বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রীদেবীর মৃত্যু হয় গতকাল। আকস্মিক ভাবেই মৃত্যু হয় এই গুনী শিল্পীর। তার এই অকাল মৃত্যুতে বিস্ময় তৈরি হয়েছে পাঠক ও দর্শক মহলে। কারন হিসেবে জানা যায় কখনোই শ্রীদেবীর হার্টের সমস্যা দেখা যায়নি।

আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষ হঠাৎ করে মারা গেলে, তাকে সাধারণত আকস্মিক মৃত্যুই বলা হয়। সাডেন আনএক্সপ্লেনড ডেথ ইন অ্যাডাল্টস। কেউ কেউ আবার একে সাডেন অ্যডাল্ট ডেথ সিনড্রোমবলে থাকেন।

ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের একটি সমীক্ষা অনুসারে, ইংল্যান্ডে প্রতি বছর প্রায় ৩৫০০ জন এই আকস্মিক মৃত্যুর শিকার হন, যারা আপাতদৃষ্টিতে স্বাস্থ্যবান। পোস্টমর্টেমের পরেও এদের মধ্যে ৪ শতাংশের মৃত্যুর কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে এদের অনেকেরই আপাত স্বাস্থ্যবান অবস্থায় গভীর হার্টের অসুখের সন্ধান পাওয়া গেছে।

সাডেন আনএক্সপ্লেন্ড ডেথ ইন অ্যডাল্টস এর সংজ্ঞা-

এটি এমন এক ধরনের আকস্মিক মৃত্যু, যেখানে রোগীর উপসর্গ শুরু থেকে মৃত্যু এত দ্রুততায় ঘটে যায় যে, চিকিৎসকের পক্ষেও রোগীর মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট করে বলা সম্ভব হয় না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এই সময়সীমা ২৪ ঘণ্টা ধার্য করলেও বেশির ভাগ চিকিৎসক এবং প্যাথলজিস্ট এই সময়সীমা কমানোর পক্ষে। কেউ কেউ একে এক ঘণ্টার মধ্যে সীমিত রাখতে চান।

এ ধরনের রোগীদের মধ্যে অনেকেরই এর আগে কিছু কিছু উপসর্গ দেখা দেয় যেমন বুক ধড়ফড়, হৃদপিণ্ডের ছন্দের অনিয়মিততা, হাঁফ ধরা, ক্লান্তি, বুকে ব্যথা।
সাধারণত এগুলিকে তারা গুরুত্ব দেন না। এদের অনেকের আকস্মিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে হার্টের কিছু রোগ যেমন— হার্টের ধমনীর অসুখ, হার্টের পেশীর অসুখ, হার্টের পেশীর প্রদাহ এইগুলো দায়ী থাকে। পোস্টমর্টেমে এগুলি ধরা পড়ে।

হার্টের অসুখ ছাড়াও স্নায়ুরোগ, জটিল এপিলেপ্সি, মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ, টিউমার জনিত কারণে আকস্মিক মৃত্যু ঘটতে পারে। খেলোয়াড় এবং অ্যাথলিটদের ক্ষেত্রেও এ ধরনের মৃত্যু দেখা যায়। আপাত-সুস্থ খেলোয়াড়দের মধ্যে ম্যরাথন দৌড় দেওয়ার পরে কিংবা বাইচ দৌড়ের পরে আকস্মিক মৃত্যুর বহু ঘটনা রয়েছে।

কিছু ওষুধ থেকেও আকস্মিক মৃত্যু ঘটতে পারে। যেমন বোটক্স। এই ওষুধ মুখের মাংসপেশীর কোঁচকানো ভাব দূর করতে ব্যবহার করা হয়। বোটক্স ব্যবহার করলে বিশেষ করে ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সের নারীদের আকস্মিক মৃত্যু হওয়ার রিপোর্ট রয়েছে। মানসিক অবসাদের কিছু ওষুধ যেমন- সিটালোপ্রাম বেশি মাত্রায় খেলে হার্টের ব্লক ঘটতে পারে।

তবে, এতকিছুর পরেও এ ধরনের বহু মৃত্যুর ক্ষেত্রে সঠিক কারণ জানা যায় না। এ ধরনের মৃত্যু নিয়ে আরো বিস্তারিত গবেষণার জন্য ওই সমস্ত পরিবারের জীবিত সদস্যদের নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিশেষ প্রয়োজন বলে বিশিষ্ট চিকিৎসক-গবেষকরা মত প্রকাশ করেছেন।