল মসৃণ ও নরম থাকবে, জট লাগাও প্রতিরোধ করবে।

৩। নিয়ম করে তেল লাগান
উষ্ণ গরম তেল নিয়মিত চুলে লাগানোর চেষ্টা করুন। এরপর শাওয়ার ক্যাপ বা উষ্ণ তোয়ালে দিয়ে ঢেকে রাখুন স্নানের আগ পর্যন্ত। এটা ডিপ কন্ডিশনিং এর কাজ করে। চুলের কিউটিকলের পরিচর্যাও করে এবং চুলের রুক্ষতা কমিয়ে চুলকে করে তোলে নমনীয়। মসৃণ চুলে তাই জট লাগে না।

৪। চিরুনি নয়, আঙুল ব্যবহার করুন
জট বাঁধলে চিরুনি বা ব্রাশের বদলে আঙুল দিয়ে সেই জট ছাড়ানোর চেষ্টা করুন। আঙুল দিয়ে বিলি কেটে কেটে জট ছাড়িয়ে এরপর চিরুনি ব্যবহার করুন। চিরুনি দিয়ে চুলের জট ছাড়াতে গেলে বেশি চুল উঠে যায়৷ ব্যাথাও লাগে মাথার তালুতে৷

৫। বড় দাঁতের চিরুনি নিন
বড় দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ানোর অভ্যাস করুন। এতে চুল ছিঁড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কম। তাছাড়া প্লাস্টিকের বদলে প্রাকৃতিক উপাদান যেমন কাঠের তৈরি চিরুনি হলে আরও ভালো হয়। আর মনে রাখবেন, ভেজা চুল কখনই আঁচড়াবেন না। কারণ তা নরম থাকে আর ছিঁড়ে যায়।

৬। নিচ থেকে শুরু করুন
জট ছাড়ানোর নিয়ম হল এর নিচের দিক থেকে শুরু করা। আমাদের অভ্যাস আছে ধৈর্য্য হারিয়ে আমরা চুলের জট ছাড়াতে দুইদিক থেকে চুল দুভাগ করে টানি৷ কখনওই জট খুলতে এই কাজ কখনওই করা উচিত নয়। এতে আর বেশি জট পড়ে যায় চুলে৷

৭। সিরাম ব্যবহার করুন
শ্যাম্পু করার পর চুল আঁচড়ানোর আগে হেয়ার সিরাম ব্যবহার করুন। এটি চুলকে করে তোলে নরম ও মসৃণ। তাই জট ছাড়াতে তা খুব ভালো সাহায্য করে।

৮। বালিশের কভারে সুতি নয় সিল্ক ব্যবহার করুন
ঘুমনোর সময় আমরা সাধারণত সুতির কাপড়ের বালিশের কভার ব্যবহার করি। কিন্তু সুতি কাপড় আমাদের চুল থেকে আর্দ্রতা শুষে নেয়৷ ফলে চুল রুক্ষ হয়ে যায় এবং চুলে স্থির বিদ্যুৎ তৈরি করে। এতে করে চুলে রুক্ষতা তৈরি হয়ে জট লাগার প্রবণতা বাড়ে। কিন্তু সিল্কের কাপড়ে সে সমস্যা হয় না।

৯। বেণী করে শ্যাম্পু করুন
সবসময় যে খোলা চুলেই শ্যাম্পু করতে হবে, এমন কোনও কথা নেই। বরং বেণী করে চুলে শ্যাম্পু করলে ধীরে ধীরে বেণী খুলে আসে ধোয়ার সময়। যা মূলত ভেজা চুলের জট পাকানো থেকে রক্ষা করে আপনার চুলকে।

১০। চুল খোলা রাখুন
কিন্তু তার মানে এই নয় যে চুল সবসময় বেঁধে রাখবেন৷ তাতেও কিন্তু জট বাঁধে চুলে। কাজেই বাড়িতে যখন থাকবেন, চেষ্টা করুন চুল খুলে রাখার। আর নিয়মিত চুল পরিষ্কার করে আঁচড়ে রাখুন। অবাধ্য চুলকে বশে আনার জন্য পরিচ্ছন্ন রাখুন চুলকে।