কলিজার খিচুড়ি

বয়সসীমাঃ ৬-৮ মাস, ৯-১১ মাস, ১২-২৩ মাস

প্রস্তুত প্রণালীঃ
১। মুরগীর কলিজা ভালোমত পরিস্কার করে, ধুয়ে ছোট করে কেটে নিতে হবে।

২। চাল এবং ডাল ভালোমত পরিষ্কার করে ফুটানো পানিতে ভিজিয়ে রাকুন। ১০ মিনিট পরে ভালোমত পানি ঝরিয়ে নিন।

৩। সব শাক-সবজি এবং পেঁয়াজ ভালোমত ধুয়ে কেটে নিন।

৪। একটি রান্নার পাত্রে তেল গরম করুন, তেল গরম হলে এতে পেঁয়াজ কুচি, আদা রসুন বাটা দিন।

৫। পেঁয়াজ এবং মসলা সামান্য ভেজে এতে চাল ও ডালের মিশ্রণ ঢেলে দিন। কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করুন। স্বাদ অনুযায়ী হলুদ গুড়া এবং সামান্য লবণ যোগ করুন। অল্প আঁচে কিছুক্ষণ (১-২ মিনিট) নাড়াচাড়া করুন।

৬। চাল ডাল সামান্য ভাজা হলে এতে প্রয়োজনমত পানি (সম্ভব হলে গরম পানি) যোগ করুন। এবং রান্না হওয়ার জন্য পাত্রটি একটি পরিষ্কার ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন।

৭। চাল এবং ডাল অর্ধেক সিদ্ধ হয়ে এলে এতে সবজিগুলো এবং টুকরা করা কলিজা সব একসাথে ঢেলে দিন। সামান্য নেড়ে দিন যাতে সবগুলো উপকরণ একসাথে মিশে যায়। পাত্রটি আবারও ঢেকে দিন।

৮। সবগুলো উপকরণ ভালোমত সিদ্ধ হয়ে গেলে চুল থেকে নামিয়ে ফেলুন। প্রয়োজনে খিচুড়ি চামচ দিয়ে সামান্য চটকিয়ে নরম করে নিন এবং শিশুকে পরিবেশন করুন।

চিড়ার পোলাও

বয়সের বিভাগঃ ৯-১১ মাস, ১২-২৩ মাস।

প্রস্তুত প্রনালী
১। চিড়া ভালমত পরিষ্কার করে ধুয়ে ফুটানো পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। ১০ মিনিট পর ভালোমত পানি ঝরিয়ে নিন।

২। সব শাক সবজী এবং পেঁয়াজ ভালোমত ধুয়ে কেটে নিন।

৩। একটি রান্নার পাত্রে তেল গরম করুন, তেল গরম হলে এতে পেঁয়াজ কুচি ছেরে দিন।

৪। পেঁয়াজ সামান্য বাদামী হলে সবজীগুলো ঢেলে দিন। কিছুক্ষন নাড়াচাড়া করুন। স্বাদ অনুযায়ী লবন যোগ করুন। সবজী রান্না হওয়ার জন্য পাত্রটি ধেকে দিন।

৫। ভালোমত সিদ্ধ হয়ে গেলে এতে একটি ডিম ভালোমত ফেটে ঢেলে দিন। দ্রুত নাড়তে থাকুন যাতে ডিম ভালোভাবে সবজির সাথে মিশে যায়।

৬। পানি ঝরানো চিড়াগুলো এতে দিয়ে দিন। ভালোমত নাড়াচাড়া করুন যাতে সব উপকরণ একসাথে মিশে যায়।

৭। অল্পআঁচে কিছুক্ষণ (৫ মিনিট) রান্না করুন। চিড়ার পোলাও পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত।

পুষ্টি গুড়া

বয়সসীমাঃ ৬-৮ মাস, ৯-১১ মাস, ১২-২৩ মাস।

প্রস্তুত প্রণালীঃ
১। বাদাম অল্প আঁচে চুলায় ভেজে নিন এবং গুড়া করুন।

২। একটি পাত্রে চাল, ডাল ও বাদামের গুড়া একসাথে নিন। এত গাজরের পাউডার যোগ করুন।

৩। এবার এতে তেল এবং গুড় যোগ করুন, পর্যাপ্ত পরিমাণে ফুটানো পানি দিয়ে সবগুলো উপকরণ একসাথে মেশান এবং অল্প আঁচে চুলায় ৩-৫ মিনিট রান্না করুন। সবগুলো উপকরণ ভালোমত মিশে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে ফেলুন।

