নারীদের জীবনের একটি বড় অংশ হলো পিরিয়ড। প্রতি মাসের একটি নির্দিষ্ট সময়ে পিরিয়ড হয় বেশির ভাগ নারীর। অনেক সময় দেখা যায়, কোনো কারণে বা কারণ ছাড়াই পিরিয়ড বেশ কিছুদিন লেট হচ্ছে। এ সময়ে অনেকেই ভয় পেয়ে যায়। কেউবা আবার একে স্বাভাবিক বলে উড়িয়ে দেয়। পিরিয়ড লেট হওয়ার কারণগুলো আসলে কী?

গর্ভধারণ না হলে বিভিন্ন কারণে লেট হতে পারে পিরিয়ড। মূলত এর পেছনে একটা বড় ভূমিকা পালন করে হরমোনসংক্রান্ত পরিবর্তন। পিরিয়ডের পুরো প্রক্রিয়াটা নিয়ন্ত্রণ করে কয়েকটি হরমোন। ফলে হরমোনের মাত্রায় পরিবর্তন এলে পিরিয়ড লেট হতে পারে। পিরিয়ড পেছানোর কারণ হিসেবে থাকতে পারে জীবনযাত্রায় বড় কোনো পরিবর্তন, যেমন :

 পরিবেশগত পরিবর্তন
 ওজন হঠাৎ করে কমা বা বেড়ে যাওয়া
 ডায়েট
 ভারী ব্যায়াম বা শরীরচর্চা, যেমন দৌড়ানো বা নাচের চর্চা
 ভ্রমণ করে নতুন কোথাও যাওয়া বা নতুন কোনো জায়গায় বসবাস করতে আসা
 মানসিক কোনো বড় পরিবর্তন, কোনো ধরনের মনস্তাত্ত্বিক ধাক্কা

অনেক সময় দেখা যায়, বার্থ কন্ট্রোল পিল অথবা অন্য কোনো ইমার্জেন্সি পিল গ্রহণের কারণেও পিরিয়ড লেট হতে পারে। এর মানে কি পিরিয়ড লেট হওয়ার পেছনে কোনো অসুস্থতা নেই? অবশ্যই আছে। পিরিয়ড লেট হওয়ার পেছনে যেসব রোগের কারণ থাকতে পারে সেগুলো হলো-
 ওভারিতে প্রভাব ফেলে এমন কোনো যৌনরোগ
 ওভারিতে সিস্ট, ইউটেরাসে টিউমার থাকলে পিরিয়ড লেট হতে পারে বা খুব বেশি রক্তক্ষরণ হতে পারে
 এ ছাড়া শরীরের ওপরে বড় মাত্রায় চাপ ফেলে এমন অসুস্থতার কারণে পিরিয়ড লেট হতে পারে
 কোনো রোগের কারণে হরমোন লেভেল অস্বাভাবিক হয়ে পড়লে তার জন্য পিরিয়ড লেট হতে পারে।

কোনো অসুস্থতার কারণে যদি তোমার স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে থাকে এবং এ কারণে পিরিয়ড লেট হয়, তবে রোগ সারিয়ে তোলার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ছাড়া খাওয়া দাওয়া করতে হবে নিয়ম মতো। ধূমপান, ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহলের ব্যাপারে থাকতে হবে সাবধান। পরিবেশগত বা জীবনযাত্রার কোনো পরিবর্তনের কারণে পিরিয়ড লেট হলে সাধারণত চিন্তার কিছু থাকে না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তার দেখিয়ে নিশ্চিত হয়ে নেওয়া ভালো। তোমার যদি তলপেটে ব্যথা হয়ে থাকে, পরপর দুই মাস পিরিয়ড না হওয়া বা বার্থ কন্ট্রোল পিল খাবার পরেও পরপর দুই মাস পিরিয়ড না হয়, এসব ক্ষেত্রে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়াই ভালো। মনে রাখবে, লজ্জা নয়, সচেতনতা জরুরি।

যে খাবারগুলো একান্ত জরুরি :
পিরিয়ডের সময় প্রত্যেক মেয়েরই উচিত নিজের শরীরের প্রতি পূর্ণ নজর দেওয়া। এ সময়ে শরীর ঠিক রাখার জন্য খাদ্যের প্রতি হতে হবে সচেতন। নয়তো দৈনন্দিন জীবনে এর খারাপ প্রভাব পড়বে।

সবুজ শাক-সবজি
সবুজ শাকসবজি পিরিয়ডের সময়ে শরীরকে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা প্রদান করে। এগুলো শুধু আয়রন এবং ভিটামিন বি-সমৃদ্ধ তা নয়, এতে রয়েছে উচ্চ ফাইবার। এই ফাইবার তোমার হজম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে, যা পিরিয়ডকে সহনীয় করতে খুবই প্রয়োজন।

বাদাম :
পিরিয়ডের সময় নাশতায় অবশ্যই বাদাম রাখা উচিত। এটি শরীরের জন্য খুব উপকারী খাবার। পিরিয়ডের সময় বেশি করে করে ওমেগা ফ্যাট-৩ যুক্ত খাবার খেতে হবে। ওমেগা ফ্যাট-৩ খাবারের উৎস হিসেবে বাদাম বেশ জনপ্রিয়।

তাজা ফলমূল :
পিরিয়ড-সম্পর্কিত হজমের সমস্যা সমাধানে তাজা ফলমূল বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তোমার পছন্দসই নানা ধরনের ফলমূল নিয়মিত খাবার টেবিলে রাখো।

লাল মাংস :
লাল মাংসকে আমরা অনেকেই ক্ষতিকর বলেই জানি। কিন্তু পিরিয়ডের সময় লাল মাংস তোমার শরীরের জন্য বেশ প্রয়োজনীয়। লাল মাংস তোমার শরীরে প্রয়োজনীয় আয়রন জোগাবে, যা প্রতি মাসে তোমার শরীর থেকে প্রচুর ক্ষরণ হয়। আয়রনযুক্ত খাবার তোমাকে অনেক কঠিন রোগ থেকে রক্ষা করবে। যদি মাংস তোমার পছন্দ না হয়, তবে তোমাকে অবশ্যই অন্য আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।

প্রত্যেক নারীই আলাদা :
মনে রাখতে হবে, প্রত্যেক নারীই আলাদা। তাই পিরিয়ডে তাদের সমস্যাগুলোও আলাদা হতে পারে। যেমন লবণ গ্রহণ কমানো একেকজনের ওপর একেক রকম প্রভাব ফেলতে পারে। আবার মুড পরিবর্তন, পিরিয়ডের সময় ব্যথা এবং অন্যান্য বিষয়ের ওপর ভিত্তি করেও খাদ্য গ্রহণ পরিবর্তিত হতে পারে।