একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত চন্দনের পেস্ট মুখে লাগালে ত্বকের অন্দরে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রপাটিজের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। ফলে নানাবিধ ত্বকের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। সেই সঙ্গে ত্বকের উপরিভাগে জমতে থাকা মৃত কোষের স্থরও সরে যায়। ফলে ত্বক উজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত হয়ে উঠতে সময় লাগে না। ভাববেন না এখানেই শেষ। ত্বককে ফর্সা করে তোলার পাশাপাশি স্কিন টোনের উন্নতি ঘটাতে এবং ত্বকের বয়স কমাতেও এই প্রাকৃতিক উপাদানটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে মেলে আরও অনেক উপকার। যেমন...

১. ত্বকের দাগ মিলিয়ে যেতে শুরু করে: বেশ কিছু স্টাডিতে দখা গেছে পিম্পল, ব্রন এবং আরও নানা কারণে হওয়া নানাবিধ দাগের প্রকোপ কমাতে চন্দনের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। এক্ষেত্রে পরিমাণ মতো চন্দন গুড়ে নিয়ে তার সঙ্গে সম পরিমাণ দুধ বা জল মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। তারপর তা মুখে লাগিয়ে অপেক্ষা করতে হবে কম করে ৩০ মিনিট। সময় হয়ে গেলে হাল্কা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে সারা মুখ। এইভাবে সপ্তাহে ৩-৪ দিন ত্বকের পরিচর্যা করলে দাগমুক্ত উজ্জ্বল ত্বকের অধিকারি হয়ে উঠতে দেখবেন সময়ই লাগবে না। প্রসঙ্গত, এই পেস্টটি মুখে লাগিয়ে যদি সারা রাত রেখে দিতে পারেন, তাহলে আরও দ্রুত ফল মেলে।

২.ব্রণর প্রকোপ কমায়: ত্বকের অন্দরে তেল বা সিবামের উৎপাদন বাড়তে থাকলে ত্বকের ছিদ্রে ময়লা এবং ধুলোবালি বেশি মাত্রায় জমতে শুরু করে। ফলে ব্রণ বা পিম্পলের মতো ত্বকের রোগ মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে সময় নেয় না। আর এমনটা হলে মুখের সৌন্দর্য যে মারাত্মকভাবে কমে যায়, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এমন পরিস্থিতিতে রোগের প্রকোপ কমাতে দারুনভাবে কাজে আসতে পারে চন্দন। কারণ এই প্রকৃতিক উপাদানটির অন্দরে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রপাটিজ, যা এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এখন প্রশ্ন হল ব্রণর প্রকোপ কমাতে কীভাবে কাজে লাগাতে হবে চন্দনকে? এক্ষেত্রে একটা বাটিতে ১ চামচ চন্দন গুড়ো নিয়ে তার সঙ্গে ১ চামচ দুধ এবং এক টিমটে হলুদ গুড়ো মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। তারপর সেই পেস্টটা মুখে লাগিয়ে কম করে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। সময় হয়ে গেলে হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

৩. পুড়ে যাওয়া ত্বকের পরিচর্যায় কাজে আসে: এই গরমে বাড়ির বাইরে বেরনো মানেই ত্বক পুড়ে যাওয়া। আর এমনটা হলে ত্বকের সৌন্দর্য কমতে যে সময় লাগে না, সেকথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু আপনি যদি চান, তাহলে এমনটা আপনার সঙ্গে নাও হতে পারে। তবে সেজন্য আপনাকে কাজে লাগাতে হবে চন্দনের গুড়োকে। এমনটা করলে একদিকে যেমন ত্বকের অন্দরে এবং বাইরে ইনফ্লেমেশন বা প্রদাহের মাত্রা কমবে, তেমনি পুড়ে যাওয়া ত্বক পুনরায় ফর্সা হয়ে উঠবে। প্রসঙ্গত, ত্বককে পুড়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে ১ চামচ চন্দন গুঁড়োর সঙ্গে ১ চামচ মধু মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। তারপর তা মুখে, গলায়, ঘারে এবং হাতে লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। সময় হয়ে গেলে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে পেস্টটা। এইভাবে সপ্তাহে তিনবার যদি ত্বকের পরিচর্যা করতে পারেন, তাহলে দারুন উপকার পাবেন।

৪. বলিরেখা কমে: মাত্রাতিরিক্তি সূর্যালোক, স্ট্রেস এবং পরিবেশ দূষণের কারণে অসময়ে ত্বক বুড়িয়ে যাওয়ার ঘটনা আজকাল আকছাড়ই ঘটে থাকে। সেই সঙ্গে বলিরেখা প্রকাশ পাওয়ার কারণে ত্বকের সৌন্দর্য কমে চোখে পরার মতো। এমন পরিস্থিতিতে ত্বকের হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্যকে ফিরিয়ে আনতে কাজে লাগাতে পারেন চন্দন গুঁড়োকে। আসলে এই প্রকৃতিক উপাদানটির অন্দরে থাকা একাধিক উপকারি উপাদান স্কিনের অন্দরে থাকা টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়। ফলে ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনি সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় চোখে পরার মতো। প্রসঙ্গত, অল্প সময়েই যদি ত্বকের বয়স কমাতে চান, তাহলে ১ চামচ মধুর সঙ্গে ১ চামচ চন্দন গুড়ো এবং ১ টা ডিমের কুসুম মিলিয়ে একটা মিশ্রন বানিয়ে নিতে হবে। তারপর তা মুখে লাগিয়ে কম করে ১ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে। সময় হয়ে গেলে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে সারা মুখ।

৫. শুষ্ক ত্বকের সমস্যা কমায়: ত্বকের অন্দরে সিবামের উৎপাদন কমতে থাকলে স্কিন এতমাত্রায় শুষ্ক হয়ে পরে যে সৌন্দর্য কমতে সময় লাগে না। এমন পরিস্থিতিতে নিয়মিত চন্দনের পেস্ট লাগাতে শুরু করলে ত্বকের অন্দরে শুধু আদ্রতার মাত্রা বাড়ে না। সেই সঙ্গে স্কিন উজ্জ্বল এবং তুলতুলে হয়ে ওঠে। তবে এই ঘরোয়া টোটকাটিকে নিয়মিত কাজে লাগাতে হবে। তবেই কিন্তু উপকার মিলবে। না হলে কিন্তু তেমন একটা সুফল পাবেন না।

৬. ত্বক উজ্জ্বল হয়ে উঠবে: অল্প দিনেই ত্বকের হারিয়ে যাওয়া ঔজ্জ্বল্য ফিরে আসুক, এমনটা যদি চান, তাহলে ১ চামচ দুধের সঙ্গে সমপরিমাণ চন্দনের গুঁড়ো মিশিয়ে মুখে লাগাতে শুরু করুন। দেখবেন দারুন উপকার মিলবে।