৪। একটি পাকা কলা নরম করে চটকিয়ে নিন এবং রান্না করা মিশ্রণের সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে শিশুকে পরিবেশন করুন।

গাজরের পাউডার প্রস্তুত প্রণালী
১। গাজর ভালোমত ধুয়ে, ছিলে কুচি করে কেটে নিন।

২। গাজরের কুচিগুলোকে একটি পরিষ্কার সাদা রঙের সুতি কাপড়ে নিয়ে থলীর মত বেঁধে নিন।

৩। গাজরের থলিটিকে পর্যাপ্ত পরিমান গরম ফুটন্ত পানিতে ৩-৫ মিনিট ডুবিয়ে রেখে, উঠিয়ে নিতে হবে। কিছুক্ষণ পরে (১-২ মিনিট) একইভাবে আবারও ৩-৫ মিনিটের জন্য গরম পানিতে ডুবিয়ে রেখে উঠিয়ে নিতে হবে।

৪। এভাবে ২-৩ বার গরম পানিতে ডুবিয়ে রেখে গাজরের থলিটিকে ঠাণ্ডা পানির প্রবাহের নিচে (সম্ভব হলে বরফ পানিতে) রাখতে হবে যাতে গরম পানির ভাব চলে যায়।

৫। গাজরের কুচি ঠাণ্ডা হলে পানি থেকে উঠিয়ে নিতে হবে এবং ভালোমত পানি ঝরিয়ে নিতে হবে।

৬। পানি ঝারানো হলে গাজরের কুচিগুলোকে পরবর্তী ১-২ দিন কড়া রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।

৭। গাজরের কুচি শুকিয়ে মচমচে হলে গুড়া করে নিন।

৮। এভাবে প্রস্তুতকৃত গাজরের পাউডার একটি শুকনো, পরিষ্কার মুখবন্ধ পাত্রে সংরক্ষণ করুন এবং পুষ্টিগুড়া প্রস্তুতের সময় ব্যবহার করুন।

চালের গুড়া প্রস্তুত প্রণালী
১। চাল পরিষ্কার করে ধুয়ে ১০-১৫ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর ভালোমত পানি ঝরিয়ে নিন।

২। একটি পরিষ্কার সুতি কাপড়ে পানি ঝরানো চাল ভালোমত মুছে নিন এবং বাতাসে শুকিয়ে নিন।

৩। এক ঘণ্টা পরে শুকনো চাল গুড়া করে নিন।

৪। এবার গুড়া করা চাল অল্প আঁচে চুলায় ভেজে নিন, চালের গুড়া হালকা বাদামী হলে চুলা থেকে নামিয়ে ফেলুন।

৫। চালের গুড়া ঠাণ্ডা করে পরিষ্কার শুকনা মুখবন্ধ পাত্রে সংরক্ষণ করুন এবং পুষ্টিগুড়া তৈরির সময় ব্যবহার করুন।

ডালের গুড়া প্রস্তুত প্রনালীঃ
১। ডাল ভালোমত পরিষ্কার করে নিন।

২। ডাল অল্প আঁচে চুলায় ভেজে নিন এবং হালকা বাদামী হলে চুলা থেকে নামিয়ে ফেলুন।

৩। একটি পরিষ্কার সুতি কাপড়ে ভাজা ডাল ভালোমত মুছে নিন। এরপর ভাজা ডাল গুড়া করে নিন।

৪। ডালের গুড়া ঠাণ্ডা করে পরিষ্কার শুকনা মুখবন্ধ পাত্রে সংরক্ষন করুন এবং পুষ্টিগুড়া তৈরির সময় ব্যবহার করুন।

মুরগীর মাংসের খিচুড়ি

বয়সসীমাঃ ৬-৮ মাস, ৯-১১ মাস, ১২-২৩ মাস

প্রস্তুত প্রণালী
১। মুরগীর মাংস ভালোমত পরিষ্কার করে, ধুয়ে, ছোট টুকরা করে কেটে নিতে হবে।

২। চাল এবং ডাল ভালোমত পরিষ্কার করে ধুয়ে ফুটানো পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। ১০ মিনিট পর ভালোভাবে পানি ঝরিয়ে নিন।

৩। সব শাক-সবজি ভালোমত ধুয়ে কেটে নিন। পেঁয়াজ কুচি করে নিন।

৪। একটি রান্নার পাত্রে তেল গরম করুন, তেল গরম হলে এতে পেঁয়াজ কুচি, আদা-রসুন বাটা, এবং হলুদের গুড়া দিয়ে কয়েক মিনিট রান্না করুন।

৫। পেঁয়াজ এবং মসলা সামান্য ভেজে এতে মাংসের টুকরাগুলো দিয়ে দিন। কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করুন। এবার এতে চাল-ডালের মিশ্রণ ঢেলে দিন। কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করুন। স্বাদ অনুযায়ী সামান্য লবণ যোগ করুন। আবার অল্প আঁচে কিছুক্ষন (১-২ মিনিট) নাড়াচাড়া করুন।

৬। চাল-ডাল সামান্য ভাজা হলে এতে প্রয়োজনমত পানি (সম্ভব হলে গরম পানি) যোগ করুন এবং রান্না হওয়ার জন্য পাত্রটি একটি পরিষ্কার ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন।

৭। চাল এবং ডাল অর্ধেক সিদ্ধ হয়ে এলে এতে সবজিগুলো ঢেলে দিন। ভালোমত নাড়াচাড়া করুন যাতে সবগুলো উপকরণ একসাথে মিশে যায়। পাত্রটি আবার ঢেকে দিন।

৮। সবগুলো উপকরণ ভালোমত সিদ্ধ হয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে ফেলুন। প্রয়োজনে খিচুড়ি চামচ দিয়ে সামান্য চটকিয়ে নরম করে নিন এবং শিশুকে পরিবেশন করুন।

ডিমের খিচুড়ি

বয়সসীমাঃ ৬-৮ মাস, ৯-১১ মাস, ১২-২৩ মাস।

প্রস্তুত প্রণালী
১। চাল এবং ডাল ভালোমত পরিষ্কার করে ধুয়ে ফুটানো পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। ১০ মিনিট পর ভালোমত পানি ঝরিয়ে নিন।

২। সব শাকসবজি ধুয়ে কেটে নিন এবং পেঁয়াজ ভালোভাবে টুকরা করে কেটে নিন।

৩। একটি রান্নার পাত্রে তেল গরম করুন। তেল গরম হলে এতে পেঁয়াজ কুচি, আদা রসুন বাটা দিয়ে ক্রমাগত নাড়াচাড়া করে কিছুক্ষণ ভাজুন।

৪। পেঁয়াজ এবং মসলা সামান্য ভেজে এতে চাল ডালের মিশ্রণ ঢেলে দিন। কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করুন। স্বাদ অনুযায়ী হলুদের গুড়া এবং সামান্য লবন যোগ করুন। আবার ও অল্প আঁচে কিছুক্ষণ (১-২ মিনিট) নাড়াচাড়া করুন।

৫। চাল-ডাল সামান্য ভাজা হলে এতে প্রয়োজনমত পানি (সম্ভব হলে গরম পানি) যোগ করুন এবং রান্না হওয়ার জন্য পাত্রটি একটি পরিষ্কার ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন।

৬। চাল এবং ডাল অর্ধেক সিদ্ধ হয়ে এলে সবজিগুলো সব ঢেলে দিন। ভালোমত নাড়াচাড়া করুন যাতে সবগুলো উপকরণ একসাথে মিশে যায়। পাত্রটি আবারও ঢেকে দিন।

৭। একটি ডিম ভালোমত ফেটে নিন। সবগুলো উপকরণ ভালোমত সিদ্ধ হয়ে এলে এতে ডিম ঢেলে নিন এবং ভালোমত নাড়তে থাকুন যাতে ডিম খিচুরির সাথে ভালোভাবে মিশে যায়। কিছুক্ষণ অল্প আঁচে রান্না করে চুলা থেকে নামিয়ে ফেলুন। প্রয়োজনে খিচুড়ি চামচ দিয়ে সামান্য চটকিয়ে নরম করে নিন এবং শিশুকে পরিবেশন করুন।

ডিমের সুজি

বয়সসীমাঃ ৬-৮ মাস, ৯-১১ মাস, ১২-২৩ মাস।

প্রস্তুত প্রণালী
১। একটি পাত্রে সুজি নিয়ে অল্প আঁচে হালকা ভেজে নিতে হবে। সুজি হালকা বাদামী রঙ হলে এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি যোগ করুন।

২।সব সবজি ভালোমত ধুয়ে কেটে নিন এবং সুজিতে ঢেলে দিন।

৩। সুজি সারাক্ষন হালকা ভাবে নাড়াচাড়া করতে হবে যাতে পাত্রের গায়ে লেগে না যায়।

৪। একটি ডিম ভালোমত ফেটে নিন। সুজি ভালোমত সিদ্ধ হয়ে গেলে এতে ডিম ঢেলে দিন। দ্রুত নাড়াচাড়া করতে থাকুন যাতে ডিম সুজির সাথে ভালোভাবে মিশে যায়। আবারও অল্প আঁচে কিছুক্ষন (২-৩ মিনিট) রান্না করুন।

৫। এবার এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে তেল ও গুড় দিয়ে দিন। ভালোমতো নাড়াচাড়া করুন যাতে সবগুলো উপকরন একসাথে মিশে যায়।

৬। সবগুলো উপকরণ ভালোমত মিশে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে ফেলুন।

সবজি খিচুড়ি

বয়সসীমাঃ ৬-৮ মাস, ৯-১১ মাস, ১২-২৩ মাস।

খাবার প্রস্তুতে প্রয়োজনীয় সময়ঃ ২৫ মিনিট

প্রস্তুত প্রণালী
১। চাল এবং ডাল ভালোমত পরিষ্কার করে ধুয়ে ফুটানো পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।। ১০ মিনিট পর ভালোমত পানি ঝরিয়ে নিন।

২। বাদাম হাল্কা ভেজে নিয়ে গুড়া করে নিন।

৩। সব শাকসবজি এবং পেঁয়াজ ভালোমত ধুয়ে কেটে নিন।

৪। একটি রান্নার পাত্রে তেল গরম করুন। তেল গরম হলে এতে পেঁয়াজ কুচি, আদা-রসুন বাটা দিন।

৫। পেঁয়াজ এবং মশলা সামান্য ভেজে এতে চাল ডালের মিশ্রণ ঢেলে দিন। কিছুক্ষন নাড়াচাড়া করুন। স্বাদ অনুযায়ী হলুদ গুড়া এবং সামান্য লবন যোগ করুন। আবার অল্প আঁচে কিছুক্ষন (১-২ মিনিট) নাড়াচাড়া করুন।

৬। চাল ডাল সামান্য ভাজা হলে এতে প্রয়োজনমত পানি (সম্ভব হলে গরম পানি) যোগ করুন। এবং রান্না হওয়ার জন্য পাত্রটি একটি পরিষ্কার ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন।

৭। চাল এবং ডাল অর্ধেক সিদ্ধ হয়ে এলে এতে সবজিগুলো সব ঢেলে দিন। ভালোমত নাড়াচাড়া করুন যাতে সবগুলো উপকরণ একসাথে মিশে যায়। পাত্রটি আবার ঢেকে দিন।

৮। সবগুলো উপকরণ ভালোমত সিদ্ধ হয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে ফেলুন। প্রয়োজনে খিচুড়ি চামচ দিয়ে সামান্য ডলে নরম করে নিন এবং শিশুকে পরিবেশন করুন।

যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
শিশুকে নতুন খাবার দেওয়ার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখুন, শরীরের কোথাও র‍্যাশ, বমি বা ঢেকুরের পরিমাণ বেশি হচ্ছে কি না। বাচ্চার কান্নার পরিমাণ হঠাৎ বেড়ে গেছে বা পেট ফুলেছে, প্রস্রাব-পায়খানায় পরিবর্তন অনুভব করলে সেই খাবার বন্ধ করতে হবে। অবস্থা বেগতিক মনে হলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

তথ্যসূত্রঃ

রেসিপি টি বাংলাদেশের জন্য পরিপূরক খাবার বিষয়ে ম্যানুয়াল উন্নয়ন গবেষণা থেকে তৈরি বুকলেট “৬-২৩ মাস বয়সী শিশুদের জন্য ঘরে তৈরি পরিপূরক খাদ্য প্রস্তুত প্রণালী” থেকে গ্রহন করা হয়েছে। গবেষণাটি বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত হয়েছে। গবেষণাটিতে টেকনিক্যাল সহায়তা প্রদান করেছে এফএও এবং আর্থিক সহায়তা করছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও ইউএসএআইডি।